আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
international mother language day
আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙ্গানো
একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি?
মোদের গর্ব মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা…!
আন্তর্জাতিক বাংলা মাতৃভাষা দিবসে শুভেচ্ছা জানাই সকলকে আমাদের এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে
“মাগো ,ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে।
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো ,মা,
তাই কি হয়?
তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।
তোমার জন্য
কথার ঝুড়ি নিয়ে তবেই না বাড়ি ফিরবো।”
ভাষা হল নিজেকে প্রকাশের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা। সেই ভাষা যদি জন্ম পরবর্তী সময় থেকে শিখে আশা ভাষা হয় আমাদের পালনকারী মায়ের মুখের ভাষা হয়। তবে তার গুরুত্বপূর্ণ ই আলাদা। সেই ভাষাই হল আমাদের মাতৃভাষা। প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যার ইতিহাসের জড়িয়ে আছে বাঙালির গর্ব বাঙালির অহংকার।
ভূমিকা:
মাতৃ দুগ্ধ যেমন শিশুর সর্বোত্তম পুষ্টি তেমনি মাতৃভাষার মাধ্যমে ঘটতে পারে একটি জাতির শ্রেষ্ঠ বিকাশ। মানুষের পরিচয়ের সেরা নির্ণায়ক মাতৃভাষা। মাতৃভাষা জাতি- ধর্ম – নির্বিশেষে সকল মানুষের এক মৌলিক সমৃদ্ধ মাতৃভাষার আক্ষরিক অর্থ মায়ের ভাষা বোঝায়। একটি বৃহত্তর অঞ্চলে বেশিরভাগ মানুষ যে ভাষা কথা বলে সেটাই তাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করে তার আশা আকাঙ্ক্ষা আবেগ অনুভূতি। জাতি ও জীবনের মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।
মূল তথ্য
- অফিসিয়াল নাম: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (IMLD)
- পর্যবেক্ষণ করেছে: জাতিসংঘ
- তাৎপর্য: সমস্ত ভাষার সংরক্ষণ এবং সুরক্ষা প্রচার করে
- তারিখ: 21 ফেব্রুয়ারি
- পরবর্তী ঘটনা: 21 ফেব্রুয়ারি 2024
- ফ্রিকোয়েন্সি: বার্ষিক
- ইতিহাস: 17 নভেম্বর 1999 তারিখে ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষিত, 2002 সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত
ভাষার গুরুত্ব:
ভাষা কেবল কথা বলার মাধ্যম নয় এটি আমাদের অস্তিত্বের প্রতিক, জ্ঞানের চাবিকাঠি। ভাষার মাধ্যমে আর আমরা আমাদের চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করি, জ্ঞান অর্জন করি এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি, ভাষা আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণ করে চলার পথে সহায়তা করে।
তাৎপর্য:
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে, বাংলাদেশে তরুণদের আত্মদান ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। পৃথিবীর বুকে বাংলায় একমাত্র ভাষা যার জন্য অসংখ্য মানুষ রক্ত ও ঝরেছে তাই এই ঐতিহাসিক দিনটি স্বাধীন বাংলাদেশের গৌরবের বিষয়।
১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট অবিভক্ত ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয় পাকিস্তান ছিল দুটি অংশ একটি পশ্চিম পাকিস্তান অপরটি পূর্ব পাকিস্তান। এই পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা আমাদের উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে।
১৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এক জনসভা গঠন করেন যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। একথা শুনে বাংলার দামাল ছেলেরা সাথেই এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই আবার ১৯৫২ সালের ৩০শে জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নাজিমউদ্দীন উদ্দিন ও এক জনসভায় দাম্ভিকতার সঙ্গে একই ঘোষণা দেন।
প্রতিবাদে ছাত্ররা ধর্মঘট পালন করে তারা ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল দশটায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। পুলিশ নিরস্তর ছাত্রীদের ওপর বন্দুক, বেয়নেট ,টিয়ার গ্যাস, আর লাঠিসো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল । এতে সালাম, বরকত, জব্বার ,রফিকসহ নাম জানা অনেক শহীদ ছিলেন। বিনিময়ের রক্ষা পেল সেই মাতৃভাষা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি:
প্রাথমিকভাবে 27 টি দেশ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালনে বাংলাদেশের প্রস্তাব্যের সমর্থন করে। ২৭ টি দেশের সমর্থন নিয়ে প্রস্তাবটি ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ৩০ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
বিশ্বব্যাপী পালন:
বাংলাদেশ, কানাডা, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।
দেশ | পালন |
---|---|
বাংলাদেশ | শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ পরিদর্শন, সামাজিক সমাবেশ, প্রতিযোগিতা, একুশে বইমেলা |
কানাডা | ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং ম্যানিটোবার মতো প্রদেশে ঘোষণা, ঘটনা এবং পালন |
ভারত | 22টি নির্ধারিত ভাষা এবং 234টি স্বীকৃত ভাষায় সামগ্রীর জন্য ডিজিটালাইজেশন উদ্যোগ |
যুক্তরাষ্ট্র | ওয়াশিংটন ডিসিতে মাতৃভাষা চলচ্চিত্র উৎসব |
যুক্তরাজ্য | লন্ডন এবং ওয়েস্টউডে শহীদ মিনারের প্রতিলিপিতে স্মৃতিচারণ |
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের শিকড় 1952 সালে বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলনে ফিরে আসে। আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল তৎকালীন পাকিস্তানি প্রদেশ পূর্ব বাংলায় বাংলা ভাষার জন্য স্বীকৃতি নিশ্চিত করা। 1952 সালের 21 ফেব্রুয়ারির মর্মান্তিক ঘটনা, যেখানে প্রতিবাদকারীরা তাদের মাতৃভাষার জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল, এই বিশ্বব্যাপী পালনের ঘটনাক্রমে প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করেছিল।
- 1952: বাংলা ভাষা আন্দোলন
- 1955: বাংলাদেশে প্রথম ভাষা আন্দোলন দিবস পালিত হয়
- 1999: ইউনেস্কো 21 ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে
- 2000: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্বোধনী উদযাপন
- 2002: ভাষাগত-বৈচিত্র্যের থিম, 3,000টি বিপন্ন ভাষা সমন্বিত
- 2008: ভাষার আন্তর্জাতিক বছর
- 2019: আদিবাসী ভাষার আন্তর্জাতিক বছর
- 2020: বার্ষিক থিম – “ভাষাগত বৈচিত্র্য রক্ষা করা”
- 2023: বার্ষিক থিম – “বহুভাষিক শিক্ষা: শিক্ষাকে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা”
- 2024: বার্ষিক থিম – “বহুভাষিক শিক্ষা – শিক্ষার একটি স্তম্ভ এবং আন্তঃপ্রজন্মীয় শিক্ষা”
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সূচনা: এই দিবসটি উদযাপনের ধারণাটি বাংলাদেশে উদ্ভূত হয়েছিল, যেখানে 21 ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করা হয় যে দিনটি বাঙালিরা তাদের ভাষার স্বীকৃতির জন্য লড়াই করেছিল। ইউনেস্কো কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে বসবাসকারী বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালামের একটি প্রস্তাবের ভিত্তিতে 17 নভেম্বর 1999 তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে 21 ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
গুরুত্বপূর্ণ নাম:
- রফিকুল ইসলাম: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তারিখ প্রস্তাব করেছেন
- আবদুস সালাম: রেজুলেশনের সহ-প্রস্তাবিত; ভাষা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করেন
- সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী: ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, ইউনেস্কোর নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন
- তোজাম্মেল টনি হক: ইউনেস্কো মহাসচিব ফেদেরিকো মেয়রের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা
ভাষাগত বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি দানকারী পুরস্কার:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বার্ষিক দুটি উল্লেখযোগ্য পুরস্কার প্রদান করা হয়, যা ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সম্প্রদায় সেবায় অসামান্য অর্জনের উপর জোর দেয়।
সারণী: পুরস্কার
পুরস্কার | বর্ণনা |
---|---|
লিঙ্গুয়াপ্যাক্স পুরস্কার | ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণে অসামান্য অর্জনকে স্বীকৃতি দেয় |
Ekushey Heritage Award | BHESA দ্বারা উপস্থাপিত, শিক্ষা, সামাজিক কাজ, এবং সম্প্রদায় পরিষেবাতে শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে |
উপসংহার:
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাষাগত বৈচিত্র্যের গুরুত্ব এবং সমস্ত ভাষা রক্ষা ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। পালন এবং পুরস্কারের মাধ্যমে, ব্যক্তি এবং সম্প্রদায় বিশ্বব্যাপী তাদের ভাষাগত ঐতিহ্য উদযাপন করে, বোঝাপড়া, সহনশীলতা এবং কথোপকথনকে উৎসাহিত করে।
[তথ্যসূত্র]
- জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাইক্রোসাইট
- ইউনেস্কো রেজুলেশন 61/266
- বাংলাদেশ হেরিটেজ অ্যান্ড এথনিক সোসাইটি অফ আলবার্টা (BHESA) ওয়েবসাইট
- লিঙ্গুয়াপ্যাক্স ইনস্টিটিউট ওয়েবসাইট
- ওয়াশিংটন, ডিসিতে মাতৃভাষা চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.