বালগঙ্গাধর তিলক এর জীবনী
Bal Gangadhar Tilak
ভূমিকা:
বালগঙ্গাধর তিলক একজন ভারতীয় পন্ডিত, জাতীয়তাবাদী নেতা, সমাজ সংস্কারক, আইনজীবী এবং একজন স্বাধীনতার সংগ্রামী ছিলেন। তার প্রকৃত নাম ছিল কেশভ গঙ্গাধর তিলক। তাকে সম্মানসূচক ‘ লোকমান্য’ উপাধিতে অভিনীত করা হয় যার অর্থ ‘ জনগণ দ্বারা গৃহীত নেতা’। তাকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জনক বলা হয়। আবার মহাত্মা গান্ধী তাকে আধুনিক ভারতের রূপকার বলে অভিহিত করেছিলেন। ১৮৯৪ সালে তিনি প্রথম মহারাষ্ট্রের গণেশ উৎসব প্রচলন করেছিলেন।
একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী নেতা আজকের তারই জীবনী আপনাদের সামনে আজ তুলে ধরলাম।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
1856 সালের 23 শে জুলাই মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে বালগঙ্গাধর তিলক একটি মারাঠি হিন্দু চিতপাবন ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবার নাম ছিল গঙ্গাধর রামচন্দ্র তিলক। বাবা ছিলেন একজন আদর্শবাদী শিক্ষক। বাবার শিক্ষকতার মাধ্যমে বেশি ধন উপার্জন করতে চাইতেন না। তিনি মনো প্রাণে বিশ্বাস করতেন শিক্ষকতা একটি মহান পেশা শিক্ষকরাই দেশের প্রকৃত অভিভাবক, শিক্ষকতার মাধ্যমে উত্তর পুরুষের আবির্ভাব ঘটে।
শিক্ষাজীবন:
বালগঙ্গাধর তিলক ও তার প্রাথমিক শিক্ষা রত্নগিরিতে সম্পন্ন করেন। পরে তিনি পুনেতে পড়াশোনা করতে যান, এবং ১৮৭৭ সালের ডোকান কলেজ থেকে গণিত এবং সংস্কৃত বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর আইন পড়ার জন্য তিনি মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হন, তিনদিন পরেই আইনের চর্চা ছেড়ে শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকতায় মনোনিবেশ করেন।
কর্মজীবন:
বালগঙ্গাধর তিলক প্রাথমিক কর্মজীবন শুরু করেন পুনের একটি বেসরকারি স্কুলে একজন গণিতের শিক্ষক হিসাবে। স্নাতক হওয়ার পরেই তিনি এই কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে তিনটি চাকরি ছেড়ে যান এবং সাংবাদিকতায় যোগদান করেন। এছাড়া তিনি জনগণের কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন ” রিলিজিয়ান এন্ড প্র্যাকটিক্যাল লাইফ আর নট ডিফারেন্ট”। ১৮৮০ সালের গোপাল গনেশ আগারকর, মহাদেব বল্লাল নাম জোশি, এবং বিষ্ণুশ্রী চিপলুস্কার সহ তার কলেজের কয়েকজন বন্ধুদের সঙ্গে একজোট হয়ে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য একটি নিউ ইংলিশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের লক্ষ্য ছিল ভারতের যুবকদের জন্য শিক্ষার মান উন্নত করা এবং এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার সাফল্য তাদের আরো উৎসাহ জুগিয়েছিল। ফলস্বরূপ, ১৮৮৪ সালে ডোকান এডুকেশন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন যার মাধ্যমে তারা একটি নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছিলেন। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তারা ভারতীয় সংস্কৃতিতে জোর দিয়েছিলেন। তাদের সমিতি ১৮৮৫ সালে পোস্ট-সেকেন্ডারি স্টাডিজের জন্য ফারগুষণ কলেজের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বালগঙ্গাধর তিলক এই কলেজে গণিত পড়াতেন।
রাজনৈতিক জীবন ও অবদান:
বালগঙ্গাধর তিলক ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম দিককার নেতা এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি স্বরাজ এর দাবিতে প্রথম দৃঢ় কন্ঠে আওয়াজ তোলেন এবং একে জনগণের অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেন। তার অন্যতম বিখ্যাত উক্তি ছিল ” স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার” এবং আমি তা অর্জন করব) । বালগঙ্গাধর তিলক চিনেন রেডিক্যাল দলের নেতা, যার ব্রিটিশ শাসনের প্রতি আপোষহীন মনোভাব নিয়ে ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। ১৮৯০ এর দশকে তিনি বেঙ্গল পার্টিশন (বঙ্গভঙ্গ) এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচারের বিভিন্ন উৎসব এবং অনুষ্ঠান শুরু করেন, যেমন গণেশ চতুর্থী, শিবাজী উৎসব। এ সময় তিনি বিভিন্ন চেতনাকে জাগ্রত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
সাংবাদিকতা ও লেখালেখি:
বালগঙ্গাধর তিলক ছিলেন একজন প্রতিবাদের লেখক এবং সাংবাদিক। তিনি কেশরী “মারাঠি ভাষায়” ও ইংরেজি ভাষায় নামের দুটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। এই পত্রিকাগুলির মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে কঠোর সমালোচনা এবং ব্রিটিশ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ করতেন। এবং তার লেখনীতের তৎকালীন ভারতীয় জনগণের স্বার্থ এবং অনুভূতির স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটত।
বালগঙ্গাধর তিলক এর অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ হল” “শ্রীমৎভগবত গীতা রহস্য” যা তিনি মন্ডালয় কারাগারে বসে রচনা করেন। এই বইতে তিনি শ্রীমৎ ভগবত গীতার দর্শন ব্যাখ্যা করেছেন যা তৎকালীন স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি আদর্শশিক ভিতি প্রদান করেছিলেন।
কারাবাস ও ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা:
বালগঙ্গাধর তিলক বিপ্লবী কার্যকলাপের উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার করে। ১৯০৮ সালে তাকে সিডিশন (রাজদ্রোহ) আইনের অভিযুক্ত করে ছয় বছরের জন্য মায়ানমারের (তৎকালীন বার্মা) ম্যান্ডেলে নির্বাসন দেওয়া হয়। কারাবাসের সময় থেকেই তিনি শ্রীমদ্ভগবত গীতা রহস্য গ্রন্থটি রচনা করেন। বালগঙ্গাধর তিলকের কারাবাজ তার জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে এবং তাকে ভারতীয় জনসাধারণের কাছে লোকমান্য জনগণের নেতা উপাধি প্রদান করা হয়।
সমাজ সংস্কারের ও শিক্ষা:
একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি শিক্ষাকে সামাজিক উন্নতির মাধ্যমে হিসেব দেখতেন এবং মহারাষ্ট্র শিক্ষার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ডোকান এডুকেশন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। যার লক্ষ্য ছিল ভারতীয় ছাত্রদের মধ্যে দেশপ্রেম এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি করা।
মৃত্যুর পূর্ববর্তী সময়:
বালগঙ্গাধর তিলক ১৯২০ সালের একলাই আগস্ট তিনি মুম্বাইয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার মৃত্যু হয়। আর মৃত্যু ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল। তবে তার আদর্শ এবং চেতনা পরবর্তী নেতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
উত্তরাধিকার
বালগঙ্গাধর তিলক ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তার কর্মকাণ্ড ও আদর্শ পরবর্তী প্রজন্মের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। তাকে ভারতীয় জাতীয়তা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে স্মরণ করা হয়। এবং তার জীবন ও কর্ম ভারতে ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। তিলকের নেতৃত্ব এবং স্বরাজের দাবিতে অবিচল সংগ্রাম এবং তাকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় নায়ক করে তুলেছে।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা বালগঙ্গাধর তিলক পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে যদি আপনার সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী ও সহপাঠীদের মধ্যে পোস্টটি শেয়ার করে দেবেন। আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখুন এবং আমাদের পাশে থাকুন।
।।ধন্যবাদ।।
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.