Krittibas OjhaKrittibas Ojha

কৃত্তিবাস ওঝা জীবনী

KIRTIBAS OJHA 


কৃত্তিবাস ওঝা ছিলেন ১৫ শতকে  বিখ্যাত বাংলা কবি, যিনি মূলত তার কৃত্তিবাসী রামায়ণ এর জন্য বিখ্যাত। এটি বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম সম্পূর্ণ রামায়ণ। এটি বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম সম্পূর্ণ রামায়ণ। তার জীবনের বিবরণ খুব সামান্য হলো নিম্নলিখিত বিবরণ তার জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরব।

ও আদিত্যবার শ্রী পঞ্চমীর পূর্ণ মাঘ মাস।।

তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস।।

প্রাথমিক জীবন: 

কৃত্তিবাস ওঝা জন্মগ্রহণ করেন ১৮৩১ সালে (বাংলা ৭৮৮ বঙ্গাব্দ) অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার ফুলিয়া গ্রামে ,জন্ম সরস্বতী পূজার দিন। তার পিতা ছিলেন বনমালী ওঝা। এবং পিতামহ মুরারি ওঝা ছিলেন শাস্ত্রজ্ঞ পন্ডিত।

প্রাথমিক সাহিত্যচর্চা:

কৃত্তিবাস ওঝার প্রাথমিক শিক্ষা তার গ্রামের পাঠশালাতে শুরু হয়েছিল। কৃত্তিবাস ওঝা শৈশব থেকেই এ সংস্কৃত ভাষায় অত্যন্ত দক্ষ ছিল। তার পিতা তাকে বেদ পুরান ও অন্যান্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থ করানোর জন্য বিখ্যাত পন্ডিতদের কাছে পাঠান। শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ ও পন্ডিতের প্রতি নিষ্ঠা তাকে  একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত করে তোলে।

কৃত্তিবাসী রামায়ণ মূলত বাল্মিকী রামায়ণের উপর ভিত্তি করে রচিত হলেও, কৃত্তিবাস এই মহাকাব্য বাংলা নিজস্ব ভাবধারা ও স্থানীয় সংস্কৃতি সংযোজন করেছেন। তার লেখনীতে বাংলার গ্রামের ছবি, বাংলার মানুষের দৈনন্দিন জীবন এবং তাদের আচার-আচরণের প্রতিফলন ঘটেছে। তাইতো আর রামায়ণ কাব্য বাংলা ভাষা  মানুষের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলে।

কৃত্তিবাসী রামায়ণে ভাষা ও শৈলী: 

কৃত্তিবাসী রামায়ণের ভাষা ছিল সহজ, প্রাঞ্জল অসাধারণ মানুষের বোধগম্য। তিনি সংস্কৃতের জটিলতা থেকে দূরে থেকে সরল বাংলা ভাষায় রচনা করেছেন। তার অনুবাদ কাজ বাংলা ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। বাংলার গ্রামাঞ্চলের কৃত্তিবাসী রামায়ণের আসর বসতে শুরু করে। যেখানে মানুষ এই মহাকাব্য পাঠ করে শোনাতেন।

কৃত্তিবাসের মৌলিকতা: 

কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাঙালি খুঁজে পেয়েছে তার হৃদয়ের ভাষা ও প্রাণের আকুতি। সংস্কৃত রামায়ণের কাহিনী, প্রেক্ষাপট ও চরিত্রগুলি অবিকৃত রেখে কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাঙালির জীবনধর্মকে মন্ডিত করে ফেলেছে।

কৃত্তিবাসী রামায়ণে বাঙালিয়ানার পরিচয়:

কৃত্তিবাসী রামায়ণের বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে ছায়াপাত ঘটেছে। রাম লক্ষণের সৌভ্রাতৃত্ব, সীতার সর্বসংহ দুঃখময় বধূজীবন, হনুমানের দাস্যভক্তি, সুগ্রীব বিভীষনের দাস্যভক্তি, সুগ্রীব বিভীষণ সৌহার্দ্য বাঙালির ঘরের জিনিস হয়ে উঠেছে। কৃত্তিবাসি রামায়ণের চরিত্রগুলি কাশি কৌশল মগধ বিদিশা পরিত্যাগ করে বাঙালির গৃহঙ্গনে অবতীর্ণ। কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাঙালির মন নিয়ে বাঙালির মতো করে বাঙালি জীবনের মহাকাব্য রচনা করেন।

কৃত্তিবাসী রামায়ণ এর বৈশিষ্ট্য: 

বাঙালি ও বাংলার কবি কৃত্তিবাস বাল্মিকৃত সংস্কৃত রামায়ণের কাঠামোর মধ্যে নিজের কবি কল্পনাকে মূর্ত করে বাঙালির মন দিয়ে বাঙালির মতো রামায়ণ রচনা করেছেন। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য বাঙালির  বৈষ্ণবীয় ভক্তিবাদ। কৃত্তিবাসী রামায়ণের কয়েকটি বিশিষ্ট অংশ কোন কবি রচনা বলে পন্ডিতগণ মনে করেন সে বিষয়ে প্রচলিত কৃত্তিবাসী রামায়ণের কয়েকটি বিশিষ্ট অংশ- যেমন- অঙ্গ রায়বার, তরণীসেন বধ ইত্যাদি।

কৃত্তিবাসের কাব্যমূল্য বিচার:

কৃত্তিবাসি রামায়ণ বাল্মিকীর শিল্প রূপ তথা কাব্য মূল্য খোঁজা বৃথা। কৃত্তিবাস বাল্মিকী নন। কৃত্তিবাসী রামায়ণের কৃত্তিবাসী স্বরূপে বিচার করতে হবে। বাংলাদেশের পরিচিত জীবন থেকে লৌকিক উপমা রূপক কাজী ব্যবহার করে কৃত্তিবাসী বক্তব্যকে খুবই তির্যক ও তীক্ষ করে তুলেছেন। অলংকার প্রয়োগে কবির কৃতিত্ব এই যে সংস্কৃত অলংকারের সঙ্গে দৈনন্দিন বাঙালির জীবন স্থান পেয়েছে। ফলে কৃত্তিবাসী সৃজনশীল প্রতিভা শিল্প সৌকার্যে মূর্ত হয়ে উঠেছে।

সাহিত্যে কীর্তি:

১• কৃত্তিবাসী রামায়ণ।

২• অযোধ্যা কান্ড

৩• অরণ্যকান্ড

৪• সুন্দর কান্ড

৫• লঙ্কাকান্ড

৬• উত্তরাকান্ড

শ্রীরাম পাঁচালী: 

মৌলিক অংশসমূহ:

বীরবাহুর যুদ্ধ

তরণীসেনের কাহিনী

মহিরাবণ অহীরাবনের এর কাহিনী

রামের অকালবোধন।

মৃত্যুপথযাত্রী রাবণের কাছে রামচন্দ্র শিক্ষা।

সীতা রাবণ মূর্তি অঙ্কন ও রামের সন্দেহ।

লব কুশের যুদ্ধ।

বাঙালির জীবনের জনপ্রিয়তার কারণ: 

বাঙালি জাতির অন্তরে কৃত্তিবাসী রামায়ণ চিরস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করেছে। আর্য রামায়ণ যেমন প্রাচীন ভারতবর্ষকে রক্ষা করেছিল তেমনি কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাংলাদেশকে শান্ত স্নিগ্ধ জীবনাদর্শের মধ্যে নির্ভয় আশ্রয় দিয়েছে। সেই জন্য বাঙালি জীবনের ওপর দিয়ে নানার সংকট ও ঝড়-ঝঞ্ঝা বয়ে গেলেও জীবনের মূল্য সম্বন্ধে এ জাতির আমূল মানসিক পরিবর্তন হয়নি। বাঙালি দৈনন্দিন জীবন এও মানসিক ঐতিহ্যের প্রতিটি পর্যায়ে কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রভাব জড়িয়ে গেছে।

ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু: 

কৃত্তিবাস ওঝার সম্পর্কে ব্যক্তিগত জীবনের খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না তার জীবনের শেষ সময় সম্পর্কে তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। তবে ধারণা করা যায় তিনি ১৯৬১ সালের বাংলার ৯৬৮ বঙ্গাব্দ। দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার: 

কৃত্তিবাস ওঝার জীবন ও কাজ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি গৌরবময় অধ্যায়। তার কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাংলা ভাষায় ধর্মীয় সংস্কৃতিক ভাবনার বিকাশে অন্যান্য ভূমিকা পালন করেছে। তার সৃজনশীলতা ও স্থায়িত্ব প্রতিভা বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

কৃত্তিবাস ওঝার জীবনী যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী ও সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন। লেখার মধ্যে কিছু ভুল থাকলে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আরো নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন। 

।।ধন্যবাদ।।

 


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content