মদনমোহন মালব্য জীবনী
Madan Mohan Malaviya
মদনমোহন মালব্য ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং সমাজ সংস্কারক। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান গুলির মধ্যে একটি হলেও কাশি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। যা আজও ভারতের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন প্রধান নেতা ছিলেন এবং তার কর্মজীবন জুড়ে জাতীয়তাবাদ, শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়নের পক্ষে কাজ করে গেছেন।
আজকে তারই জীবনই আপনাদের সামনে আস তুলে ধরবো।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
মদনমোহন মালব্য ১৮৬১ সালের ২৫শে ডিসেম্বর ভারতের এলাহাবাদের এক গৌড ব্রাহ্মণ পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন মদনমোহন মালব্য। তার পিতার নাম ছিল পন্ডিত ব্রিজ নাথ মায়ের নাম মুনা দেবী। মদনমোহন মালব্য পিতা পেশায় একজন সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন। মদনমোহন মালব্য ধর্মীয় ও পাণ্ডিত্যপূর্ণ পরিবেশে বড় হয়ে ওঠেন মদনমোহন মানব পরিবেশের বড় হয়ে ওঠেন।
শিক্ষাজীবন:
মদনমোহন মালব্য প্রথমে সংস্কৃত পাঠশালা পড়ে একটি ইংরেজি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেন। তুমি পড়াশোনা শুরু করেছিলেন হরদেবের ধর্মজ্ঞানপদেশ পাঠশালায়। এখনো তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে পরে বিদ্যাবর্ধনি সভার একটি বিদ্যালয়ের পড়াশোনা করেন। পরে ভর্তি হন এলাহাবাদ জেলা স্কুলে।
সাংবাদিকতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠা:
মদনমোহন মালব্য একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকও ছিলেন। তিনি “হিন্দুস্তান” ও “অভ্যুদয়” নামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং “দ্য লিডার” নামক একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাও প্রতিষ্ঠা করেন। তার লক্ষ্য ছিল জাতীয়তাবোধ এবং শিক্ষার প্রসার। শিক্ষার প্রতি তার গভীর আগ্রহ এবং প্রতিশ্রুতি তাকে ১৯১৬ সালে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (BHU) প্রতিষ্ঠায় প্রণোদিত করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আজও ভারতের অন্যতম প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।
রাজনৈতিক জীবন:
মদনমোহন মালব্য ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন এবং চারবার (১৯০৯, ১৯১৩, ১৯১৯ এবং ১৯৩২ সালে) কংগ্রেসের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি স্বরাজ (স্বশাসন) আন্দোলনের একজন শক্তিশালী সমর্থক ছিলেন এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি অহিংসার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষে ছিলেন এবং মহাত্মা গান্ধীর আদর্শের সঙ্গে সহমত পোষণ করতেন।
কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (BHU) প্রতিষ্ঠা:
মদনমোহন মালব্যের সবচেয়ে স্মরণীয় অবদান হলো কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। তার স্বপ্ন ছিল ভারতের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশ্বমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, যা তাদের নৈতিক, ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রদান করবে। BHU আজও সেই লক্ষ্য পূরণের পথে অবিচল রয়েছে এবং এশিয়ার বৃহত্তম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত।
সামাজিক কার্যক্রম ও হরিজন আন্দোলন:
মালব্য জাতপাত ও অস্পৃশ্যতার তীব্র বিরোধী ছিলেন। তিনি হরিজনদের (তফসিলি জাতি ও উপজাতি) সমান অধিকার প্রদানের জন্য আন্দোলন করেন এবং মন্দিরে তাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হন। তার নেতৃত্বে অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সমাজের নিম্নবর্গের মানুষদের উন্নয়নের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
আইনজীবী ও বৃত্তিমূলক জীবন:
মালব্য একজন সুশিক্ষিত আইনজীবীও ছিলেন। ১৯২৪ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ ও মোহনদাস গান্ধীর সঙ্গে মিলিত হয়ে তিনি মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং ব্রিটিশ আদালতে ভারতের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেন।
সমাজসেবা:
ভারত থেকে অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ ও হরিজন আন্দোলনকে পরিচালনার ক্ষেত্রে মদনমোহন মালব্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৩৩ সালে তার সভাপতি আয়োজিত একটি সম্মেলন হরিজন সেবক সংঘ হিসেবে স্থাপিত হয়।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার:
১৯৪৬ সালের ১২ ই নভেম্বর মদনমোহন মালব্যর মৃত্যু হয়। মদনমোহন মালব্য মৃত্যুর পরেও তার অবদান ও উত্তর অধিকার গভীরভাবে অনুভূত হয়। ২০১৪ সালে তাকে ভারতরত্ন, সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান প্রদান করা হয়।
উপসংহার:
ভারতের বিভিন্ন শহরে তার নামে এলাকাগুলি নামকরণ করা হয়েছে যেমন মালব্য নগর, এছাড়াও, কাশি হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশদ্বার তার একটি বিশাল মূর্তি স্থাপিত করা হয়েছে। যা তার শিক্ষা প্রতি এবং জীবন এবং ভারতীয় সমাজের প্রতি তার অবদানে প্রকাশ করে।
মদনমোহন মালব্য যদি ভালো লেগে থাকে পোস্টটি ভালো লেগে থাকে। যদি আপনার সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী ও সহপাঠীদের মধ্যে পোস্টটি শেয়ার করে দেবেন। আরো নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখুন এবং আমাদের পাশে থাকুন।
।।ধন্যবাদ।।
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.