কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিচয়
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
১৮৬১ সাল বাঙালির ইতিহাসে নানা কারণে বিখ্যাত। ১৮৬১ সালে ১১ ই জুলাই জন্মগ্রহণ করেন পাশ্চাত্য ধরার প্রথম বাঙালি নারী চিকিৎসক কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। তার বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের চাঁদসিতে। তার বাবা ছিলেন ব্রজকিশোর বসু। তার বাবা ভাগলপুর স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। ব্রজকিশোর বসু ও অভয়চরণ মল্লিক এর সাথে ভাগলপুর মহিলাদের আন্দোলন মহিলাদের অধিকারে আন্দোলন করেছিলেন। এবং মহিলাদের সংগঠনে এবং মহিলা সমিতি স্থাপন করেছিলেন।
শিক্ষা ও কর্মজীবন:
নারী শিক্ষা আন্দোলনের ফলে ১৮৭৭ সালে কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয় এন্ট্রাস পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন দুজন ছাত্রী। সরলা দাস ও কাদম্বিনী বসু। সরলা দাস পরীক্ষা দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত কাদম্বিনী পরীক্ষায় বসেন এবং দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রাস পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৮৩৩ সালে কলকাতার বেথুন কলেজের ছাত্রী হিসেবে কাদম্বিনী বসু পরীক্ষায় অংশ নেন এবং কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলার প্রথম বাংলার প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
শিক্ষাগত দিক:
মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হিসেবে সে সময় তিনি মাসিক কুড়ি টাকা বৃত্তি পেয়েছিলেন। ১৮৬৬ সালে মেডিকেলের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন এবং লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলেন। কিন্তু ব্যবহারিক একটি অপরিহার্য পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। তারপর দীর্ঘদিন ধরে অধ্যায়ন করার পর নিষ্ঠার বিবেচনা করার পর ১৮৬৬ সালে গ্র্যাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ(জিবি এ ম সি) ডিগ্রী দেন। এটি পাওয়ার পর তিনিই প্রথম ভারতীয় ডিগ্রী প্রাপ্ত নারী চিকিৎসক। বাংলার প্রথম নারী চিকিৎসা হিসাবে ১৮৮৮ সালে মাসিক ৩০০ টাকা বেতন হিসেবে লেডি ডাফরিন কলেজে যোগ দেন। ডাক্তারি পেশায় নির্দিষ্ট সময় না থাকেনা বলে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীকে রোগীদের সাহায্যার্থে রাত দিনের যেকোনো সময়ের রোগীদের বাড়িতে যেতে হত। তৎকালীন সমাজ সেটা ভালো চোখে দেখেনি এবং কাদম্বিনী নামের নোংরা কথা রটিয়ে দেয়।
১৮৯১ সালের সনাতনপন্থী সাময়িকী বঙ্গবাসী তাকে পরোক্ষভাবে বেশ্যা বলে অভিহিত করেন। কাদম্বিনী গাঙ্গুলি বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক মহেশপাল এর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। মহেশ পাল এর ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা জরিমানা হয়। কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর মামলায় জয়ী হওয়ার পর। 1893 সালের চিকিৎসক শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা জন্য এডিনবার্গে যান। নারী শিক্ষার অনুৎসাহী সমর্থক ব্রজকিশোর বসু সানন্দে কন্যার জন্য সিদ্ধান্তের স্বাগত জানান।
বিবাহিত জীবন:
মেডিকেল কলেজের স্বনাম খ্যাত শিক্ষক বিপত্নীক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী কে কাদম্বিনী বিয়ে করেন। কাদম্বিনী বয়স ছিল ২১ বছর আর দ্বারকানাথের বয়স ছিল ৩৯ বছর দাম্পত্য জীবনে সুখী হয়েছিলেন। বিয়ের পর স্বামীর অনুপ্রেরণায় প্রবন উৎসাহে পড়ালেখা শুরু করেন। কলকাতার রক্ষণশীল মানুষেরা ভালো চোখে দেখেননি এবং নানা রকম কুৎসা রটায়। রাত জেগে পড়াশোনা করে এবং সংসারের কাজ অব্যাহত করে স্বামীর সহযোগিতায় পড়াশোনা চালিয়ে যান কাদম্বিনী দেবী।
প্রতিভা:
ডাক্তার ছাড়া তিনি ছিলেন সমাজসেবী এবং দেশপ্রেমিক। স্বর্ণকুমারী দেবীর সঙ্গে ১৮৯৯ সালে তিনি ভারতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে বঙ্গদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯০৬ সালের কলকাতার নারী সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা। ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে বোম্বে শহরে পঞ্চম অধিবেশনের প্রথম ছয় জন নারী প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মধ্যে একজন ছিলেন কাদম্বিনী দেবী। পরের বছর ষষ্ঠ অধিবেশনে কলকাতার বক্তব্য রাখেন কাদম্বিনী। কাদম্বিনী ছিলেন কংগ্রেস অধিবেশনের প্রথম মহিলা বক্তা।
অবদান:
কাদম্বিনী গান্ধীজীর সহকর্মী হেনরি পোলক প্রতিষ্ঠিত ট্রান্সসভাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি। এবং ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের কলকাতায় অনুষ্ঠিত মহিলা সম্মেলনের সদস্য ছিলেন। ১৯১৪ সালের কলকাতা সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের অধিবেশনের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। চা শ্রমিকের শোষণের বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তিনি তার স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেন। যিনি আসামে চা বাগানে শ্রমিকদের কাজে লাগানোর পদ্ধতি নিন্দা করেছিলেন। কবি কামিনী রায়ের সাথে কাদম্বিনী দেবী। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের এবং বিহার ও ওড়িষ্যা নারী শ্রমিকদের অবস্থা তদন্তের জন্য সরকার দ্বারা নিযুক্ত হয়েছিলেন।
মূল্যায়ন:
কাদম্বিনী গাঙ্গুলির প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তী সময়ে অনেক মেয়ে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা পড়ালেখা করেন। তারা সকল চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠা করেছেন।
দেহবসান: কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ১৯২৩ সালের দেসরা অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন
আরো জানতে ভিজিট করুন: mystate.co.in
ধন্যবাদ।
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.