বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর জীবনী
Khudiram Bose biography in Bengali
” একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,
হাসি হাসি পরব ফাঁসি
দেখবে ভারতবাসী
আমি হাসি হাসি পরবো ফাঁসি
দেখবে ভারতবাসী
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি”।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অনেকে নানাভাবে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন হলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। তিনি বাংলার প্রথম শহীদ।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
মেদিনীপুর জেলায় ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ক্ষুদিরাম বসু জন্ম গ্রহণ করেন। বাবার নাম ছিল ত্রৈলোক্যনাথ বসু। মায়ের নাম ছিল লক্ষ্মীপ্রিয়া। তার দিদি তাকে খুদের বিনিময়ে নিয়েছিলেন বলে তার নাম হয়েছিল ক্ষুদিরাম।
ক্ষুদিরাম বসুর শিক্ষাজীবন:
সাত বছর বয়সে পাঠশালায় ক্ষুদিরাম বসু শিক্ষা শুরু করেন। তারপর তিনি ভর্তি হন তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে। সেখান থেকে চলে এসে তিনি মেদিনীপুরে কলেজিয়েট স্কুলে পড়েন। ওই স্কুলের শিক্ষক বালক ক্ষুদিরামের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলেন।
ক্ষুদিরামের কর্মজীবন:
ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন একজন প্রাণদরদী ও ভালবাসার মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখলে তার প্রাণ কেঁদে উঠতো। জনগণের সেবায় ছিল তার কাছে পরমব্রত। প্রকৃতির নানান দুর্যোগের সময় মানুষের সাহায্যের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করে দুটি অন্যের ব্যবস্থা করতেন। দেশসেবা ও মাতৃ জননী ভারত মায়ের স্বাধীনতা দাবিতে বিপ্লবী সংগঠনের যুক্ত হয়ে জীবন উৎসর্গ করেন।
বিপ্লবী জীবন:
মেদিনীপুরের গুপ্ত বিপ্লবীর সমিতির সদস্য হয়ে তিনি বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ব্যায়ম ওর নানা রকম খেলাধুলার মাধ্যমে তিনি নিজেকে বিপ্লবের উপযোগী করে গড়ে তোলেন। এক সময় তার ওপর কিংসফোর্ড সাহেব কে হত্যার দায়িত্ব দেয়া হয়। কিংসফোর্ড সাহেব ছিলেন একজন অত্যাচারী বিচারক। তাকে হত্যার জন্য ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকী মজঃফরপুর যাত্রা করেন। সেখানে কিংসফোর্ড সাহেবের গাড়ি লক্ষ্য করে তারা বোমা ছুঁড়েন। কিন্তু সেই গাড়িতে কিংসফোর্ড সাহেব ছিলেন না। সেই গাড়িতে মারা পড়লেন অন্য দুজন ইংরেজ মহিলা। এদিকে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই প্রফুল্ল চাকী আত্মহত্যা করলেন। ক্ষুদিরাম বসু ধরা পড়লেন এবং তার ফাঁসির আদেশ হল।
মেলা এবং ক্ষুদিরামের অভিযোগ:
১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরে একটি শিল্প মেলা বসলো। মেলায় সোনার বাংলা নামে বিপ্লবী পুস্তিকা বিলি করতে গিয়ে কিসি শিল্প প্রদর্শনী মেলায় ক্ষুদিরামের প্রথম রাজনৈতিকভাবে উপযুক্ত হন। ক্ষুদিরামের হঠাৎ সেই সময়ে পুলিশের বাধা পেয়ে তার বুকে এক প্রচন্ড আঘাত করে পালিয়ে গেলেন।
অত্যাচার এবং মুক্তি:
কোন তথ্য প্রকাশ করেননি। মুখ বুজে সবই সহ্য করলেন। তখন সরকার ক্ষুদিরাম কে ছেড়ে দিতে বাধ্য হল। এরপর থেকে তার নাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলা বিপ্লবীদের মধ্যে তার প্রশংসা শুনে সরকারের কাছে বিপ্লবীদের ভয় জাগরিত হয়।
সংগ্রামী জীবন:
ক্ষুদিরাম বসু তার শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বোস এর নিকট হতে এবং শ্রীমদ্ভগবত গীতা পড়ে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে বিপ্লব করতে অনুপ্রাণিত হন। তিনি বিপ্লবী রাজনৈতিক দল যুগান্তরে যোগ দেন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম পুলিশ স্টেশনের কাছে বোমা পুঁতে রাখেন এবং ইংরেজ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করেন। একের পর এক বোমা হামলার দায়ে তাঁকে আটক করা হয়। ৩০ শে এপ্রিল ১৯০৮ মজঃফরপুর, বিহারে রাতে সাড়ে আটটায় ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল যৌথভাবে ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে কিংসফোর্ড হত্যা পরিকল্পনায় বোমা ছুঁড়তে গাড়িতে উপস্থিত। জৈনক ব্রিটিশ মিসেস কেনেডি এবং তার কন্যা মিস কেনেডিকে হত্যা করেন।
ক্ষুদিরামের ফাঁসি:
ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে তিনজনকে হত্যার দায় অভিযুক্ত ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয় ২১শে মে ১৯০৮ তারিখে যা আলিপুর বোমা মামলা নামে পরিচিত হয়। সেই দিন খুব ভরে ক্ষুদিরাম উঠে পড়লেন। তিনি ভাবছিলেন তাকে এই পৃথিবী ছেড়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নিতে হবে। অথচ সবাইকে ছেড়ে যেতে তার মন চাইছিল না কিন্তু নির্ভীক হৃদয়ে তিনি হাসির জন্য তৈরি হলেন। মনের মধ্যে তিনি যেন একটা শক্তির সন্ধান পেয়েছিলেন। তাই তিনি ফাঁসি মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি ছিলেন নির্ভীক। হাসিমুখে ফাঁসি দড়ির গলায় দিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন।
সবাই দেখে তো অবাক হয়ে গেল। হাসতে হাসতে মরণকে বরণ করা ক্ষুদিরামের পক্ষেই সম্ভব হয়েছিল। কারণ তিনি দেশকে এতই তাই ভালোবাসতেন যা দেশের স্বাধীনতা আনার জন্য সব কিছু ত্যাগ স্বীকার করা তার পক্ষে কঠিন ছিল না। দেশমাতৃকার পায়ে নিজের প্রান আহুতি দিয়ে অমর হয়ে রইলেন।
ক্ষুদিরাম হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি গলায় পরলেন। সেই দিনটি ছিল ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই আগস্ট ক্ষুদিরাম ছিলেন নির্ভীক, দেশ প্রেমিক। তার মৃত্যু নেই। তাই তিনি ভারতবাসীর হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন।
বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর পোস্ট যদি ভালো লেগে থাকে। যদি আপনাদের সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী, সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন।
আরো নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটের চোখ রাখুন এবং আমাদের সাথে থাকুন।
।।ধন্যবাদ।।
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.