নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীনীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জীবনী

NIRENDRANATH CHAKRABORTY 


এখনো অফুষ্ট আলো। ফিকে ফিকে ছাড়া অন্ধকার।

অরণ্য সমুদ্র হ্রদ, রাত্রি সিসির শিক্ত মাঠ।

ভেঙে পড়ে দূবিনীত দুরন্ত আদেশ শুনে কারো।

দীর্ঘ রাত্রি মরে যায় ধসে পড়ে শীর্ণ রাজ্যপাঠ।

নির্ভয় জনতা হাটে আলোর বলিষ্ঠ অভিসারে।

হে এশিয়া, রাত্রি শেষে ভস্ম অপমান শয্যা ছাড়।

উজ্জীবিত হও রূঢ় অসংকোচ রৌদ্রের প্রহারে।

শহরে বন্দরে গঞ্জে, গামাঞ্চলে খেতে ও খামারে।

জাগে প্রাণ,  দ্বীপে দ্বীপে মুঠিবদ্ধ আহ্বান পাঠায়।

অগণ্য মানব শিশু সেই ক্ষিপ অনিবার্য ডাক।

দুর্জয় আশ্বাসে শোনে, দৃঢ় পায়ে হাঁটে | তারপরে
ভারতে, সিংহলে, ব্রহ্মে, ইন্দোচীনে, ইন্দোনেশিয়ায়
বীত-নিদ্র জনস্রোত বিদ্যুত্-উল্লাসে নেয় বাঁক।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯শে অক্টোবর ১৯২৪ সালে ফরিদপুর জেলা চন্দ্রা গ্রামে। শৈশব থেকেই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জীবন কেটেছে তার ঠাকুরদা ঠাকুমার কাছে। ঠাকুরদা কর্মজীবন কাটিয়েছেন কলকাতায়। কর্মজীবনের শেষে ৫০ বছর বয়সে পাঠ চুকিয়ে তিনি বাংলাদেশের ফরিদপুর চন্দ্র গ্রামে চলে আসেন। মাত্র দুই বছর বয়সে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বাবা-মা কর্মস্থলের জন্য কলকাতায় চলে যান। সিম্পিল শৈশব থেকেই নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ঠাকুরদার লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছে থেকে যান।

শিক্ষাজীবন: 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রাথমিক লেখাপড়া ফরিদপুরের পাঠশালায় লেখাপড়া শুরু করেন। পরে তে ঠাকুর দাদার মৃত্যুর পর তিনি গান ছেড়ে ১৯৩০ সালে কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় এসে তিনি প্রথমে বঙ্গবাসী স্কুলে পড়ে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের সেন্ট পল কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বিএ পাস করেন ছাত্র অবস্থায় শ্রীহর্ষ পত্রিকা সম্পাদনা করে সংবাদপত্রের প্রতি নিবিড় ও গভীর অনুরাগের সূত্রপাত হয়।

কর্মজীবন: 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মাত্র পাঁচ বছর বয়সে প্রথম কবিতা লেখেন। কিন্তু সেটা কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু আবার ১৬ বছর বয়স থেকে বিভিন্ন ও পত্রিকায় তিনি আবার কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৬ বছর বয়স থেকেই ‘শ্রীহর্ষ’   পত্রিকা কবিতা লেখার মধ্য দিয়েই সাহিত্য জগতে তার প্রথম আত্মপ্রকাশ হয়। ‘ দৈনিক প্রত্যহ’ তার সাংবাদিকতার হাতে খড়ি। ‘ সত্যযুগ’ পত্রিকার সাংবাদিক রূপে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর একে একে তিনি মাতৃভূমি, স্বরাজ, ভারত ইউনাইটেড প্রেস ইন্ডিয়া প্রভৃতি পত্রিকায় কাজ করা শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি আনন্দ মেলা পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রথম বই হল ‘ নীল নির্জন’ এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৪ সালে। এরপর থেকে তার বিভিন্ন বই প্রকাশিত হয় সেগুলি হল অন্ধকার বারান্দা, নীল নির্জন, নক্ষত্র জয়ের জন্য, আজ সকলে সহ অসংখ্য কবিতার বইয়ের জন্য তিনি সাহিত্য একাডেমীর সহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা উলঙ্গ রাজা কবিতায় সামুদ্রিক জমিদার, জোতদার সমাজব্যবস্থাকে তীব্র পাঠক্রম এর বানে বিদ্ধ করেছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখা ‘ রাজা তোর কাপড় কোথায়’ লাইনটি আজও আমাদের খুবই পরিচিত।

ব্যক্তিগত জীবন: 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় মানুষের প্রেম, ভালোবাসা আবেগ প্রভৃতি ঠাঁই পেয়েছে। তিনি মানুষের মানবতার অবমাননা তিনি সহ্য করতে পারেননি। তাই তিনি সেই অবমাননার বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন। তিনি সমস্ত ভন্ডামীর বিরুদ্ধে তথা সমকালীন জীবনের ভন্ডামী শোষণ ও অবিচার তার কলমের রূপ নিয়েছে। আধুনিক সভ্যতার নেতিবাচক দিক, রাষ্ট্র ব্যবস্থা শাসকের ন্যায়নীতি ও প্রদর্শন এর বুদ্ধিজীবী তবাকোতা ও বিবেকহীনতা প্রভৃতি বিরুদ্ধে কবিতা রূপ পেয়েছে।

প্রবন্ধ ও গদ্য রচনা: 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একাধিক গল্প উপন্যাস লিখেছেন সেগুলোর নিচে উল্লেখ করলাম।

১• শ্যাম নিবাস রহস্য (১৯৯০)

২• মুকুন্দপুর মনসা ১৯৯১

৩• চশমার আড়ালে ১৯৯৩

৪• রাত যখন তিনটে ১৯৯৪

৫• বরফ যখন গলে ১৯৯৫

৬• একটি হত্যার অন্তরালে ১৯৯৭

৭• আড়ালে আছে কালিচরণ ১৯৯৮

৮• আংটি রহস্য ২০০০

৯• জোড়া ভাদুরি ২০০১

১০• শান্তি লতার অশান্তি ২০০২

১১• কামিনীর কন্ঠহার ২০০৩

পুরস্কার ও সম্মাননা: 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ১৯৭৪ সালের উলঙ্গ রাজা কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার পান। এছাড়াও একগুচ্ছ পুরস্কার রয়েছে তার ঝুলিতে। ১৯৫৮ সালের উল্টোরথ পুরস্কার পান। ১৯৭০ সালে তারাশঙ্কর স্মৃতি ও ১৯৭৬ সালে আনন্দ শিরোমনি পুরস্কার পান নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। ২০০৭ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানিত ডি. লিট প্রদান করে। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বঙ্গভূষণ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার: 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ২০০৮ সালে ২৫শে ডিসেম্বর ৯৪ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে তিনি মারা যান। তার কবিতা ও রচনাবলী বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধি কে আরো বর্ধিত করেছে। তার সাহিত্যকর্ম আমাদের সাহিত্য জগতে এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকবে।

উপসংহার: 

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্তম্ভ। তার কবিতা রচনাবলী বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্য সমৃদ্ধিকে আরো বর্ধিত করেছে। তার সাইড্যকর্ম আমাদের চিরকাল সাহিত্যজগতে এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে বেঁচে থাকবে।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী  পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে যদি আপনার সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে আপনার বন্ধু, বান্ধবী, সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন। লেখার মধ্যে কোন ভুল ত্রুটি থাকলে অবশ্যই ক্ষমা করে দেবেন। আরও নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটের চোখ রাখুন আমাদের পাশে থাকুন। 

।।ধন্যবাদ।।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content