অনুরূপা দেবীর জীবনীঅনুরূপা দেবীর জীবনী

অনুরুপা দেবীর জীবনী


আপনি সন্ন্যাসী তুমি সর্ব্বত্যাগী ত্যাগি শিব, ভোলা ব্যোমকেশ

তাই নিজেও ভক্ত পেলে তারে সন্ন্যাসী সাজাও মহেশ।

আপনি শ্মশানবাসী অঙ্গে মাখ ছাই, ভিক্ষাপাত্র সার,-

শ্মশান বন্নির দাহ বক্ষে দাও তাই, ভক্তে আপনার।

উন্মাদ তান্ডব খেলা তব, প্রলয়ের গরজন গান-

তোমার আনন্দ গীত তাই ভকতের রোদনের  তান।

কালকুটের কন্ঠে ভরা তবু মৃত্যু জয়ী। তুমি মৃত্যুঞ্জয়।

অসীম দুঃখের বিষে জর্জরিত  নর, তবু বেঁচে রয়।

 

ব্রিটিশ ভারতে একজন প্রভাবশালির জনপ্রিয় বাঙালি নারী ও উপন্যাসিক। সেই সঙ্গে তিনি ছিলেন সেই সময়কার এক বিশিষ্ট ছোট গল্পকার, কবি এবং সেই সঙ্গে সমাজ সংস্কারকও। প্রথম প্রকাশিত গল্পের জন্য তিনি কুন্তলীন পুরস্কার লাভ করে  তিনি সাহিত্যের জগতের প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রথম  নারী কথা সাহিত্যিকেরা উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন অনুরূপা দেবীর ছিলেন তাদেরই মধ্যে অন্যতম।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

১৮৮২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কলকাতা শ্যামবাজার অঞ্চলে মাতুলালয়ে অনুরূপা দেবীর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা নাম ছিল  মুকুন্দদেব মুখোপাধ্যায় তিনি ছিলেন একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও লেখক। এবং মায়ের নাম ছিল ধরা সুন্দরী দেবী সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কার ভূদেব মুখোপাধ্যায় ছিলেন অনুরুপা দেবীর ঠাকুরদা এবং বঙ্গীয় নাট্যশালার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তার দাদা মশাই। অনুরূপা দেবীর দিদি ছিলেন সুরূপা দেবী (১৮৭৯-১৯২২) ছিলেন সেই সময়কার বিশিষ্ট উপন্যাসিক ছোটগল্পকার এবং যিনি ইন্দিরা দেবীর ছদ্মনামে সাহিত্য রচনা করতেন।

শিক্ষালাভ: 

শৈশবের শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনুরুপা দেবী একটু দেরিতে লেখাপড়া শুরু করেছিলেন। রোগ শয্যায় শুয়ে শুয়েই তিনি দিদি সুরূপা দেবীর কন্ঠে কৃত্তিবাসী রামায়ণ ও কাশীদাসী মহাভারতের আবৃত্তি শুনতেন। এছাড়া তাদের পারিবারিক রীতি অনুযায়ী দুই বোনকে প্রতিদিন ঠাকুরদার কাছে বসে রামায়ণ ও মহাভারতের একটি করে অধ্যায়ন শ্রবণ করতে হতো তাই অনুরূপ দেবী সহজেই বিষয়গুলি মনের মধ্যে গেঁথে নিতে পারতেন এবং এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন।

“সেই সময় আমি নিরক্ষর হলেও অশিক্ষিত ছিলাম না কারণ আমি রামায়ণ ও মহাভারতের অধিকাংশ গল্পই মুখস্ত করে ফেলেছিলাম তখন আমার বয়স ছিল সাত বছর।”

তার দিদি ঠাকুরদার থেকে শোনা সংস্কৃত কবিতা অবলম্বনে কবিতা লেখা অভ্যাস করতেন। এই ভাবেই তারা দুই বোনেই শৈশব থেকে ঠাকুরদা ও বাবার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। এবং সেই সময় থেকেই শিক্ষা গ্রহণ ও জ্ঞানার্জনের বিষয়ে অনুরূপা দেবীর একটি অনুরাগ ছিল। তিনি বিভিন্ন পাশ্চাত্য পণ্ডিতের বহু গ্রন্থ পাঠ করেছিলেন বলে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান দর্শন সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।

সমাজ সংস্কারক:

সাহিত্য রচনার পাশাপাশি অনুরূপা দেবীর সংস্কার মূলক  কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কাশী ও কলকাতায় তিনি বেশ কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এবং একাধিক নারী কল্যাণ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯৩০ সালে অনুরূপা দেবী মহিলা সমবায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের বাংলা নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম পুরোধাব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি।

বিবাহিত জীবন: 

মাত্র দশ বছর বয়সে উত্তরপাড়া নিবাসী আইনজীবী শিখরনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে অনুরূপা পরিণয় সূত্রে  আবদ্ধ হন। আশাপূর্ণা দেবীর বিবাহ জীবন বিহারের মুজফ্‌ফরপুরে।

সাহিত্যকর্ম:

অনুরূপা দেবী রচিত উপন্যাস গুলি হল-মন্ত্র শক্তি, মা, মহানিশা, পথের সাথী, বাগদত্তা নাটকের রূপান্তরিত হয়েছিলন। তিনি ৩৩ টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন জীবনের স্মৃতি লেখা তার অসমাপ্ত রচনা

উপন্যাস:

পোষ্যপুত্র (১৯১১), মহানিশা(১৯১৯), বাগদত্তা (১৯১৪), মা (১৯২০), মন্ত্র শক্তি (১৯১৫)

অন্যান্য:

সাহিত্য নারী, বিচারপতি, জীবনের স্মৃতি লেখা। সোনার খনি (১৯২২), রামগড় (১৯১৮), রাঙাশাখা (১৯১৮)

উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ভারতীয় মেয়েরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং সমাজ তাদের মূলত গৃহকর্মের মধ্যে সীমায়িত রাখায় তারা প্রধানত অশিক্ষিত থেকে যেত। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে মেয়েদের শিক্ষা লাভ করাকে অপরাধ জ্ঞান বলে মনে করা হত। পুরুষের সঙ্গে তাদের সমান অধিকার ছিল না। এই ঘরোতর লিঙ্গবৈষম্যের প্রেক্ষিতে অনরূপা দেবী পুরুষতন্ত্রের শৃংখল ভেঙে নিজেকে এক বিশিষ্ট উপন্যাসিক ছোট গল্পকার ও কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

শৈশবের দিদি স্বরূপা দেবী তাকে রঙিন কাগজে কবিতার আকারে চিঠি লিখে পাঠাতেন। সেই চিঠি পড়ে অনুরূপা দেবী কি উত্তর দেবেন তা ভেবে  বিমূঢ় হয়ে যান। তারপর ঠাকুরদার পরামর্শক্রমে কবিতার ভাষাতেই উত্তর লিখে পাঠান। সেই উত্তরটি ছিল:

পাইয়া তোমার পত্র, পুলকিত হল গাত্র আস্তেব্যস্তে

খুলিলাম পড়িবার  তরে।
পুঁথি গন্ধ পাইলাম, কারুকার্যে হেরিলাম পুলক জাগিল অন্তরে।

পুরস্কার ও সম্মাননা: 

প্রথম প্রকাশিত গল্পের জন্য কুন্তলীন পুরস্কার লাভ করেন।

শ্রীভারতধর্ম মহামন্ডল থেকে ধর্মচন্দ্রিকা  উপাধি লাভ করেন।(১৯১৯)

শ্রী শ্রী বিশ্বমানব মহামন্ডল থেকে ‘ ভারতী’ উপাধি লাভ করেন।(১৯২৩)

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ‘ জগওরিনী স্বর্ণপদক লাভ করেন।

ভুবনমোহিনী দাসী ‘স্বর্ণপদক’ লাভ করেন (১৯১৪) সালে

মহাপ্রয়াণ: 

অনুরুপা দেবী উনিশে এপ্রিল ১৯৫৮  সালে মারা যান।

ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মেয়েদের যেভাবে অনুরূপা দেবীর শিক্ষিত করে তুলেছেন। লেখার এর মধ্য দিয়ে এক অসাধারণ প্রতিভা আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। 

তাই তিনি আজও আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন বেঁচে থাকবেন আজীবন।

 

 

 


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content