মাতঙ্গিনী হাজরার জীবনীমাতঙ্গিনী হাজরার জীবনী

মাতঙ্গিনী হাজরার জীবনী

Matangini Hazra


মাতঙ্গিনী হাজরা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীরাঙ্গনা। তার সাহসী সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ আমাদের জাতীয় ইতিহাস এক অবসর নিয়ে অধ্যায়। মাতঙ্গিনী হাজরার জন্মগ্রহণ করেছিল এমন এক সময়ে যখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারত জর্জরিত ছিল। মাতঙ্গিনী হাজরার নাম তো আমরা সকলেই শুনেছি, সকলেই আমরা ইতিহাসের পাতায় পড়েছি। স্বাধীনতার সংগ্রামী বীরাঙ্গনা নারীর মাতঙ্গিনী হাজরা জীবনী আপনাদের সামনে আজ তুলে ধরবো।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

১৮৬৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর বীরঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানার অন্তর্গত হোগলা গ্রামে একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারে মাতঙ্গিনী হাজরা জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা নাম ছিল ঠাকুরদাস মাইতি। এবং মাতা নাম ছিল ভগবত দেবী। দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেয়ে হওয়ার জন্য তিনি  প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল।

বিবাহ ও বৈধব্য জীবন:

বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। তার কোন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার সুযোগ ছিল না।  মাত্র ১২ বছর বয়সে মাতঙ্গিনী হাজরা  বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ত্রিলোচন হাজরা সাথে । ত্রিলোচন হাজরা ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক। বিবাহের কয়েক বছর পর মাতঙ্গিনী হাজরা বৈধব্য জীবনযাপন শুরু করেন। যখন তার স্বামী ত্রিলোচন হাজরা মারা যান। বৈধব্যের পর তিনি সমাজের চাপে এবং অপমানের সম্মুখীন হন। কিন্তু তিনি সমস্ত প্রতিকূলতাকে অগ্রাহ্য করে নিজেকে সামাজিক কাজে নিযুক্ত করেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম পদক্ষেপ: 

১৯০৫ সালে মাতঙ্গিনী হাজরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন। ১৯২৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কংগ্রেসের লহর অধিবেশনে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে  তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করা হয়। ১৯৩০ সালে মার্চ এপ্রিল মাসে সত্যাগ্রহ আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। সে সময় দেশের মানুষের জন্য সামুদ্রিক জল থেকে লবণ সংগ্রহ করা অবৈধ ছিল। কিন্তু একই বছরে প্রথম লবণ তৈরির কাজ শুরু হয়। মেদিনীপুরে কাঁথির অ্যালাইন সেন্টারে নুন তৈরির অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ গ্রামে গামে ঢুকে সব বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এবং পুলিশ তাদের উপর নির্যাতন শুরু করে। কিন্তু পুলিশ মাতঙ্গিনী হাজরাকে গ্রেফতার করেননি। ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৩২ সালে কংগ্রেস কর্মীরা জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরে মেদিনীপুরে মিছিল করে। মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলে যোগ দিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হন।জেলায় বেলম্যান ট্যাক্স-স্টপ আন্দোলন শুরু হল মাতঙ্গিনী হাজরার সাথে যোগ দেন। গভর্নর ফিরে আসার শব্দে তিনি মিছিল করেন এবং গ্রেফতার হন। এ সময়ে তিনি বহরমপুর কারাগারে ছয় মাস বন্দি ছিলেন। মাতঙ্গিনী হাজরা হিজলী কারাগারে বেশ কিছুদিন বন্দী ছিলেন। মাতঙ্গিনী হাজরার জেল থেকে মুক্তি পেয়ে 1933 সালে শ্রীরামপুর কংগ্রেস অধিবেশনে যোগদানকারী মাতঙ্গিনী হাজরা পুলিশের লাঠিচার্জ আহত হন। এই বীরাঙ্গনা নারীর অসহযোগ আন্দোলন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের যোগ দিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামে তার নাম ইতিহাসের পাতা সংরক্ষণ করে আজও অমর হয়ে আছে। সে সময়ে সারা ভারতের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন মেদিনীপুর ভিন্ন রূপ নিয়েছিল।

ভারতছাড়ো আন্দোলনের অবদান

১৯৪২ সালের মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ শাসনের এর বিরুদ্ধে এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। মাতঙ্গিনী হাজরা তখন বয়স ছিল ৭২ বছর কিন্তু তার মধ্যে ছিল এক অদম্য সাহস এবং শক্তি। তমলুক অঞ্চলে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন মাতঙ্গিনী হাজরা। ২৯ শে সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সালে একটি বিশাল মিছিল নিয়ে তমলুক থানার দিকে অগ্রসর হন। ব্রিটিশ পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়, কিন্তু মাতঙ্গিনী হাজরা পিছু হাটেন নি। মাতঙ্গিনী হাজরার গায়ে ও মাথায় তিনি গুলিবদ্ধ হন। নতুন তিনি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি জাতীয় পতাকা নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন

এবং “বন্দেমাতারাম ধ্বনি”  দিতে থাকেন।

তমলুকের ভূমিকা: 

মাতঙ্গিনী হাজরা তমলুকের ভূমিকা ছিল এক অনন্য। তিনি তমলুক জাতীয় সরকারের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তমলুক জাতীয় সরকার ছিল তৎকালীন সময় এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাতঙ্গিনী হাজরা এখানে স্থানীয় মহিলাদের সংঘটিত করে স্বাধীনতা সংগ্রামের যোগদান করান। এবং তার নেতৃত্বে অনেক মহিলা আন্দোলনের সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

গৃহিণী থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামী: 

মাতঙ্গিনী হাজরা জীবনের অন্যতম দিক ছিল তার রূপান্তর। তিনি একজন সাধারণ গৃহিণী থেকে একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হয়ে উঠলেন তা এক অব স্মরণীয় কাহিনী। প্রথমে তিনি গ্রামের মহিলাদের সংগঠিত করেন এবং তাদের ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের উদ্বুদ্ধ করেন। এরপর তিনি নিজেই আন্দোলন নিয়ে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। তার সাহস এবং নেতৃত্ব গুণ তাকে সাময়িক সময়ে নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হিসেবে তুলে ধরে।

 মৃত্যু ও উত্তরাধিকার:

২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ সালে হাজার হাজার মানুষ তমলুকের দিকের মিছিল করে এবং থানা আদালত দখলের জন্য। ইংরেজদের বিরুদ্ধে ভারতবাসী লাখো লাখো কন্ঠ ওঠে। এবং ইংরেজরা ভারত ছেড়ে চলে যান।  আহত স্বেচ্ছাসেবকরা ছাত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ৭৩ বছর বয়সী মাতঙ্গিনী হাজরা এগিয়ে যান। তিনি পতাকা উত্তোলন করে নিয়েছিলে নেতৃত্ব দেন। বুকে অদম্য শক্তি নিয়ে বন্দেমাতারাম ধ্বনি দিতে থাকেন। কিন্তু মাতঙ্গিনী হাজরার বুকে গুলি করে। বন্দে মাতারাম ধ্বনি দিতে দিতে বাংলা বীরাঙ্গনা নারী মাতঙ্গিনী হাজরার প্রাণহীন দেহ মাটিতে লুটে পড়ে।

উপসংহার: 

মাতঙ্গিনী হাজরা জীবন এবং ভারতের ইতিহাসে একটি মহান অধ্যায়। তার সাহস আত্মত্যাগ দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা আমাদের সকলের জন্য একটি উদাহরণ। মাতঙ্গিনী হাজরা শুধুমাত্র একজন স্বাধীনতার সংগ্রামী নয়, তিনি একজন একজন সাহসী নারী যিনি সমস্ত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে নিজের দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। তার জীবন কাহিনী আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে।  মাতঙ্গিনীর হাতসার মতো মাতঙ্গিনীর হাজরার মতই বিরঙ্গনা নারীদের জন্যই আজ আমরা স্বাধীনতার স্বাদ  উপভোগ করতে পারি। তার স্মৃতি আমাদের চিরকাল মনে রাখার মত। তার সত্যিকারের সাহস এবং আত্মত্যাগ আমাদের জীবনের সব সময় প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয়। তার স্মৃতি প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আজীবন বজায় থাকবে। তাই তিনি আজও আমাদের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন।

বীরাঙ্গনা নারী মাতঙ্গিনী হাজরা পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে আপনার সাহায্যকারী মনে হয়। তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী ও সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করা যাবে না। আরো নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখুন এবং আমাদের পাশে থাকুন। 

।।ধন্যবাদ।।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content