চারণ কবি মুকুন্দ দাস এর জীবনী
Mukunda Das
ভূমিকা:
কবি মুকুন্দ দাস ছিলেন বিশিষ্ট বাঙালি কবি, গায়ক, নাট্যকার ও স্বদেশী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। তিনি বাংলা লোকসংগীত এর একটি উজ্জ্বল প্রতীক ছিলেন এবং নিজের জীবন ও কর্মের মাধ্যমে বাংলার সংস্কৃতিক জগতকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার গান ও নাটকগুলি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল।
আজ চারণ কবি মুকুন্দ দাসের জীবনী আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগনার বানরী ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ২২ শে ফেব্রুয়ারি মুকুন্দ দাস জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল গুরুদয়াল দে। মাতার নাম ছিল শ্যামসুন্দরী দেবী। কবি মুকুন্দ দাস কে তার বাবা যজ্ঞেশ্বর দে এবং ডাক নাম ছিল যজ্ঞা বলে ডাকতো।
শিক্ষাজীবন:
কবি মুকুন্দ দাসের বাবা গুরুদয়াল দে বরিশালের একটি ডেপুটি আদালতে কাজ করতেন। কর্মসূত্রে গুরুদয়াল দে বরিশালেই থাকতে হতো। সপরিবারে বরিশালে বাস করতেন। এখান থেকেই বাল্যর স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন কবি মুকুন্দ দাস। সংসারের স্বচ্ছলতার অভাব ছিল বলে কবি মুকুন্দ দাস বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি। তার ফলে কিশোর বয়স থেকেই তিনি মুদির দোকানে বসতে আরম্ভ করেন।
কর্মজীবন:
মুকুন্দ দাস নিজেই যাত্রাপালার গান রচনা করতেন। গানের সুর সংযোজন নিজেই করতেন। হেমচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও অশ্বিনী কুমার গান রচনা করতেন তিনি। বরিশালে হিতৈষী পত্রিকায় তিনি লিখতে আরম্ভ করেন। মুকুন্দ দাসের যাত্রাপালার গান এমনই জনপ্রিয়তা করেছিল যে তাকে বরিশালের গানের দল নিয়ে ঘুরতে হতো। বিশেষ করে স্বদেশী আন্দোলনে বিদেশি বর্জন বিশেষ করে ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। এক সময় বঙ্গনারী রেশমি চুরি আর পারো না তার এই গানগুলি একসময় বাংলার গ্রামে গ্রামে তীব্র উন্মাদনা জাগিয়েছিল।
সাহিত্যিক ও সংগীত জীবন:
কবি মুকুন্দ দাসের সাহিত্যিক ও সংগীত জীবন শুরু হয়েছিল লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে। তিনি লোকগান পালাগান ও যাত্রাপালার মাধ্যমিক মানুষের কাছে পৌঁছান। তার গানগুলি ছিল খুবই সহজ ও সরল, কিন্তু তাতে ছিল গভীর অনুভূতির ছোঁয়া। তুমি গানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন কে প্রকাশ করেছেন। তার গানগুলি তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতো। তিনি যার গানের মাধ্যমে সমাজের অসাম্য শোষণ অনুপ্রেরণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও স্বদেশী যুগ মুকুন্দ দাসের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ন হলো ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি তার সঙ্গীতো নাটকের মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত করতে। তার গানগুলি ব্রিটিশ বিরোধী বার্তা বহনকারী এবং সহজেই মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করত। তার গান ও নাটক গুলি তৎকালীন সমাজে ব্যাপকভাবে আলোকিত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসকরা তাকে বারবার আটক ও নিপীড়ন করলেও তার মনবল তাকে কখনো দমাতে পারেনি। তিনি তার সৃষ্টির মাধ্যমে সবসময় সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেমের বীজ বপন করতেন।
মুকুন্দ দাসের কারাদণ্ড:
কবি মুকুন্দ দাস এমন একটি গান সংকলন করেছিলেন যার ফলে তার জরিমানা হয়েছিল। বিশেষত এই গানটি মূর্তি পূজার জন্য রচিত হয়েছিল। সেই গানটি ছিল
” ধান গোলা ভরা, সেট ইঁদুরে করলো সারা, সেই জন্য তাকে তিন বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল।
স্বাধীনতা আন্দোলন মুকুন্দ দাসের যোগদান:
ভারতবর্ষ স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি যোগদান করেছিলেন। এবং সেই সঙ্গে তিনি যাত্রা গান এবং স্বদেশী গান গাইতেন। এই গানের মধ্যে দিয়ে তিনি মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রতা করাই ছিল তার একমাত্র উদ্দেশ্য। স্বদেশী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল মানুষ এতে যোগদান করতেন। এই চেতনা সূত্র ধরে তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের সংস্পর্শে এসেছিলেন। আর এই জন্যই বাংলার আপামর জনসাধারণের এই কারণে চারণ কবি হিসাবে আখ্যা দিয়েছিলেন।
রচনাবলী:
কবি মুকুন্দ দাসের উল্লেখযোগ্য রচনাবলী হল:
পল্লী সেবা, ব্রহ্মচারীণী, সাধন সংগীত, পথসাথী, সমাজ, কর্মক্ষেত্র প্রভৃতি।
পুরস্কার ও সম্মাননা:
গান গেয়ে ও গান রচনা করে তিনি জীবনব্যাপী বহু পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। এবং সাত শত মেডেল লাভ করেছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন এবং পরিনতি:
কবি মুকুন্দ দাসের ব্যক্তিগত জীবন ছিল অনেকটা সংগ্রামী। তিনি তার জীবনের বেশিরভাগ সময়ই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাটিয়েছেন। তার সংস্কৃতি কর্মকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে বারবার আটক ও নিপীড়ন করেছে। তবে তার দৃঢ় মনোরমল এবং সাহস তাকে কখনো দামাতে পারেনি।
জীবনাবাসন:
বাংলা মায়ের এই দামাল-চরণ সন্তান কবি মুকুন্দ দাস ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১৮ মে পরলোক গমন করেন। তবে তা সৃষ্টিকর্ম ও সংগ্রাম আজও আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।
উপসংহার:
কবি মুকুন্দ দাস ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তি, যিনি বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন। তার গান ও নাটকগুলি মানুষের হৃদয়ে আজও জীবন্ত। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এক অন্যতম প্রধান চরিত্র হিসাবে ইতিহাসে স্মরণীয়় হয়ে থাকবেন। মুকুন্দ দাস এর জীবন ও কর্ম আমাদের সর্বদা অনুপ্রেরণা যোগায় এবং আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আরও সমৃৃৃদ্ধ করে।
চরণ কবি মুকুন্দ দাসের যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী, ও সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন। আরো নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখুন।
।।ধন্যবাদ।।
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.