Chittaranjan DasChittaranjan Das

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এর জীবনী

Chittaranjan Das


দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস দেশ বা জাতির বন্ধু নামে পরিচিত। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি একজন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নাম আমরা তো সকলেই শুনেছি। ইতিহাসের পাতায় আমরা সকলেই পড়েছি। সেই স্বাধীনতা সংগ্রামী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের জীবনী আপনাদের সামনে আজ তুলে ধরব 

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর বাংলাদেশে মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরে  দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ  বাঙালি হিন্দু বৈদ্য ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবান নাম ছিল ভুবন মোহনদাস। ব্রম্ভ সমাজের প্রতিষ্ঠাতা দুর্গামোহন দাসের ভাইপো তার বাবা পেশায় একজন আইনজীবী এবং একজন সাংবাদিক। এবং ইংরেজি গির্জার সাপ্তাহিক প্রতিষ্ঠাতা।

শিক্ষাজীবন: 

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। এবং পরবর্তীকালে তিনিইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পড়তে যান। ১৮৯২ সালে তিনি বার এটল ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরে আসেন।

আইনজীবী হিসাবে ক্যারিয়ার:

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস একজন সফল আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তার প্রধান কৃতিত্ব ছিল আলিপুর বোমা মামলায়। শ্রী অরবিন্দ ঘোষের এর পক্ষে সাফল্য সাথে কেস লড়া। তিনি এই মামলায় তিনি অরবিন্দ ঘোষ কে নির্দেশ প্রমাণ করতে সক্ষম হন। এই কৃতিত্ব তাকে একজন বিশিষ্ট আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ:

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি 1917 সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যোগ দেন এবং ১৯২০ সালে অসহযোগ আন্দোলনে অন্যতম প্রধান নেতা হয়ে ওঠেন। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনের সময় চিত্তরঞ্জন দাস কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক ও আন্দোলনে কর্মকাণ্ড

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উৎকৃষ্ট ছিলেন। কার সকল আন্দোলনের প্রধান হিসেবে তার প্রধান কৃতিত্ব ছিল এবং যার মধ্যে অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০ সাল)। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ১৯০৫ কলকাতা পৌর প্রশাসন ও অধিকতর স্থানীয় নির্বাচন সংক্রান্ত কাজের মধ্যে বহু তলের জীবন কাটিয়েছেন তিনি।

স্বরাজ দল গঠন:

১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ও মতিলাল নেহেরু মিলে স্বরাজ দল গঠন করেন। এই দলের প্রধান লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং স্বরাজ বা শাসন অর্জন করা। স্বরাজ দল ব্রিটিশ সরকারের আইন পরিষদের প্রবেশ করে সেখান থেকে সরকারের কাজকর্ম বাধা দেওয়ার চেষ্টা করতেন।

গণমানুষের নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস: 

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ছিলেন গণমানুষের নেতা। তিনি সবসময় দরিদ্র ও শ্রমিক মানুষের জন্য কাজ করতেন। তিনি কলকাতার পৌর সংস্থার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। সেই সময়ে তিনি দরিদ্র মানুষের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করতেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে কলকাতার স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের কাব্য: 

প্রথমে তিনি ব্যারিস্টার হিসাবে খুব সুনাম পাননি। তখন তিনি কাব্য রচনা করতেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের লেখা অন্তর্যামী, মালা, সাগর সঙ্গীত প্রভৃতি কাব্য লিখে তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। অনেকেই তার কাব্য প্রতিভায় মুগ্ধ হন। শ্রী অরবিন্দের মতো তার কাব্য পাঠের তৃপ্তি পেতেন। ক্রমে ক্রমে তিনি নিজেকে জনসেবায় এবং দেশের উৎসর্গ করলেন। এবং সমস্ত ভোগ বিলাসিনী ত্যাগ করলেন।

আলিপুর বোমা মামলা: 

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে আলিপুর ও বোমা মামলা শুরু হল। আলিপুর বোমা মামলায় আসামি ছিলেন শ্রী অরবিন্দ ঘোষ। তাকে সেই মামলা থেকে নাম মুক্ত করতে পারলে দেশের সর্বনাম ছিল। সেই সময়ে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের এর আইন জ্ঞান প্রতিভা ও বাকশক্তির বলে শ্রী অরবিন্দ ঘোষ সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন। সারা বাংলাদেশের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের এই প্রতিভায় মুগ্ধ হয়। সকল ভারতবাসী জেগে উঠল এই জাগরণের মন্ত্রে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল। কেবল বুদ্ধি নয় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের ছিল উদার হৃদয়। একদিকে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস কঠোর অন্যায় কেউ তিনি কখনো সহ্য করতে পারতেন না। সেখানে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস অটল অসহায় দিনের প্রতি তার দয়ার শেষ ছিল না।

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এর সেরা উক্তি: 

প্রতিটি দেশের নিজস্ব একটি বিশেষত্ব আছে। আমি তা স্বীকার করি কিন্তু তার উপরে এই সমস্ত বিভিন্ন প্রদেশ একটি সাধারণ সংস্কৃতিতে একত্রে আবদ্ধ। যদি সমগ্র হিন্দু জাতি এইভাবে বন্ধনী আবদ্ধ হয় তবে আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে সমগ্র ভারতজুড়ে মহামেডান জাতিগুলি একইভাবে একত্র আবদ্ধ হয়ে আমরা ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তবে এই দুটি মহান সংস্কৃতিকে একত্রে মিলিত হতে হবে। তারা বলে যে আমরা স – সরকার পাওয়ার মত আমরা শিক্ষিত নই। আমার উত্তর এটা কার দোষ? দেড়শ বছর ধরে আপনি এই দেশকে শাসন করছেন এবং এখনো আপনি নিজের দেশকে এতটা শিক্ষিত করতে পারেননি, যা তারা নিজেদের নিয়ে শাসনের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। স্বরাজ মেনে আমাদের নিজেদের মধ্যে বাস করতে হবে। আত্ম নিয়ন্ত্রিত হতে হবে আমি তোমাকে বলছি যে আজ আমরা বড় দাস। আমাদের অর্থনৈতিক দাসত্ব আমাদের রাজনৈতিক দাসত্বের চেয়েও বড়।

মৃত্যু উত্তরাধিকার:

১৯২৫ সালে ১৬ই জুন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে ভারতবাসী শোকাহত হয়। তিনি যে আদর্শ মূল্যবোধ রেখে গেছেন আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের অবদান আমাদের জাতীয় জীবনের অমূল্য সম্পদ হিসেবে পরিচিত।

উপসংহার: 

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের জীবন আমাদের শেখায় যে কিভাবে একটি দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের কল্যাণের জন্য নিবেদিত প্রান দিয়ে কাজ করতে হয়। তার মত মহানায়কের ত্যাগ ও আত্মনিবেদন আমাদের জাতীয় জীবনের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার জীবন ও আদর্শ আমাদের সব সময় স্মরণ করিয়ে যায় যে সত্য না এর জন্য সংগ্রাম কখনোই বৃথা যায় না।

 

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস দেশের স্বাধীনতার জন্য যেভাবে কাজ করেছেন। যা আমাদের মধ্যে আজও চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের মতো মহান ব্যক্তি আজও আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন বেঁচে থাকবেন আজীবন।

 

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের যদি পোস্ট তাহলে অবশ্যই পোস্টটি আপনার বন্ধু, বান্ধবী ও সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন। আরো নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখুন এবং আমাদের পাশে থাকুন। 

।।ধন্যবাদ।।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content