বিহারীলাল চক্রবর্তী জীবনীবিহারীলাল চক্রবর্তী জীবনী

বিহারীলাল চক্রবর্তী জীবনী 


আধুনিক গীতি কাব্যের প্রথম সচেতন কবি ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে কবি আদর্শ ও মানসিকতা বাংলা কবিতা প্রছন্নভাবে বহুলাংশে  কার্যকর হয়েছে। আত্মসচেতনতা আত্মলীন কবি সুখ -দুঃখ ,আনন্দ বেদনার সুরে মহাকাব্যের যুগেও সাধারণ পাঠক সময় সর্বাত্মকভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল

বিহারীলাল চক্রবর্তী ইংরেজি ভাষায় নব্যশিক্ষিত কবি দিকের ন্যায় যুদ্ধবর্ণনা সংকুল মহাকাব্য, উদ্দীপনা দেশনুরাগমূলক কবিতা লিখলেন না এবং পুরাতন কবিদের ন্যায় পৌরাণিক উপাখ্যানের দিকেও গেলেন না তিনি নিভৃতে বসিয়া নিজের ছন্দে নিজের মনের কথা বলিলেন। তাহার এই স্বগত উক্তিতে বিশ্বাহিত, দেশই তো অথবা স্বভাব মনোরঞ্জনের কোন উদ্দেশ্য দেখা গেল না এই জন্যই তাহার সুর অন্তরঙ্গের হৃদয়ে প্রবেশ করিয়া সহজ পাঠকের বিশ্বাস আকর্ষণ করিয়া আনিল।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

কলকাতা জোড়া বাগান অঞ্চলে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ২১ মে (৮ ই জ্যৈষ্ঠ, ১২৪২ বঙ্গাব্দ) বিহারীলাল চক্রবর্তীর জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল দিননাথ চক্রবর্তী। তিনি পেশায় একজন পুরোহিত ছিলেন। মাত্র চার বছর বয়সে বিহারীলাল চক্রবর্তী মাতৃহারা হয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি পিতার স্নেহ  লাভ করেন।

শিক্ষাজীবন: 

লেখক বিহারীলাল চক্রবর্তী সংস্কৃত, ইংরেজি ও বাংলা এই তিনটি ভাষা সম্পূর্ণভাবেই আয়ত্ত করেছিলেন। যা পরবর্তীকালে কাব্য চর্চায় বিশেষ সহায়ক হয়েছিল তিনি পরবর্তীতে সংস্কৃত কলেজে কিছুকাল অধ্যায়ন করেন ফলের সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে তার বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিল যা পরবর্তীকালে কাব্যের মধ্যে দিয়ে পুস্ফটিত হয়েছে।

বৈবাহিক জীবন: 

বিহারীলাল মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১০ বছর বয়সী অভয়াদেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু এই বিবাহ খুবই সীমিত পরিসরের ছিল। চার বছর পর অভায়া দেবী মৃত সন্তান প্রসব করে মৃত্যুমুখে পতিত হন। এর দু বছর পরে বিহারীলাল বউবাজার নবীনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের কন্যা কাদম্বিনী দেবী বিবাহ করেন।

সাহিত্য জীবন:

১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে’স্বপ্ন দর্শন’ নামক গদ্য গ্রন্থ রচনা মধ্য দিয়ে লেখক বিহারীলাল সাহিত্য জীবনের পদার্পণ করেন। সংস্কৃত কলেজে অধ্যয়নকালে পূর্ণিমা নামক পত্রিকায় এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।’সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকা ১৮৫৮ সালের ৩ রা আগস্ট এই গদ্য গ্রন্থের প্রশংসা করে। গ্রন্থটির বিষয়বস্তু ছিল দেশ ও দেশমাতার দুর্ভাগ্যের জন্য গভীর আক্ষেপ। ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের লেখক বিহারী ডালের রচিত গ্রন্থ সংগীত শতক (একশত গানের সমষ্টি) প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থ সম্পর্কে কবি অনাথ বন্ধু রায়কে লিখেছেন “১৫ হইতে ২৫ বছর পর্যন্ত আমার মনে যে যে ভবোদগম হইয়াছিল এবং জীবনে যে ঘটনা  হইয়াছিল, তাহার অধিকাংশ’সংগীত শতকে’ বর্ণিত আছে। সুকুমার সেন এই গ্রন্থ সম্বন্ধে লিখেছেন ”” বৈষ্ণব পদাবলীর মধ্যে দিয়া প্রবাহিত হইয়া বাঙ্গলার বিশুদ্ধ গীতি কবিতার যে ধারাটি নিধু বাবু শ্রীধর কথক রাম বসু প্রভৃতি ‘ টপ্পায় ‘ অর্থাৎ ক্ষুদ্র প্রণয়ন সংগীতে আসিয়া স্তব্ধ হইয়া গিয়েছিল তাহাকে বিহারীলাল নতুন করিয়া প্রবাহিত করলেন সংগীত শতকে….. সুরতলের নির্দেশ থাকিলেও সবগুলি ঠিক গানের ঠোঁটে বাঁধা নয়। সেগুলি গানের ঠোঁটে বাধা সেগুলিতে ভাবে ভক্তিতে প্রায় নিধু শ্রীধর প্রভৃতি রচনার প্রতি বিম্বন আছে ।” সংগীত শতক” গ্রন্থের দৃষ্টান্ত-

আকাশ কেমন ওই
নব ঘন যার
যেন কত কু- বলয়
শোভে সব গায়!
মধুর গম্ভীর স্বরে
ধীরে ধীরে গান করে,

সুধা ধরা বরিশিয়ে

রসায় বসায়

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের লেখক বিহারীলালে ‘ বঙ্গ সুন্দরী’ কাব্যটি প্রকাশিত হয়। কাব্যটি ১০ টি স্বর্গে বিভক্ত। নামগুলি হল- উপহার,”নারী বন্দনা”,” সুর বালা” , করুনাসুন্দরী, বিশাদিনী, প্রিয় সখি, বিরহিণী, প্রিয়তমা এবং অভাগিনী। প্রত্যেকটি স্বর্গের প্রারম্ভে একটি করে উদ্ধৃতি রয়েছে। সেগুলি ভবভূতি, কালিদাস, ভরবি ও বায়রনের। তৃতীয় স্বর্গের প্রাণ প্রাচুর্যময় সুরবালা অভিমানিনী মূর্তির বর্ণনা জীবন্ত রূপে ফুটে ওঠে

কৃতিত্ব: 

১. লেখক বিহারীলাল ছিলেন আধুনিক রোমান্টিক গীতিকার পথপ্রদর্শক। সুকুমার সেনের মতে,” আধুনিক বাঙ্গালা অন্তরঙ্গ গীতি কাব্যের প্রবর্তক তিনি’

২. কবি বিহারীলাল গীতিকাব্যের প্রধান উপাদান হলো – প্রেম ও প্রকৃতি। এক্ষেত্রে চিনির কালিদাসের সহধর্মী। তবে কালিদাস নৈবর্ক্তিক, বিহারীলাল ব্যক্তিনিষ্ঠ’

৩. সারদামঙ্গল কাব্য বিহারীলাল এর এক অনবদ্য সৃষ্টি এই কাব্যটি রচনার জন্য তিনি বাংলায় কাব্যজগতের চিরস্মরণীয় ও বরনীয় হয়ে থাকবেন। প্রেম করুণা ও সৌন্দর্যের আদর্শমূর্তি সারোদা রূপকের মাধ্যমিক চিত্রিত  প্রেম করুণা ও সৌন্দর্যের আদর্শমূর্তি সারদা রূপকের মাধ্যমে চিত্রিত হয়েছে এই কাব্যে। অন্তর বাসিনি কাব্য লোকটিকে অন্তরের বাইরে বিচিত্র কল্পনায় যেভাবে এবং যে রূপে উপলব্ধি করেছিলেন তাকেই রূপ দিয়েছেন ‘সারদামঙ্গল কাব্য।’

মৃত্যু: 

১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে মে বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে 59 বছর বয়সে লেখক বিহারীলাল চক্রবর্তী দেহ বাসন ঘটে।

 

 


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content