দ্বিজেন্দ্রলাল রায়দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জীবনী

Dwijendralal Ray Biography 


ধনধান্যে পুষ্পে ভরা

আমাদেরই বসুন্ধরা

তাহার মাঝে আছে দেশ এক

সকল দেশের সেরা

 

এই গানটি তো আমরা সকলেই শুনেছি এবং সকলেই জানি। সেই ভাবুক এবং শান্ত প্রকৃতির কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জীবনী আপনাদের সামনে আজকে তুলে ধরবো।

 

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে জুলাই কৃষ্ণনগরে এক ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বাবার নাম ছিল কার্তিকেয় চন্দ্র রায়। আর মায়ের নাম ছিল প্রসন্নময়ী দেবী। ছোটবেলা থেকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় খুবই শান্ত প্রকৃতির এবং ভাবুক প্রকৃতির ছিল। এবং স্মরণশক্তি ছিল তার খুবই প্রখর। মানুষের জটলা ছেড়ে গাছপালা, পাখি, ফুল ইত্যাদি দেখতে ভালবাসতেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ছোটবেলা থেকেই গান গাইতে ভালবাসতেন।

পয়েন্ট বিস্তারিত
জন্ম তারিখ ১৯ জুলাই ১৮৬৩
পেশা কবি, নাট্যকার, গীতিকার
প্রভাবশালী রচনা মেবার পতন, চন্দ্রগুপ্ত
মৃত্যু ১৭ মে ১৯১৩

শিক্ষাজীবন: 

প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৮৮৪ সালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়  দ্বিতীয় স্থান অধিকার হয়ে তিনি এমএ পাস করেন। এরপর তিনি সরকারি বৃত্তি পেয়ে কৃষিবিদ্যার জন্য লন্ডনে পড়াশোনা করতে যান। এবং সেখানে অনেকগুলো ডিগ্রী লাভ করেন তিনি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের দেশীয় সংগীতের ভিত যথেষ্ট দৃঢ় ছিলো ফলে বিলেতে বসবাস কালীন পাশ্চাত্য ও সঙ্গীতের ওপর দক্ষতা লাভ করেন তিনি। এবং তিনি Lyric India নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন।

কর্মজীবন: 

দেশে ফিরে এসে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি পেয়েছিলেন। তিনি চাকরিতে যোগ দিলেও তিনি নিজেকে সবসময় সাহিত্যচর্চায় অব্যাহত রাখেন। তিনি এই কবিতা প্রবন্ধ এবং নাটক রচনা করেন যা সমকালীন সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে চর্চা করে।

বিবাহিত জীবন: 

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কলকাতার বিখ্যাত হোমিওপ্যাথ প্রতাপচন্দ্র মুজমদারের কন্যা সুরবালা দেবী বিয়ে করেন। এরপর তিনি উচ্চ পদে চাকরিতে পেয়ে মুঙ্গেরে চলে যান। এবং সেখান থেকে তিনি সংগীত শিল্পের উপর চর্চা করতে শুরু করেন।

রচনাবলী: 

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় মোট বারোটি গ্রন্থ প্রকাশিত করেছিলেন। তার কবিতাই ছিল সাহিত্যচর্চার বাহন। তিনি জীবনের শেষ ১০ বছর প্রধানত নাটক রচনাটি ব্যাপৃত ছিলেন। মূলত তার কবিতা ছিল কাব্যনাট্য হাস্যরসাত্মক কবিতা। পৌরাণিক সামাজিক ঐতিহাসিক সব রকম নাটকটিতেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের দক্ষতা ছিল। ক্রমশ  খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের স্বদেশ প্রেম ছিল অপরিমেয়। তিনি স্বদেশী আন্দোলনের যোগদানও করেছিলেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় নিজের দেশকে জননীর মতো মনে করতেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা নাটক ও পৌরাণিক কবিতা নিচে আলোচনা করলাম

১• প্রহসন: এক ঘরে (১৮৮৯), পরিবার (১৯০১), পুনর্জন্ম (১৯১১), প্রায়শ্চিত(১৯০২), আনন্দবিহার (১৯১২)

২• নাট্য কাব্য: পৌরাণিক পাষাণী (১৯০০), সীতা (১৯০৮), ভীষণ (১৯১৪), ইতিহাস মিশ্রিত রোমান্টিক নাট্যকাব্য তারাবাঈ (১৯০৩),

৩• ঐতিহাসিক নাটক: রানা প্রতাপ সিংহ (১৯০৫), দুর্গা দাস (১৯০৬), নুরজাহান (১৯০৮), মেবারপতন(১৯০৮), শাহজাহান (১৯০৯), চন্দ্রগুপ্ত (১৯১১), সিংহল বিজয় (১৯১৫)

৪• সামাজিক নাটক: পরপারে (১৯১২), বঙ্গনারী (১৯১৫)

 

ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে যে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।

চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা কোথায় উজল এমন ধারা
কোথায় এমন খেলে তড়িৎ এমন কালো মেঘে
ও তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে পাখির ডাকে জেগে
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাট্য সাহিত্যের গুরুত্ব: 

বাংলা নাট্য সাহিত্যে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের অবদান অবিস্মরণীয় ভূমিকা আমরা এখনো ভুলতে পারি না বাংলা ভাষায় নাট্য সাহিত্য স্বাভাবিকতা ও আখ্যান বস্তু গঠনে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিতাম। কিন্তু তাতে কবিত্বের অভাববোধ হইত। দ্বিজেন্দ্রলালয়ের জীবনী নিয়ে দেব কুমার রায়চৌধুরী বলেছেন – তাহার ঐতিহাসিক নাটকগুলি অতি সাধারণ সহিত লিখিত। কোন স্থানেই তিনি ইতিহাসকে একবারে অতিক্রম করেন নাই। যেখানে ইতিহাস হাস্যকর নিরব মাত্র সেখানেই তাহার মোহিনী কল্পনা অতি নিপুণতার সহিত বর্ণপাত করেছেন।

মৃত্যু: 

১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের সাথেই মেয়ে মাত্র ৫০ বছর বয়সে পশ্চিমবঙ্গ কলকাতা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় পরলোক গমন করেন।

উপসংহার: 

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের তার সাহিত্যকর্ম বাংলা সংস্কৃতি অবিচ্ছেদ অংশ হয়ে গেছে। তোর দেশ প্রেম সামাজিক সচেতনতা সাহিত্যিক প্রতিভা দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যের এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বাংলা সাহিত্যের এক অমর চরিত্র। তার রচনা দেশপ্রেম এবং সমাজ সচেতনতা আজও পাঠকদের অনুপ্রেরণা যোগায়। এবং তার জীবনসাহিত্যকর্ম বাঙালি জাতির জন্য গর্বের বিষয়।

শান্ত এবং ভাবুক প্রকৃতির কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখাটি যদি ভালো লেগে থাকে যদি আপনার সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন। আরো নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন এবং আমাদের পাশে থাকুন 

।।ধন্যবাদ।।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content