কামিনী রায়ের জীবনী
Biography of Kamini Roy
এদের তো বলেছেন নিজে ভগবান
নবরূপে দিয়েছেন চেতনা ও প্রাণ
সুখে দু:খে হাঁসে কাঁদে স্নেহে প্রেমে গৃহ বাঁধে
বিধে শল্যসম হৃদে ঘৃণা অপমান
জীবন্ত মানুষ এরা মায়ের সন্তান
এরা যদি অপমানারে শেখে সম্মানিতে
এরা দেশ- ভক্ত রূপে জন্মভূমিতে হিতে
মরনে মানিবে ধর্ম বাক্য নহে দিবে- কর্ম
আলস্য বিলাস আজও ইহাদের চিতে
পারেনি বাঁধিতে বাসা পথ ভুলাইতে।।
এরা হতে পারে দ্বিজ- যদি এরা জানে
এরা কি সভয় সারি, রহে ব্যবধানে?
এরা হতে পারে, বীর ,এরা হতে পারে শির
জননীর ভগিনীর পত্নীর সম্মানে
ভবিষ্যের মঙ্গলের স্বপ্নেও ধ্যানে
‘এরা যদি জানে ‘
উচ্চকূলে জন্ম বলে কতদিন আর
ভাই বিপ্র রবে তবে এই অহংকার
কৃতান্ত সে কুলীনের রাখো না তো মান,
তার কাছে দ্বিজ শূদ্র পারীয়া সমান
তার স্পর্শে যেই দিন পঞ্চভূতে দেহলীন
ব্রাহ্মনে চন্ডালে রহে কত ব্যবধানে?
বাংলা সাহিত্যে আর অন্যান্য প্রতিভাময়ী কবি কামিনী রায়, জীবনের বহুমুখী ডাক থেকে বেরিয়ে এসে তার ভাবনার যাত্রা মানব মনের সুখ দুঃখকে ঘিরে বেড়ে উঠেছে কামিনী রায় কবিতা ,গদ্য,সাহিত্য ভাবনা জীবন চরিত নিয়ে বাংলা সাহিত্যে এক পূর্ণাঙ্গ সংগ্রহ।
আজকে কামিনী রায়ের জীবনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
১২ অক্টোবর ১৮৬৪ বাসন্ডা, বাকেরগঞ্জ (বর্তমানের ঝালকাঠি জেলার অংশে কামিনী রায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন চণ্ডীচরণ সেন তিনি ছিলেন একজন ব্রহ্মধর্মালম্বী, বিচারকও ঐতিহাসিক লেখক ছিলেন তিনি। তিনি১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মধর্মে দীক্ষা লাভ করেন।
শিক্ষা জীবন:
কামিনী রায়ের প্রাথমিক শিক্ষার ভার তার পিতা চণ্ডীচরণ সেন নিজেই গ্রহণ করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তাকে স্কুলে ভর্তি করে বোডিংয়ে প্রেরণ করেন , ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতা বেথুন স্কুল হতে এন্ট্রাস (মাধ্যমিক) পরীক্ষা ও ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে এফ. এ ফার্স্ট আর্টস (উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বেথুন কলেজ হতে তিনি ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম নারী হিসেবে সংস্কৃত ভাষায় ডিগ্রি লাভ করেন কামিনী রায়।
কর্মজীবন:
স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর ১৮৮৬ সালেই তিনি বেথুন কলেজে বিভাগের স্কুল শিক্ষিকা পদে নিযুক্ত হন তিনি। পরবর্তীকালে তিনি ওই কলেজে অধ্যাপনাও কাজ করেছিলেন সেই সময়ে কামিনী রায় নারীবাদে বিশ্বাসী ছিলেন অনেক প্রবন্ধ প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। তিনি সেই সময় নারী শ্রম তদন্ত কমিশন ১৯২২-২৩ এর সদস্য ছিলেন।
সাহিত্যকর্ম:
শৈশবে তার পিতামহ তাকে কবিতা ও তোস্ত আবৃত্তি করতে শেখাতেন। এভাবেই খুব কম বয়স থেকে কামিনী রায় সাহিত্য রচনা করেন ও কবিত্ব শক্তির স্ফুরণ ঘটান , তার জননী তাকে বর্ণমালা শিক্ষা দিতেন কারণ তখনকার যুগে হিন্দু পুরমহিলাগনের লেখাপড়া শিক্ষা করাকে একান্তই নিন্দনীয় ও গহিত কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লিখতেন। কামিনী রায়ের রচিত কবিতা গুলি মধ্যে রয়েছে জীবনের সুখ -দুঃখ আশা- আকাঙ্ক্ষা আনন্দ-বেদনা সহজ সরল ও সাবলীল প্রকাশ ঘটেছে। কামিনী রায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ আলোছায়া প্রকাশিত হয় ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে। এই গ্রন্থটি ভূমিকা লিখেছিলেন হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু প্রথমে এতে গ্রন্থকর্ত্রী হিসাবে কামিনী রায়ের নাম প্রকাশিত নাই। গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে তার কবি খাতি ছড়িয়ে পড়ে । কামিনী রায়ের লেখা উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ গুলির মধ্যে রয়েছে
•আলোছায়া (১৮৮৯),
• নির্মাল্য (১৮৯১)
•পৌরাণিকী (১৮৯৭)
• মাল্য ও নির্মাল্য (১৯১৩)
•দীপ ও ধূপ (১৯২৯)
অমৃতত্রাক্ষর ছন্দের রচিত মহেশ্বতা ও পুণ্ডরিক এর তার দুটি প্রসিদ্ধ দীর্ঘ কবিতা এছাড়াও ১৯০৫ সালে তিনি শিশুদের জন্য গুঞ্জন নামের কবিতা সংগ্রহ ও প্রবন্ধ বালিকা শিক্ষার আদর্শ রচনা করেন। কামিনী রায় সবসময় অন্য সাহিত্যিকদের উৎসাহ দিতেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি বরিশাল সফরের সময় কবি সুফিয়া কামাল কে লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে বলতেন
সম্মাননা:
১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃক কামিনী রায় কে জগতওরিণী পদক প্রদান করে সম্মানিত করেন। কামিনী রায় ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় লিটারারি কনফারেন্সে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত ছিলেন। ১৯৩২ -৩৩ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন কামিনী রায়
মহাপ্রায়ান:
জীবনের শেষ ভাগে তিনি হাজারীবাগে বাস করতেন। ২৭শে সেপ্টেম্বর ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কামিনী রায়ের জীবনাবাসন ঘটে।
Source: Biography of Kamini Roy
Image Source: Kamini Roy – Wikipedia
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.