ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবনী
ISWARCHNDRA GUPTA
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সফল সাংবাদিক ও সম্পাদক এবং সমাজ সংস্কারক হিসেবেও তিনি পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট কবি তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের সাহিত্যকর্ম সমাজ সংস্কার মূলক কর্মকাণ্ড বাংলা সাহিত্যে যেভাবে প্রভাব ফেলেছিল।
আজকে তাই ওনাকে সম্মান জানিয়ে ওনার জীবনই আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১২১৮ সালের ৬ই মার্চ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কাঁচরাপাড়া ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল হরি নরায়ণ গুপ্ত। মাতার নাম ছিল শ্রীমতি দেবী তার পিতা পেশায় একজন একজন কবিরাজি চিকিৎসক ছিলেন।
শিক্ষা জীবন:
শৈশব থেকেই ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও মেধার অধিকারী ছিলেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা নিযোগ গ্রামের পাঠশালায় তিনি শুরু করেন। এবং তিনি পরবর্তীতে তিনি কলকাতার একটি স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি তার শিক্ষার পরিসর আরো প্রসারিত করে।
পেশা ও কর্মজীবন:
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রথমে শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেন। এরপর তিনি সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন এবং ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন এবং বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার প্রচলন করেন। তাঁর সম্পাদনায় ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকা জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এটি বাংলার প্রথম দৈনিক পত্রিকা হিসেবে পরিচিত হয়।
সাহিত্যকর্ম:
১৮৩১ সালে ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ‘সংবাদ প্রভাকর’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠিত করেন। এটি ছিল বাংলা ভাষার প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা যার সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সংবাদ প্রভাকরের মাধ্যমে তিনি সমাজের অসংগতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর এই পত্রিকার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। তার পত্রিকার সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, বিশেষত নারীদের অধিকার ও শিক্ষার প্রসারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সংবাদ প্রভাকরের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করার প্রচেষ্টা চালান যা ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ের বড় ভূমিকা পালন করে।
সাহিত্যকর্ম রচনাবলী:
ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবনকলে বিভিন্ন ধরনের রচনা প্রকাশিত হয়েছিল যেমন-
১• কবি রামপ্রসাদ সেন কলীকীর্তন(১৮৩৩)
২•কবি ভারতচন্দ্র রায় গুলো কারের জীবন বৃত্তান্ত (১৮৫৫)
৩• প্রবোধ প্রভাকর (১৮৫৮)।
তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয় হিত প্রভাকর১৮৬১, বোধেন্দুবিকাশ নাটক ১৮৬৩, সত্যনারায়ণের পাঁচালী, ভ্রমণকারীর বন্ধুর পত্র, বঙ্কিমচন্দ্র সম্পাদনা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের কবিতা গুলি ১৮৮৫ সালে প্রকাশিত হয়। কালিপ্রসন্ন বিদ্যারত্ন ঈশ্বর গ্রন্থাবলী ১৮৯৯ সালে প্রকাশ করেন।
বাংলা সাহিত্যে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের অবদান:
ডক্টর শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ঊনবিংশ শতাব্দীর গীতি কবিতা সংকলন গ্রন্থে ঈশ্বর গুপ্তের কাব্য সমূহ ছয়টি ভাগে ভাগ করেছেন – নৈতিক ও পারর্মাথিক কবিতা, সমাজ প্রীতিমূলক কবিতা, প্রেম রসাত্মক কবিতা, তুচ্ছ বিষয়বস্তু অবলম্বনে কবিতা, তবে এই বিপুল রচনার সমূহের মধ্যে খুব কম লেখাই শেষ পর্যন্ত পদ্মের তরলতা ছাড়িয়ে কবি হতে পেরেছেন তিনি।
বল দেখি এ জগতে ধার্মিক কে হয়,
সর্ব জীবে দয়া যার ধার্মিক সে হয়।
বল দেখি এই জগতে সুখী বলি কারে।
সততা আরোহী যেই সুখী বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে বিজ্ঞ বলি কারে।
হিতাহিত বোধ যার, বিজ্ঞ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে ধীর বলি কারে,
বিপদে যে স্থির থাকে ধীর বলি তারে।
বল দেখি, এ জগতে মূর্খ বলি কারে।
নিজ কার্য নষ্ট করে, মূর্খ বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে সাধু বলি কারে।
পরের যে ভালো করে, সাধু বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে জ্ঞানী বলি কারে।
নিজ বোধ আছে যার, জ্ঞানী বলি তারে।
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বাংলা কবিতা ও গদ্য রচনায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর রচনা সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব ছিল। তিনি তৎকালীন সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও দুর্নীতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর লেখনীতে সত্য, ন্যায় ও মানবতার প্রতি অগাধ বিশ্বাস প্রকাশ পেয়েছে।
কাব্য সাহিত্য:
ঈশ্বর ঈশ্বরচন্দ্রের গুপ্ত বিপুল সংখ্যা কবিতা কে আমরা প্রকৃতি, ঈশ্বর তত্ত্ব, নীতি তত্ত্ব, স্বদেশ প্রেম, নারী প্রেম ও সমসাময়ী ঘটনা এই ছয়টিভাবে বিভক্ত করেছি। তার মধ্যে নারী প্রেম ও নীতি তত্ত্ব বিষয়ক কবিতায় ভারতচন্দ্র নিন্দনীয় প্রভাব সূচিত হয়েছে। ঈশ্বর তত্ত্ব বিষয়ক কবিতা গুলি ভক্তি ও নীতির বাধা পথে রচিত।
সমাজ গঠনে ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত:
আধুনিক বাংলা সমাজ গঠনে সংবাদ প্রভাকরের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত নবভঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের বিরুদ্ধে রক্ষণশীল পক্ষভুক্ত ছিলেন। তিনি হিন্দু কলেজের শিক্ষক পদ্ধতির বিরোধিতা করেছিলেন। এবং নবপর্যায়ে সংবাদ প্রভাকর সম্পাদনার সময় থেকে তার মনোভাব পরিবর্তন হতে থাকে। তিনি দেশের প্রগতিশীল ভাব দ্বারা সঙ্গে যুক্ত নিজেকে যুক্ত করেন। প্রথমদিকে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলনে বিরোধিতা করে এ বিষয়ে নানা ব্যঙ্গ রচনা করলেও পরের স্ত্রী শিক্ষার সমর্থন, ধর্মসভার বিরোধিতা দেশের বিজ্ঞান ,ও বাণিজ্যিক উন্নয়নের প্রচেষ্টা দরিদ্র জনগণের সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে উদ্ধার পরিচয় দেন।
শেষ জীবন ও মৃত্যু:
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তার জীবনের শেষ জীবন গুলি বেশ কষ্টের মধ্যে কাটিয়েছিলেন। বিভিন্ন আর্থিক শারীরিক অসুবিধার কারণে তার জীবনের শেষ জীবন ছিল বেশ কষ্টকর। ১৮৫৯ সালে ২৩ শে জানুয়ারি তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার সাহিত্যকর্ম সমাজ সংস্কারের প্রচেষ্টা আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
উপসংহার:
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন একজন মহান সাহিত্যিক সাংবাদিক ও সমাজ সংস্কারক তার জীবনের প্রতিটি দিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তার রচনা সাহিত্যকর্ম গুলি বাংলা সমাজ ও সংস্কৃতি বিকাশের অসামান্য অবদান রেখেছে। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবন ও কাজের বিশেষণ আমাদের সমাজের বিভিন্ন অসংগতি ও দুর্বলতার বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রেরণা যোগায়।
ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়, আমাদের দেখায় যে সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব। তার সাইটের মাধ্যমে তিনি সমাজের অসঙ্গতি ও দুর্বলতা প্রকাশ করেছিলেন এবং এর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। তার জীবন ও কাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের দেখিয়েছেন যে সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজের পরিবর্তন ও উন্নতি সম্ভব।
ইশ্বরচন্দ্র ও গুপ্ত ছিলেন একজন মহান সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারকে যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী, ও সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন। ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত জীবনী লেখার মধ্যে কোন যদি ভুল থাকে ক্ষমা করে দেবেন।
আরো নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখুন এবং আমাদের এই ওয়েবসাইটে সাথে থাকুন।
।।ধন্যবাদ।।
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.