BIPIN CHANDRA PALBIOGRAPHY OF BIPIN CHANDRA PAL

বিপিনচন্দ্র পালের জীবনী

BIOGRAPHY OF BIPIN CHANDRA PAL


ভূমিকা:

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলন যারা বীরবিক্রম এবং নিজস্ব মেধার সাহায্য প্রায় সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব হলেন বিপিনচন্দ্র পাল। বিপিনচন্দ্র পাল ছিলেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা। তাকে লাল বাল পাল ত্রয়ীর অন্যতম নেতা হিসেবে স্মরণ করা হয়। লালা রাজপথ রায় এবং বালগঙ্গাধর তিলক এবং বিপিনচন্দ্র পাল যারা চরমপন্থী গোষ্ঠীর প্রতিনিধি ছিলেন। বীরচন্দ্র পাল মূলত স্বদেশী আন্দোলন প্রবক্তা এবং ব্রিটিশ পন্য বর্জন আন্দোলনে অন্যতম প্রধান নেতা।

সেই স্বাধীনতা বীর সংগ্রামী নেতা বিপিনচন্দ্র পালের জীবনী আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

জন্ম ও বংশ পরিচয়:

১৮৫৮ সালের ৭ই নভেম্বর ব্রিটিশ শাসনাধীন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত শ্রীহট্ট  তথা সিলেট জেলার হবিগঞ্জের পইল গ্রামে এক কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল রামচন্দ্র পাল তিনি একজন ফার্সি ভাষার একজন পন্ডিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন ব্রাহ্ম জমিদার এবং সিলেট বারের প্রভাবশালী সদস্য। বিপিনচন্দ্র পালের মাতার নাম ছিল নারায়ণি দেবী। নারায়ণী দেবী শাটিজুয়ারী  গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তবে নারায়ণী দেবী ছিলেন রামচন্দ্র পালের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। তিনি ছিলেন একজন উদার এবং মানবিক গুণের অধিকারী।

শিক্ষাজীবন:

বিপিনচন্দ্র পাল প্রথমে সিলেটেরই একজন মৌলভীর কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। বিপিনচন্দ্র পাল প্রথম বছরগুলিতে বাংলা ও ফার্সি ভাষা শিখেছিলেন। তিনি ইংরেজি স্কুলেও ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর তিনি শ্রীহট্ট তথা সিলেটের সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৮৭৪ সালের সেই বিদ্যালয় থেকে তিনি এন্ট্রাস পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। উচ্চশিক্ষা লাভের পর বিপিনচন্দ্র পাল কলকাতায় চলে আসেন। এবং কলকাতায় এসে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সেই সময়ে প্রচলিত শিক্ষা সংক্রান্ত আইনের প্রতি প্রচন্ড অসন্তোষবসত মাঝপথে, স্নাতক হওয়ার আগেই তিনি প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী বছর গুলিতে তিনি স্বশিক্ষিত হন। অবশ্য তার সাহিত্যিক দক্ষতা ছিল অনবদ্য। সেই সময় তিনি উপনিষদ এবং শ্রীমদ্ভগবত গীতা ব্যাপকভাবে অধ্যায়ন করেছিলেন।

কর্মজীবন:

১৮৭৯ সালে বিপিনচন্দ্র পাল কটকের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিরোধ হওয়ায় তিনি সেই চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন। এরপর বিপিনচন্দ্র পাল শ্রীহট্ট, কলকাতা, ব্যাঙ্গালোর ইত্যাদি জায়গায় তিনি শিক্ষকতা করেছেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত চার্জ মিশন সোসাইটি কলেজে সেন্ট পলস ক্যাথিডাল মিশন কলেজ থেকে অধ্যায়ন করেছিলেন, তেমনই পরবর্তীকালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপনাও করেছেন। ১৮৯০ ও ৯১ সালে তিনি কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরী গ্রন্থাগারিক এবং সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে কাজ করবার সময়ে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি, বি.কে. গোস্বামীদের সঙ্গে বিপিনচন্দ্রপাল আলাপ হয়

রাজনীতি ও স্বাধীনতা আন্দোলন:

বিপিনচন্দ্র পাল কংগ্রেসের যোগ দেন এবং তিনি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের চরমপন্থী অবস্থানন এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি সংগ্রাম চালানোর পক্ষ ছিলেন। তার নেতৃত্বে স্বদেশী আন্দোলনের সূচনা হয় যার মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ পণ্য বর্জন এবং দেশীয় শিল্পের। প্রসার ঘটনো।

ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ:

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন কেশব চন্দ্র সেন এবং সিগনাল শাস্ত্রীদের মদ মানুষের দ্বারা বিপিনচন্দ্র পাল প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ফলস্বরূপ তিনি ১৮৭৭ সালে ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে সেই সময় তার পিতা তাকে ত্যাজ্য পুত্র করেছিলেন। ব্রাহ্ম ধর্মের যোগদান করে তিনি ঐতিহ্য এবং সামাজিক কুফলের বিরোধিতা করতে শুরু করেন। বিপিনচন্দ্র পাল অল্প বয়স থেকেই জাত পতের ভিত্তিতে গড়ে তোলা বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি আওয়াজ তুলেছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন:

সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর অনুপ্রেরণাতে বিপিনচন্দ্র পাল সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৮৮৬ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন। এবং ১৮৮৭ সালের মাদ্রাজি অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশনে অস্ত্র আইন হ্রাস করার জন্য তিনি জোরালো আবেদন করেন। এই আইন বলে আবাদি জমির কর্মকর্তাদের দ্বারা আসামি চা শ্রমিকরা খুবই অত্যাচারিত হতো। জাতীয় কংগ্রেসের সদস্যপদ সর্বভারতীয় স্তরে জাতীয় নেতা হিসাবে বিপিল চন্দ্র পাল তার উত্থানের মঞ্চ তৈরি করে দেয়। কংগ্রেসের নরমপন্থীদের সঙ্গে যুক্ত হলেও বিপিনচন্দ্র পাল খুব শীঘ্রই তিনি লালা রাজপথ রায় ও বালগঙ্গাধর তিলক এবং অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখদের সঙ্গে চরমপন্থী বিপ্লবের ধারণাকে সমর্থন করে সেই পথেই হাঁটতে থাকেন বিপিনচন্দ্র পাল। বিপিনচন্দ্র পাল বিশ্বাস করতেন প্রার্থনা আবেদনের সাহায্যে স্বরাজ লাভ সম্ভব নয়। তার বদলে ব্রিটিশ শাসনকে আক্রমণ করার নিত্যান্ত প্রয়োজন। ঐতিহাসিক ত্রয়ী লাল বালের একজন হলেন বিপিনচন্দ্র পাল। এবং বাকি দুজন হলেন লালা রাজপথ রায় ও বালগঙ্গাধর তিলক। এই ত্রয়ী বিপ্লবী আবেগকে উজ্জীবিত করেন এবং বিভিন্ন বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে থাকেন।

রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ:

১৯২৫ সালে বিপিনচন্দ্র পাল রাজনীতি থেকে অবসর নেন। তিনি জীবনের শেষ ছয় বছর জাতীয় কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকেছেন। কিন্তু বিভিন্ন সাময়িক করতে পত্রিকায় তিনি লেখালেখির চর্চা চালিয়ে গেছেন। তিনি তার লেখায় বিভিন্ন শ্রমিকদের জন্য মজুরী বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। এবং নারী-পুরুষদের সমতার কথা বলেছেন। তেমনি নারী শিক্ষা সহ আরো প্রয়োজনীয় কয়েকটি বিষয়ে তিনি তার পক্ষ লিখেছেন।

সাংবাদিকতা ও সাহিত্য:

বিপিনচন্দ্র পাল একজন প্রতিভাবান সাংবাদিক ও লেখক ছিলেন। তিনি”নিউ ইন্ডিয়া”ও বন্দেমাতারাম পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন। যা জাতীয়তাবাদীর চিন্তা ধারর প্রচার করতো। তার রচনাবলী ভারতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামের পক্ষে জনমত গঠন করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তার লেখা বই হল”indian Nationalism” এবং অন্যান্য রচনায় তিনি জাতীয়তাবাদী আদর্শ বিরোধী মনোভাব তুলে ধরেন।

বিপিনচন্দ্র পালের অবদান:

১• স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে ব্রিটিশ পন্য বর্জনের জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন।

২• জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা প্রচারের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

৩•নারী শিক্ষা এবং সামাজিক সংস্কারের পক্ষে কাজ করেন যা ভারতীয় সমাজকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

পরলোক গমন:

১৯৩২ সালের ২০ শে মে কলকাতার বিপিনচন্দ্র পাল পরলোক গমন করেন। মৃত্যুকালে বিপিনচন্দ্র পালের বয়স ছিল ৭৩ বছর।

উপসংহার:

বিপিন চন্দ্র পালের মতো বিপ্লবী নেতা যেভাবে তিনি দেশের জন্য কাজ করেছেন। তার মতো মহান ব্যক্তি আজও আমাদের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন আজীবন।

বিপ্লবী নেতা বিপিনচন্দ্র পালের পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে যদি আপনার সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী ও সহপাঠীদের মধ্যে পোস্টটি অবশ্যই শেয়ার করে দেবেন। আরো নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখুন। এবং আমাদের পাশে থাকুন।

।।ধন্যবাদ।।

 

 


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content