ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনীঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী

বিদ্যা হলো সব থেকে বড় সম্পদ

বিদ্যা শুধু নিজেদের উপকার করে না

বরং

প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে গোটা সমাজের কল্যাণ সাধন করে

ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন উপলক্ষে ওনাকে প্রণাম এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে তারই জীবনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী


জন্ম ও বংশ পরিচয়:

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম ১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে। দরিদ্র পরিবারের জন্মগ্রহণ করলে নিজের শিক্ষা, সংস্কার, আন্তরিকতা, দয়ালুতা, নিষ্ঠার জন্য তিনি সকলের কাছে জনপ্রিয়। পিতার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় মাতা ছিলেন ভগবতী দেবী।

শিক্ষাজীবন:

ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর চার বছর নয় মাস বয়সে একটি গ্রামের স্কুলের শিক্ষা শুরু করেন। সেখানে তিনি বাংলা পড়তে এবং লিখতে শিখেছিলেন। তার বাবা ছিলেন দরিদ্র পুরোহিত যার কারণে ইশ্বরচন্দ্রের পড়াশোনায় চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। যাইহোক তিনি ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র এবং বুদ্ধিমত্তা কঠোর পরিশ্রম দিয়ে তার শিক্ষকদের প্রভাবিত করতে সক্ষম হন। গ্রামের পাঠশালা শিক্ষা জীবন শেষ করার পর ১৮২৮ সালে পিতার সঙ্গে কলকাতায় আছেন উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে। বড়বাজারের এলাকায় একটি বাড়িতে আশ্রয় লাভ করেন, ১৮২৯ সালে কলকাতা সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণ এর তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৮৩০ সালে ইংরেজি শ্রেণীতে ভর্তি হন দীর্ঘ 12 বছর এই কলেজে তিনি ব্যাকরণ, ইংরেজি, কাব্য অলংকার, বেদান্ত, ন্যায় প্রভৃতি শ্রেণীতে দক্ষতার সাথে উত্তীর্ণ হন। এই সময় তিনি সংস্কৃতি বিষয়ে ১০০ টাকা পুরস্কার লাভ করেন। এবং পন্ডিত জয়গোপাল তর্করত্ন এর সান্নিধ্য লাভ করেন। এরপর 1847 সালের কলেজে অধ্যাপকগণ তাকে বিদ্যাসাগর উপাধি প্রদান করেন। এরপর থেকেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নামে খ্যাতি লাভ করেন।

কর্মজীবন:

১৮৪১ সালে ২৯ শে ডিসেম্বর ৫০ টাকা মাসিক বেতনে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান পন্ডিত পদ অলংকৃত করেন। ১৮৪৬ সালে তিনি সংস্কৃত কলেজের সহকারী সম্পাদকের পদ গ্রহণ করেন। ১৮৪৯ সালের মাসিক ৮০ টাকা বেতনের ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। ১৮৫০ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ত্যাগ করেন। এছাড়া কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট, ওয়ার্ড ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অধিষ্ঠান করেছেন।

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কার:

যুগে যুগে যখনই সমাজে দেখা দিয়েছে সামাজিক সংকট  তখনই দেখা দিয়েছে ভগবানের রূপ। তেমনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাত ধরে উঠে এসেছে তৎকালীন সমাজে পুরুষ শাসিত নারীর ই অত্যাচারের মুক্তি। কারণ তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে নারী শিক্ষা প্রগতি না করতে পারলে নারী সমাজের অগ্রগতি সম্ভব না। তাই তিনি ১৮৫৭- ১৮৫৮ বর্ষে চারটি জেলায় মোট ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এছাড়া বাংলা তথা মাতৃভাষার অগ্রগতির জন্য তারই তত্ত্বাবধানে স্কুল স্থাপন করেন। বাংলা ভাষা হাতে খড়ির জন্য তিনি বর্ণপরিচয় প্রথম খন্ড দ্বিতীয় রচনা করেন। ১৮৫৬ সালের ২৬ শে জুলাই বিবাহ আইন পাস করিয়ে নারীদের দেন সমাজমুক্তির স্বাদ।

সাহিত্যচর্চা:

১৮৪৭ সালের বেতাল পঞ্চবিংশতী হিন্দি থেকে বাংলা অনুবাদ করার মাধ্যমে খ্যাতি অর্জন করেন। এরপর থেকে তিনি_ শকুন্তলা, সীতার বনবাস, জীবনচরিত, নীতিবোধ। কথামালা ইংরেজি থেকে বাংলা রচনা করেন। শিক্ষামূলক গ্রন্থ হিসেবে ১৮৫৫ সালের বর্ণ পরিচয় প্রথম ও দ্বিতীয় খন্ড রচনা করেন। ১৮৫৩ সালের ব্যাকরণ কৌমদী ও সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা রচনা করেন। এছাড়া তার সম্প্রদায় কিছু অন্য গ্রন্থ গুলি হল_ অন্নদামঙ্গল, রঘুবংশম, অভিজ্ঞান শকুন্তলা প্রকাশিত হয়।

পুরস্কার ও সম্মান স্বীকৃতি:

বাঙালি সমাজ তথা সমগ্র ভারতবাসীর কাছে বিদ্যাসাগর মহাশয় এক প্রাতঃ স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। ১৮৩৯ সালে ২২ এপ্রিল হিন্দুল  কমিটির পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হওয়ার কমিটির কাছ থেকে বিদ্যাসাগর উপাধিটি পান।

শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বিদ্যাসাগরের অবদান:

বিধবা বিবাহ:

বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, এবং বিধবা বিবাহ আন্দোলনে নামেন। ১৮৫৫ সালের বিধবা বিবাহ বিবাহ আইন প্রচলিত কিনা সে সম্পর্কে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। হাজার ব্যক্তির সাক্ষ্য নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে আবেদন পাঠান। তিনি সফল ও হন। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে সরকার আইন করে মেয়েদের বিবাহ কমপক্ষে ১০ বছর ধার্য করেন।

বহুবিবাহ:

সে যুগে হিন্দু সমাজের পুরুষের বহুবিবাহ অধিকার ছিল। ফলে কুলিন সমাজে এই প্রথার প্রচলন ছিল। বিদ্যাসাগর এই প্রথায় বিরুদ্ধে সরব হন। এবং জনমত গঠন করেন, ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে বহু বিবাহ বিবাহ হওয়া উচিত কিনা এত ‘ দ্বিষয়ক বিচার’ নামক একটি পুস্তিকা রচনা করেন। এছাড়া তিনি বেসরকারি সাহায্য নেন। কিন্তু বহুবিবাহ প্রসঙ্গে তিনি বিশেষ সাফল্য পাননি

বিদ্যালয় স্থাপন:

বিদ্যাসাগর শিক্ষা ও বিদ্যালয় স্থাপনের উপর জোর দিয়েছিলেন। বিভিন্ন জেলায় 20 টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যার বেশিরভাগই নিজের খরচে চলত। এছাড়া ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।

জীবনাবাসন:

বাংলা নবজাগরণের অগ্রদূত  বিদ্যাসাগর মহাশয় লিভার ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে। ১৮৯১ সালের ২৯ শে জুলাই পরলোক গমন করে।

আরও তথ্যের জন্য আমাদের সাথে থাকুন, mystate.co.in থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

 


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content