নন্দলাল বসু: আধুনিক ভারতীয় শিল্পের স্থপতি
Nandalal Bose: The Architect of Indian Modern Art
ভূমিকা: ভারতীয় শিল্পকলার নবরূপায়ন
নন্দলাল বসু (১৮৮৩–১৯৬৬), আধুনিক ভারতীয় শিল্পকলার অন্যতম পথিকৃৎ, এমন একজন শিল্পী যিনি ভারতীয় চিত্রকলার ধারায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলেন। ভারতীয় ঐতিহ্যের শিকড় ধরে রাখার পাশাপাশি পাশ্চাত্যের শৈল্পিক প্রভাবকে সার্থকভাবে আত্মস্থ করেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য ও শান্তিনিকেতনের প্রভাব নন্দলালের জীবনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। তাঁর শিল্পকর্ম শুধু চিত্রকলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না; ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেও তাঁর অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। বিশেষত, ১৯৩৭ সালের হরিপুরা কংগ্রেসে তাঁর তৈরি ফোক পেইন্টিংগুলো জাতীয়তাবাদী আবেগকে উজ্জীবিত করেছিল।
নন্দলালের সৃজনশীলতা ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীরে প্রোথিত, যা একদিকে যেমন অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্র থেকে প্রেরণা পেয়েছিল, অন্যদিকে তেমনই আধুনিক শিল্পকলার রূপান্তরের মধ্য দিয়ে নিজেকে নতুনভাবে প্রকাশ করেছিল। তিনি শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না; ছিলেন শিক্ষক, দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির রূপকার। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেইজ এবং সত্যজিৎ রায়ের মতো গুণী ব্যক্তিত্ব।
নন্দলাল বসুর জীবন, কাজ ও দর্শনের ওপর একটি গভীর অনুসন্ধান ভারতীয় শিল্পকলার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করে।
প্রথম অধ্যায়: শৈশবের স্মৃতি ও শিকড়
নন্দলাল বসু ১৮৮৩ সালের ৩ ডিসেম্বর বিহারের মুঙ্গের জেলার হাভেলি খড়গপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা পুর্ণচন্দ্র বসু ছিলেন দার্শনিকমনা এবং ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি। মা ক্ষেত্রমণি ছিলেন পরিবারের সংস্কৃতিমনস্ক স্তম্ভ। যদিও নন্দলালের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল বাংলার হুগলি জেলার জেজুর গ্রামে, তাঁদের পরিবার পরবর্তীকালে বিহারে স্থায়ী হয়।
ছোটবেলা থেকেই নন্দলালের মধ্যে সৃজনশীলতার বীজ লুকিয়ে ছিল। মায়ের কল্পনাপ্রবণ গল্প বলার দক্ষতা তাঁকে শৈল্পিক চেতনায় অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁর বাবা-মার শাসন এবং উৎসাহের মধ্যে তিনি ধীরে ধীরে শিল্পকলার প্রতি আকৃষ্ট হন।
নন্দলালের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল হাভেলি খড়গপুরে। পরবর্তীতে তিনি তাঁর দাদার সঙ্গে কলকাতায় আসেন এবং সেখানে কলকাতা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই তিনি সাধারণ পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁর প্রতিভাকে লক্ষ্য করেছিলেন।
তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো কৈশোরে ‘সিদ্ধিদাতা গণেশ’ চিত্রকর্মটি তৈরি করা। এটি ছিল তাঁর প্রথম সৃজনশীল প্রয়াস, যা পরবর্তীতে তাঁকে ভারতীয় শিল্পকলার দিগন্তে স্থাপন করেছিল।
দ্বিতীয় অধ্যায়: শিক্ষা ও শিল্পকলার প্রতি আকর্ষণ
নন্দলাল বসুর শিক্ষাজীবনের শুরু হয়েছিল বিহারের হাভেলি খড়গপুরে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সেখানে হলেও, উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত হতে হয়। কলকাতায় এসে তিনি ভর্তি হন কলেজিয়েট স্কুলে। তাঁর শিক্ষাজীবনের এই পর্যায়ে তিনি শিল্পকলার প্রতি গভীর অনুরাগ প্রকাশ করতে শুরু করেন।
ছোটবেলায় খেলাধুলার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল না তাঁর। বরং প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ, গ্রাম্য জীবনের দৃশ্যাবলী এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান তাঁর কল্পনাশক্তিকে শাণিত করেছিল। শৈশব থেকে দেখা এই দৃশ্যগুলো পরবর্তীতে তাঁর চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছিল।
কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তির গল্প
নন্দলাল বসুর শিল্পীজীবনের মোড় ঘুরেছিল যখন তিনি ১৯০৫ সালে কলকাতা আর্ট স্কুলে (Government School of Art) ভর্তি হন। তৎকালীন সময়ে কলকাতা আর্ট স্কুল ছিল আধুনিক শিল্প শিক্ষার একটি প্রধান কেন্দ্র। স্কুলের তৎকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন পার্সি ব্রাউন। কিন্তু নন্দলালের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি তাঁর শিক্ষক এবং পরবর্তীতে তাঁর শিল্পদর্শনের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠেন।
কলকাতা আর্ট স্কুলে অধ্যয়নকালে নন্দলাল ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি পাশ্চাত্য শিল্পকলার বিভিন্ন দিক যেমন- আলো, ছায়া, গঠনশৈলী ও জ্যামিতির ব্যবহার শিখলেও, তাঁর শিল্পচেতনার মূল ভরকেন্দ্র ছিল ভারতীয় শৈল্পিক ঐতিহ্য।
সিদ্ধিদাতা গণেশ চিত্রকর্ম
কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল ‘সিদ্ধিদাতা গণেশ’। এটি এমন একটি চিত্রকর্ম যা নন্দলালকে শুধু তাঁর পরিবার নয়, তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যেও সুপরিচিত করে তোলে। গণেশের মূর্তিটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং গভীর চিন্তাপ্রসূত ছিল, যা দেখে অবনীন্দ্রনাথ নিজেও তাঁকে প্রশংসা করেছিলেন।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে নন্দলাল ভারতীয় ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণের অংশ হয়ে ওঠেন। অবনীন্দ্রনাথ তাঁকে শুধু ভারতীয় শিল্পকলার ইতিহাসের পাঠ দেননি, তাঁকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে এই ঐতিহ্যকে সমকালীন শিল্পে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা যায়।
অবনীন্দ্রনাথের প্রভাবে নন্দলাল অজন্তা গুহাচিত্র এবং মুঘল মিনিয়েচার আর্টের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি বুঝতে পারেন, ভারতীয় চিত্রকলার মূল দর্শন হলো প্রকৃতি এবং জীবনের অন্তর্নিহিত সত্যের অনুসন্ধান। তাঁর শিল্পে এটাই ধীরে ধীরে প্রধান হয়ে ওঠে।
ছাত্রজীবনের চ্যালেঞ্জ
কলকাতা আর্ট স্কুলে পড়াশোনার সময় নন্দলালকে আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাঁর পরিবার তাঁর শিল্পচর্চাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি এবং নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারেনি। কিন্তু নন্দলাল দৃঢ় সংকল্পে তাঁর লক্ষ্য পূরণে অবিচল ছিলেন।
তৃতীয় অধ্যায়: ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি আকর্ষণ
প্রাচীন ভারতের অন্বেষণ
কলকাতা আর্ট স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি নন্দলাল ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীরে প্রবেশ করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি পাটনা, রাজগীর, বুদ্ধগয়া, বারাণসী এবং পুরীর মতো ঐতিহাসিক স্থানে গিয়েছিলেন। এই ভ্রমণ তাঁকে ভারতীয় শিল্প, সংস্কৃতি এবং ধর্মের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হতে সাহায্য করে।
বিশেষ করে, ওড়িশার কোনারকের সূর্য মন্দির এবং অজন্তা গুহাচিত্রের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল গভীর। তিনি দেখলেন, কীভাবে ভারতীয় শিল্পে ধর্মীয় ভাবনার প্রকাশ ঘটেছে এবং কীভাবে সেসব শিল্পকর্মে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে।
অজন্তার প্রভাব
অজন্তার গুহাচিত্র দেখার পর নন্দলাল বুঝতে পারেন, শিল্পের প্রকৃত অর্থ হলো জীবনের গভীর সৌন্দর্য এবং অন্তর্নিহিত সত্যকে উপলব্ধি করা। তিনি সেখানে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক রঙ এবং চিত্রগুলোর গভীরতাকে নিজের কাজে প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন।
লোকশিল্পের প্রতি আগ্রহ
ভারতের গ্রাম্য জীবনের প্রতিদিনের কাজ এবং সরলতায় নন্দলাল অনুপ্রাণিত হন। তিনি অনুভব করেন, ভারতীয় লোকশিল্পে এক ধরনের আন্তরিকতা এবং সত্যতা রয়েছে, যা অনেক ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পকলার চেয়ে গভীর।
চতুর্থ অধ্যায়: স্বাধীনতা আন্দোলনে শিল্পের ভূমিকা
নন্দলাল বসুর জীবনে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়কাল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তিনি শিল্পকর্মের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর এই অবদান তাঁকে সমকালীন শিল্পীদের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান করে দেয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য
১৯২০ সালে নন্দলাল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন প্রকল্পে যোগদান নন্দলালের জীবনে নতুন দিক উন্মোচন করেছিল। সেখানে তিনি কেবল শিল্প শিক্ষক হিসেবে কাজ করেননি, বরং ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং লোকশিল্পের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আরও গভীর হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ নন্দলালকে শুধু শিল্পী হিসেবে নয়, একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নন্দলাল অনুভব করেন, শিল্প শুধুমাত্র সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং সমাজের রূপান্তরের জন্য একটি শক্তিশালী হাতিয়ার।
হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশন (১৯৩৭)
নন্দলাল বসুর অন্যতম প্রধান অবদান ছিল ১৯৩৭ সালের হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে। মহাত্মা গান্ধীর আমন্ত্রণে তিনি এই অধিবেশনের জন্য লোকশিল্পের অনুপ্রাণিত বেশ কয়েকটি প্যানেল চিত্র এঁকেছিলেন।
এই প্যানেল চিত্রগুলোর প্রতিটি ছিল ভারতীয় গ্রামীণ জীবনের সরল এবং আন্তরিক দৃশ্যাবলী। গ্রামবাসীদের দৈনন্দিন জীবন, কৃষিকাজ, পশুপালন এবং উৎসবের চিত্রগুলো দেখে ভারতীয় গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রতি এক ধরনের স্নেহ এবং গর্ব প্রকাশ পেয়েছিল।
এই প্যানেল চিত্রগুলো কংগ্রেস অধিবেশনে এতটাই প্রশংসিত হয়েছিল যে সেগুলো ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়।
শিল্পে গান্ধীবাদ
নন্দলাল মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে প্রভাবিত হয়েছিলেন। গান্ধীর সরল জীবন এবং স্বরাজের ধারণা তাঁর শিল্পচর্চায় প্রতিফলিত হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিল্প মানুষের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে এবং স্বাধীনতার জন্য সৃষ্ট প্রতিটি আন্দোলনে এর একটি ভূমিকা থাকা উচিত।
নন্দলাল শিল্পকর্মে ভারতীয় ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে একটি সাংস্কৃতিক ভিত্তি প্রদান করেন।
পঞ্চম অধ্যায়: শিক্ষক এবং পথপ্রদর্শক
শান্তিনিকেতনে কর্মজীবন
১৯২১ সালে নন্দলাল শান্তিনিকেতনের কলাভবনে যোগদান করেন। সেখানে তিনি শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না; ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক এবং সাংস্কৃতিক নেতা। তাঁর হাতে কলাভবন ভারতীয় শিল্প শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
ছাত্রদের প্রতি প্রভাব
নন্দলালের ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেইজ এবং সত্যজিৎ রায়ের মতো প্রতিভাবান শিল্পী। তিনি তাঁদের শুধু শিল্পকলার শিক্ষা দেননি, বরং শিল্পের মাধ্যমে সমাজকে দেখার এবং প্রকাশ করার একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেছিলেন।
শিক্ষাদর্শন
নন্দলাল বিশ্বাস করতেন, শিল্প শিক্ষা শুধু কারিগরি দক্ষতার উপর নির্ভর করে না, বরং এর সঙ্গে ছাত্রদের মননের বিকাশ এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধও জড়িত।
ষষ্ঠ অধ্যায়: উল্লেখযোগ্য কাজ এবং রচনা
প্রধান চিত্রকর্ম
নন্দলাল বসুর উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্মগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- ‘অন্নপূর্ণা’: মা অন্নপূর্ণার একটি চিত্র যা দেবী আরাধনার সঙ্গে ভারতীয় চিত্রকলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
- ‘সতী’: সতী দেবীর আত্মত্যাগের কাহিনি।
- ‘দার্জিলিং’: পাহাড়ি অঞ্চলের সৌন্দর্যের চিত্রায়ণ।
রূপায়ণ এবং বই অলঙ্করণ
নন্দলাল বসু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন বইয়ের অলঙ্করণ করেছেন। তাঁর এই কাজ বাংলা সাহিত্য এবং শিল্পকলার মেলবন্ধনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সপ্তম অধ্যায়: জাতীয় সম্মান এবং স্বীকৃতি
নন্দলাল বসু জীবদ্দশায় বহু সম্মান ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
- পদ্মভূষণ (১৯৫৪): ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান।
- দেশিকোত্তম (১৯৫২): বিশ্বভারতীর সর্বোচ্চ সম্মান।
- ভারতের সংবিধানের অলঙ্করণ: ভারতের সংবিধানের মূল পাণ্ডুলিপি অলঙ্করণ করে তিনি ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠেন।
অষ্টম অধ্যায়: নন্দলাল বসুর উত্তরাধিকার
নন্দলাল বসু শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না; ছিলেন একজন দার্শনিক, যিনি ভারতীয় শিল্পের মাধ্যমে জাতির চেতনা গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর ছাত্ররা ভারতীয় শিল্পকলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে তাঁর প্রভাব
নন্দলাল বসুর শিল্পকর্ম ভারতীয় ঐতিহ্যের আধুনিকীকরণ এবং সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। তিনি প্রমাণ করেছেন, শিল্প শুধু ব্যক্তিগত সৃজনশীলতার মাধ্যম নয়, বরং এটি একটি জাতির মনন গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম।
উপসংহার: এক শিল্পী ও পথিকৃৎ
নন্দলাল বসু ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসে এক চিরন্তন নাম। তাঁর কাজ ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গভীরতা এবং সৌন্দর্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছে। তিনি কেবল শিল্পী ছিলেন না; ছিলেন এক সংগ্রামী পথপ্রদর্শক, যিনি শিল্পের মাধ্যমে ভারতীয় জাতির আত্মপরিচয়কে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছিলেন।
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.