Atul prasad Senঅতুল প্রসাদ সেন

অতুলপ্রসাদ সেনের জীবনী

Atul prasad Sen Biography 


বাংলা সংগীত জগতে অতুলপ্রসাদ এক বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী। গায়ক ও গীতিকার রূপে ও তাঁর খ্যাতি ছিল। তার রচিত গানগুলি মূলত দেশ প্রেম ও ভক্তি প্রেম। তার জীবনের দুঃখ যন্ত্রণা গুলি তার গানের ভাষায় বর্ণনা করেছেন। আজকে তাই জীবনই আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

বল, বল সবে, শত বীণা-বেণু-রবে,

ভারত আবার জগত-সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে কুড়ি অক্টোবর বাংলাদেশের ঢাকা শহরে অতুলপ্রসাদ সেন জন্মগ্রহণ করেন। আর পিতার নাম ছিল রামপ্রসাদ সেন। অতুলপ্রসাদ সেনের আদি নিবাস ছিল ফরিদপুরের মগরায়। বাল্য বয়সে অতুলপ্রসাদ শ্রেণীর বিদ্রোহীন হওয়ায় মাতামহ কালীনারায়ণ গুপ্তের কাছে স্নেহে যত্নে আদরে পালিত হয় অতুলপ্রসাদ সেন। ভগবতভক্ত কালীনারায়ণ ভক্তিগীতি রচনা করে সুখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি নিজেও ছিলেন একজন সুকণ্ঠ গায়ক।

শিক্ষাজীবন:

অতুলপ্রসাদ সেন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এবং পরে ইংল্যান্ডে গিয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। এবং সেখানে গিয়ে তিনি ব্যারিস্টার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

কর্মজীবন: 

১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে থেকে ফিরে এসে তিনি কিছুকাল কলকাতায় থাকেন। পরে রংপুরে আইন ব্যবসা শুরু করেন। যৌবনে তিনি  লক্ষ্মেীবাসী হন এবং সেখানেই তিনি আইন ব্যবসায় প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। এবং আইনজীবী রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা করেন। পেশাগত সাফল্য লাভের সুযোগে অতুলপ্রসাদ সেন লক্ষ্মেী নগরে সংস্কৃতি ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। এবং সমাজে নানাভাবে উপকার সাধন করেন। অতুলপ্রসাদ সেনের গৃহই হয়ে উঠেছিল নগরীর সারস্বত মন্ডলীর মিলন কেন্দ্র। অতুলপ্রসাদ সেন জীবনের এর বেশিরভাগ অর্থই জনসাধারণের সেবার কাজে নিযুক্ত করতেন। পরবর্তীকালে নিজের বাসভবনটিও সমাজসেবী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাতা দান করেন। জীবিত কালেই তিনি এই রূপ খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং নগরবাসী প্রতিভা সশ্রদ্ধা স্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

সাহিত্যিক কাজকর্ম: 

১৯২২ সালে বাংলার বাইরে বাঙালি সাহিত্যিক দের প্রথম সম্মেলন। যা বর্তমান নিয়ে নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন নামে পরিচিত। অতুলপ্রসাদ সেন রাধা প্রমূখ বিশিষ্ট বাংলার বাইরে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বেনারসে আয়োজিত হয়েছিল। কমল মুখার্জী, কেদারনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহেন্দ্রচন্দ্র রায়ের যার সভাপতিত্ব করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। অতুলপ্রসাদ সেন বাঙ্গালীদের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সংগঠন অন্যের বাংলা ম্যাগাজিন উত্তরা সূচনা সম্পাদনা করেন। পরে তিনি কানপুর ও গোরখপুর সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন।

বেঙ্গলি ক্লাব অব লখনউ:

১৯০৩ সাল থেকে অখিল প্রসাদ সেন লখনউ বেঙ্গলি ক্লাবের দায়িত্ব পালন করেন। যা অতুল কৃষ্ণ সিংহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯২৯ সালে তিনি সভাপতি হিসেবে বেঙ্গলি ক্লাব অফ মেনস অ্যাসোসিয়েশন লখনউ নামে এই এক কিভূত করার ধারণার সূচনা করেন। এবং এই ভাবেই বেঙ্গলি ক্লাব অফ  ইয়াং মেনস অ্যাসোসিয়েশন নামে পরিচিত একটি নতুন সংগঠনের আবির্ভাব ঘটে।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড:

অতুলপ্রসাদ সেন ১৯০৫ থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি গোপালকৃষ্ণ গোখলের একজন বিশিষ্ট ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ১৯০৫ সালে যখন গোপালকৃষ্ণ গোখলে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এবং তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ও শীর্ষে ছিল। তখন তিনি তার হৃদয়ের সবচেয়ে প্রিয় কারণ গুলির মধ্যে একটি ভারতীয় শিক্ষার প্রসার কে বিশেষভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে সার্ভেন্ট অফ ইন্ডিয়া সোসাইটি প্রতিষ্ঠাতা করেন অতুলপ্রসাদ সেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতি ছিলেন। এবং গোপাল কৃষ্ণ গোখলে দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেস পার্টি অফ সার্ভেন্ট অফ ইন্ডিয়া সোসাইটির প্রতি সমর্থন ও উদারতা প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যোগ দেন এবং বেশ কয়েকটি বার্ষিক সম্মেলন অযোধের প্রতিনিধিত্ব করেন। সিলিং লখনৌ মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছিলেন।

অন্যান্য সামাজিক কাজকর্ম: 

তিনি সক্রিয় রাজা দক্ষিণ রঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের প্রতিষ্ঠিত লখনউ ক্যানিং কলেজ লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরিত করতে অংশ নেন। এবং প্রথম কার্যনির্বাহী কমিটি সর্বশেষ হিসেবেও কাজ করেন। তিনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। অতুলপ্রসাদ সেন মেমোরিয়াল গার্লস কলেজ, লক্ষনউ মহালকি পাঠশালা ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত নম্রভাবে এর পৃষ্ঠপোষকের নাম বহন করে।

রচনাবলী: 

সংগীত অতুলপ্রসাদ সেন একটি নিজস্ব রীতি সৃষ্টি করেছিলেন। এই সংগীত ছিল অতুলপ্রসাদ জীবনের একটি প্রাণের আরাম। তিনি যে সকল গান রচনা করেছিলেন তার দান তিনি নিজেই করেছিলেন। বাংলার বাউল ও কীর্তন সুরের হিন্দুস্থানী, সংগীতের সুর ও ঢং মিশিয়ে তিনি নিজস্ব রীতিনীতি প্রবর্তন করেছিলেন। অতুলপ্রসাদ সেনের রচিত গানগুলি প্রধানত তিনভাবে বিভক্ত করা যায়: তাহলে স্বদেশী সংগীত, ভক্তি ও প্রেমের গান তার স্বদেশী সংগীত গুলি স্বদেশী আন্দোলনের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। জাতীয় চেতনা জাগরণী তার, ওঠো গো ভারত লক্ষ্মী, বল বল বল সবে শত বিনা বেণু রবে, আ মরি বাংলা ভাষা। প্রভৃতি গানগুলোর অবদান ও অপরিসীম।

পরলোকগমন: 

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে আগস্ট বাংলা সাহিত্য জগতে অন্যতম স্মরণীয় প্রতিভা অতুলপ্রসাদ সেন পরলোক গমন করেন। বাংলা সাহিত্য জগতে অতুলপ্রসাদ সেনের অবদান ছিল অপরিসীম।

 বল, বল সবে, শত বীণা-বেণু-রবে,

ভারত আবার জগত-সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।

ধর্মে মহান্ হবে, কর্মে মহান্ হবে,

নব দিনমণি উদিবে আবার পুরাতন এ পুরবে!

আজও গিরিরাজ রয়েছে প্রহরী,

ঘিরি তিনদিক নাচিছে লহরী,

যায়নি শুকায়ে গঙ্গা গোদাবরী, এখনও অমৃতবাহিনী। |

প্রতি প্রান্তর, প্রতি গুহা বন,

প্রতি জনপদ, তীর্থ অগণন, কহিছে গৌরব-কাহিনী।

বিদুষী মৈত্রেয়ী খনা লীলাবতী,

সতি সাবিত্রী সীতা অরুন্ধতী,

বহু বীরবালা বীরেন্দ্র-প্রসূতি, আমরা তাঁদেরই সন্ততি।

ভোলেনি ভারত, ভোলেনি সে কথা,

অহিংসার বাণী উঠেছিল হেথা,

নানক, নিমাই করেছিল ভাই, সকল ভারত-নন্দনে।

ভুলি ধর্ম-দ্বেষ জাতি-অভিমান,

ত্রিশকোটি দেহ হবে এক প্রাণ, একজাতি প্রেম-বন্ধনে।

মোদের এ দেশ নাহি রবে পিছে,

ঋষি-রাজকুল জন্মেনি মিছে,

দুদিনের তরে হীনতা সহিছে, জাগিবে আবার জাগিবে।

আসিবে শিল্প-ধন-বাণিজ্য,

আসিবে বিদ্যা-বিনয়-বীর্য, আসিবে আবার আসিবে

এস হে কৃষক কুটির-নিবাসী,

এস অনার্য গিরি-বনবাসী,

এস হে সংসারী, এস হে সন্ন্যাসী, —মিল হে মায়ের চরণে।

এস অবনত, এস হে শিক্ষিত,

পরহিত-ব্রতে হইয়া দীক্ষিত, —মিল হে মায়ের চরণে।

এস হে হিন্দু, এস মুসলমান,

এস হে পারসী, বৌদ্ধ, খৃষ্টিয়ান্, —মিল হে মায়ের চরণে।

অতুলপ্রসাদ সেনের পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে যদি আপনার সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে আপনার  বন্ধু, বান্ধবী, ও সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন আরো নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের পাশে থাকুন আমাদের এই ওয়েবসাইটের চোখ রাখুন। লেখাটির মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন।

।।ধন্যবাদ।।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content