“আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…”
–জসীমউদ্দীন
পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের জীবনী
Biography of Jasimuddin
জসীমউদ্দীন , পল্লী কবি বা ‘যাজক কবি’ হিসাবে স্নেহের সাথে স্মরণ করা হয়, বাংলা সাহিত্যের এক বিশাল ব্যক্তিত্ব, গ্রামীণ জীবন ও প্রকৃতির তার মর্মস্পর্শী চিত্রায়নের জন্য উদযাপন করা হয়। আসুন এই সাহিত্যিক আলোকিত ব্যক্তির জীবন এবং কাজ সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করি।
পল্লী কবি জসীমউদ্দুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, আপনাদের সবার সামনে আমি তার জীবনী উপস্থাপন করছি ।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
- জসীমউদ্দিন ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আনসারউদ্দিন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুল-শিক্ষক। তার মা আমিনা খাতুন (রাঙ্গাছুট) ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।
শিক্ষা জীবন:
- তিনি 1921 সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন করেন । জসীমউদ্দীন 1924 সালে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ সম্পন্ন করেন। তিনি 1929 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বিএ এবং 1931 সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন
- বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন, জসীমউদ্দীনের কাব্যিক দক্ষতা তার উল্লেখযোগ্য রচনা “কবর” (দ্য গ্রেভ) এর মাধ্যমে উজ্জ্বল হয়েছিল, যা বাংলা সাহিত্যের একটি অংশ হয়ে ওঠে।
সাহিত্যিক অবদান:
- জসীমউদ্দীনের রচনা কবিতা, গীতিনাট্য, গান, নাটক, উপন্যাস, গল্প, স্মৃতিকথা এবং ভ্রমণকাহিনী সহ বিভিন্ন সাহিত্যিক রূপকে ধারণ করে।
- “নকশী কাঁথার মঠ” এবং “সোজন বাদিয়ার ঘাট” মাস্টারপিস হিসাবে সমাদৃত তার আধুনিক গীতি গাথাগুলির জন্য তিনি বিখ্যাত।
- বাংলার লোককাহিনীতে গভীরভাবে প্রোথিত তাঁর কবিতা গ্রামীণ জীবনের সারমর্মকে স্পষ্টভাবে ধারণ করে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পাঠকদের কাছে অনুরণিত হয়।
একাডেমিক এবং পেশাগত ক্যারিয়ার:
- শিক্ষা সমাপ্ত করার পর জসীমউদ্দীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীনেশ চন্দ্র সেনের অধীনে রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেন।
- 1938 সালে, তিনি তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে স্থানান্তর করার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন, যেখানে তিনি 1962 সালে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব:
- জসীমউদ্দীন সমাজতন্ত্র এবং বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন প্রবল সমর্থক ছিলেন, যিনি 1950 এবং 1960 এর দশকের প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অবদান রেখেছিলেন।
- সামাজিক কারণ এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি তাকে প্রাইড অফ পারফরম্যান্সের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার এবং একুশে পদকের মতো প্রশংসা অর্জন করেছে।
ব্যক্তিগত জীবন এবং উত্তরাধিকার:
- জসীমউদ্দীন বেগম মমতাজ জসীমউদ্দীনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তার পাঁচ সন্তান ছিল।
- তিনি 14 মার্চ 1976 সালে মৃত্যুবরণ করেন, একটি সমৃদ্ধ সাহিত্যিক উত্তরাধিকার রেখে যান যা বিশ্বব্যাপী পাঠকদের কাছে অনুপ্রাণিত এবং অনুরণিত করে চলেছে।
- ফরিদপুরের গোবিন্দপুরে জসীমউদ্দীনের পৈতৃক বাড়িটি তার স্মৃতির প্রমাণ হিসাবে কাজ করে, তার জন্মদিনের স্মরণে বার্ষিক জসিম মেলার আয়োজন করে।
প্রধান কাজ:
- “নকশী কাঁথার মঠ”
- “সোজন বাদিয়ার ঘাট”
- “বেডার মেই”
- “পদ্মপাড়” (নাটক)
- “বোবা কাহিনী” (উপন্যাস)
- “ছোলে মুসাফির” (ভ্রমণ কাহিনী)
- এবং আরো অনেক…
সন্মান ও পুরষ্কার:
- প্রাইড অফ পারফরমেন্সের জন্য রাষ্ট্রপতির পুরস্কার (1958)
- একুশে পদক (1976)
- স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (1978)
জসীমউদ্দীনের সাহিত্যের উত্তরাধিকার বাংলার সাংস্কৃতিক টেপেস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করে চলেছে, তার উদ্দীপক পদাবলী এবং গ্রামীণ জীবনের গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। আমরা যখন তাঁর অবদানকে উদযাপন করি, তখন আসুন আমরা পল্লী কবির শব্দের স্থায়ী অনুরণনকে লালন করি, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
উথালি পাথালি আমার বুক…আমার, মনেতে নাই সুখরে…
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
কুলনাই সীমা নাই অথই দরীয়ায় পানি
দিবসে নীশিথে ডাকে দিয়া হাত ছানিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
পানসা জলে সাই ভাসায়ে, সাগরেরও বানে
আমি জীবনের ভেলা ভাসাইলাম..
জীবনের ভেলা ভাসাইলাম কেউনাতাজানেরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
আসমান চাহে দরিয়া পানে, দরিয়া আসমান পানে
আসমান চাহে দরিয়া পানে, দরিয়া আসমান পানে
আরে লক্ষ বছর পার হইলো
লক্ষ বছর পার হইলো কেউনাতাজানেরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
কুলনাই সীমা নাই অথই দরীয়ায় পানি
দিবসে নীশিথে ডাকে দিয়া হাত ছানিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
আমায় ডুবাইলিরে আমায় ভাসাইলিরে
অকুল দরীয়ায় বুঝি কুল নাইরে…
কুল নাই…সীমা নাই…নাইরে..কুল নাই…সীমা নাই…
গানের শিরোনাম
- “কাজল ভ্রমোরা রে”
- আমার সোনার ময়না পাখি
- আমার গোলর হার খুলে নে
- আমার হর কালা কোরলাম রে
- অমে ভাষালী রে
- অমায় ইতো রাতে
- কেমন তোমার মাতা পিঠা
- নদির কুল নাই কিনার নাই
- হে বন্ধু রঙ্গিলা
- রঙ্গিলা নায়ের মাঝি
- নিশতে যাইও ফুল বনে, হে ভোমোরা
- হে বাজান চল জাই মাঠে লাঙ্গোল বৌতে
- প্রাণো শখী রে ঐই জ্বলে কদম্ব তোলে
- ও আমার দরোদি বয়স জানলে
- বাশারী আমার হারাই গিয়াছে
- বালু ছারের মিয়া
- বাদল বাশি ওরে বান্ধু
- গাঙ্গের কুলরে গেলো ভাঙ্গিয়া
- ও তুই যারে আগত হনলিরে মোনে
- হে আমার গহীন গানের নয়া
- অমর বন্ধু বিনোদিয়া
এই ব্লগটি জসীমউদ্দীনের জীবন, কাজ এবং উত্তরাধিকারকে ধারণ করে, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তার উল্লেখযোগ্য অবদান তুলে ধরা হোলো।
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.