বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী
বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ সাধনের ক্ষেত্রে বঙ্কিমচন্দ্র অবদানের কথা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। উপন্যাস, প্রবন্ধ, রস রচনা যেখানেই তিনি হাত দিয়েছেন সেখানেই তার অসাধারণ প্রতিভার প্রকাশ হয়েছে। বাংলা ভাষায় পত্রিকার সম্পাদনের ক্ষেত্রেও তিনি এমন একটি উচ্চ – আদর্শ স্থাপন করেছিলেন। যা আজও অনুকরণযোগ্য। শুধু বাংলা সাহিত্যের দিকপাল তিনি নয়, ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম চিন্তাবিদ হিসেবেও তিনি স্বীকৃত।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে সম্মানান জানিয়ে জীবনী কিছুটা অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম
বন্দে মাতরম্
সুজলাং সুফলাং
মলয়জশীতলাং
শস্যশ্যামলাং
মাতরম্৷৷
শুভ্র-জ্যোৎস্না-পুলকিত-যামিনীম্
ফুল্লকুসুমিত-দ্রুমদলশোভিনীম্
সুহাসিনীং সুমধুরভাষিণীম্
সুখদাং বরদাং মাতরম্৷৷
সপ্তকোটিকণ্ঠকলকলনিনাদকরালে,
দ্বিসপ্তকোটীভুজৈর্ধৃতখর-করবালে,
অবলা কেন মা এত বলে৷৷
বহুবলধারিণীং
নমামি তারিণীং
রিপুদলবারিণীং
মাতরম্৷৷
তুমি বিদ্যা তুমি ধর্ম্ম
তুমি হৃদি তুমি মর্ম্ম
ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে৷৷
বাহুতে তুমি মা শক্তি
হৃদয়ে তুমি মা ভক্তি
তোমারই প্রতিমা গড়ি
মন্দিরে মন্দিরে॥
ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী
কমলা কমল-দলবিহারিণী
বাণী বিদ্যাদায়িনী
নমামি ত্বাং
নমামি কমলাম্
অমলাং অতুলাম্
সুজলাং সুফলাম্
মাতরম্॥
বন্দে মাতরম্
শ্যামলাং সরলাম্
সুস্মিতাং ভূষিতাম্
ধরণীং ভরণীম্
মাতরম্।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
১৯৩৮ সালের ২৬ শে জুন, ভারতের ২৪ পরগনার অন্তর্গত কাঁঠালপাড়া গ্রামে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। তোর পিতার নাম ছিল যাদব চট্টোপাধ্যায় তিনি পেশায় একজন ব্রিটিশ উপনিবেশিক সরকারের একজন কর্মকর্তা। মায়ের নাম ছিল দুর্গা সুন্দরী দেবী। দুর্গা সুন্দরী দেবীর তৃতীয় ও সবথেকে ছোট সন্তান ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমচন্দ্রের দুই দাদার নাম ছিল-শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
শিক্ষালাভ:
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা দিক থেকে প্রচন্ড মেধাবী ছিলেন। তিনি মাত্র এক দিনের মধ্যে বর্ণমালা আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা কাঁঠালপাড়া গ্রামে শুরু হলেও তা সেখানে সম্ভব হয়নি। তিনি কাঁঠালপাড়া গ্রামের মাত্র আট মাস মাস পড়াশোনা করার পর পিতা যাদব চট্টোপাধ্যায় সাথে মেদিনীপুরে চলে আসেন। এবং মেদনীপুর থেকেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। এখানে তিনি ইংরেজির মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করতেন।
মেদিনীপুরে ৫ বছর ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করার পর। তিনি কাঁঠালপাড়া গ্রামে ফিরে আসেন, এখানে তিনি শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে বাংলা ও সংস্কৃতির পাঠ নিতে শুরু করেন। তারপর ১৮৪৯ সালে হুগলি মহসিন কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানে আট বছরের জন্য পড়াশোনা জারি রাখেন। এরপর ১৮৫৬ সালে আইন পড়ার জন্য কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তিনি ১৮৫৯ সালে বিএ পরীক্ষা দেন। এবং কলেজে দুজন গ্রাজুয়েট এর মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন।
বিবাহিত জীবন:
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১১ বছর বয়সে নারায়ণপুর গ্রামের মহিলা পঞ্চমবর্ষিয়া বালিকার তিনি বিয়ে করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ১৮৫৯ সালে তার প্রথম স্ত্রী মারা যান। এরপর ১৮৬০ সালে হালিশহরে বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারের কন্যা রাজলক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়।
কর্মজীবন:
পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি যশোর শহরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টারের পদে চাকরি পান। যশোরের কয়েক বছর কাজ করার পর ১৮৬০ সালে তিনি মেদিনীপুর নেগুয়ায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে যোগদান করেন। তারপর খুলনাতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসেবে যোগদান করেন। এভাবে তিনি বেশ কিছু ডেপুটি মাজিস্ট্রেট ডেপুটি কালেক্টার হিসেবে যোগ করেন যেমন-
বারুইপুর, মুর্শিদাবাদ, আলিপুর, হাওড়া, ঝিনাইদহ এর মাঝে তিনি ১৮৭১ সালের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পর থেকে প্রমোশন পেয়ে তিনি মুর্শিদাবাদে কালেক্টর হয়ে ওঠেন। সবশেষে ১৪ ই সেপ্টেম্বর ১৮৯১ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চাকরিজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
সাহিত্য জীবন:
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে সাহিত্য সম্রাট বলার পিছনে মূল কারণ হলো তার উপন্যাস, প্রবন্ধ গ্রন্থ ও বিবিধ। তার লেখা প্রথম উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী, বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস হয়ে ওঠে। তিনি এই উপন্যাস মাত্র ২৪ থেকে ২৬ বছর বয়সে লিখেছিলেন। তিনি মোট 15 টি উপন্যাস লিখেছিলেন যার মধ্যে একটি ইংরেজি ভাষার উপন্যাসও ছিল।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উপন্যাস গুলি হল-
দুর্গেশ নন্দিনী (১৮৬৫)
কপালকুণ্ডলা (১৮৬৬)
মৃণালিনী (১৮৬৯)
ইন্দিরা (১৮৭৩)
চন্দ্রশেখর (১৮৭৫)
রাজসিংহ (১৮৮২)
আনন্দমঠ (১৮৮২)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রবন্ধ গুলি হল:
লোক রহস্য (১৮৭৪)
বিজ্ঞান রহস্য (১৮৭৫)
বিবিধ সমালোচনা (১৮৭৬)
সাম্য (১৮৭৯)
কৃষ্ণ চরিত্র (১৮৮৬)
পুরস্কার ও সম্মাননা:
ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কালেক্টর ও কালেক্টর পদের অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে ক্যাম্পিনিয়ন অফ দা মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্যা ইন্ডিয়ান এম্পায়ার খেতাব দিয়ে সম্মানিত করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে।
পরলোক গমন:
8 ই এপ্রিল ১৮৯৪ সালে (২৬ শে চৈত্র ১৩০০বঙ্গাব্দ) সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের ছেড়ে চলে যান।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন বাঙালি কবি ও ব্রিটিশ কবি ও সাংবাদিক ছিলেন।বন্দেমাতারাম লেখক হিসেবে তিনি সর্বাধিক বিখ্যাত। যা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুপ্রাণিত করেছিল। বন্দেমাতারাম গানটি আজও আমাদের কে শিহরিত করে তোলে । বন্দে মাতারাম গানটি তিনি যেভাবে লিখেছেন তা ব্যাখ্যা করলে হয়তো খুব অল্প হবে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর জীবনের কিছুটা অংশ আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।
তাই তিনি আজও আমাদের মধ্যে অমর হয়ে আছেন। অমর হয়ে থাকবেন আজীবন
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.