ধন্য আশা কুহকিনি তোমার মায়ায়
মুগ্ধ মানবের মন মুগ্ধ ত্রিভুবন
দুর্বল মানব -মনোমন্দিরে তোমায়
যদি না সৃজিত বিধি হায়! অনুক্ষণ
নাহি বিরাজিতে, তুমি যদি সে মন্দিরে
শোক, দুঃখ, ভয় ,ত্রাস, নিরাশ প্রায়
চিন্তার অচিত্য অস্ত্র নাশিত অচিরে
সে মনোমন্দির শোভা পলাতক নিশ্চয়
অধিষ্ঠাত্রী জ্ঞান-দেবী ছাড়িয়া আবাস
উন্মত্তা ব্যাখ্যারূপে করিত নিবাস
নবীনচন্দ্র সেন জীবনী
Navin Chandra Sen
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
১০ই ফেব্রুয়ারি ১৮৪৭ চট্টগ্রাম, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ভারত তথা চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার অন্তর্গত পশ্চিম গুজরার ( নোয়াপাড়া) সুপ্রসিদ্ধ প্রাচীন জমিদার পরিবারের নবীনচন্দ্র সেনের জন্ম হয়। তার পিতার নাম ছিল গোপীমোহন রায়। মাতার নাম ছিল রাজরাজেশ্বরী,
শিক্ষাজীবন:
নবীনচন্দ্র সেন মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তিনি লেখাপড়া শুরু করেন, ১৮৬৩ সালে তিনি চট্টগ্রাম স্কুল (বর্তমানে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল) থেকে এন্ট্রাস পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় যান। ১৮৬৫ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (বর্তমান প্রেসিডেন্সি বিদ্যালয়) থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এস এ এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন ( স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে ১৮৬৯ সালে বিএ পাস করেন।
কর্মজীবন:
বিএ পাশ করার পরে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ হন সাটিক্লফ এর সুপারিশে নবীনচন্দ্র সেন কলকাতার বিখ্যাত হেয়ার স্কুলে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। কিছুদিন পর তিনি বেকার হয়ে পড়েন, পরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনি উত্তীর্ণ হন। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠা হন। প্রথমে ১৭ ই জুলাই১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল সেক্রেটারীয়েটার অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে যোগ দেন। ২৪ শে জুলাই ১৮৬৯ সালের যশোর ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদের তাকে পদায়ন করা হয়। কর্মজীবনে তিনি বাংলা, বিহার,ত্রিপুরায় অনেক স্থানে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুই দফায় মোট প্রায় আট বছর ফেনীতে ডেপুটি মাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি অন্যান্য কর্মদক্ষতা একটি মনোরম শহরে পরিণত করেন। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফেনী হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে ফেনী সরকারি পাইলট হাই স্কুল নামে পরিচিত। ছত্রিশ বছর সরকারি চাকরির করার পরে একই জুলাই ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে অবসর গ্রহণ করেন চাকরি শেষ লগ্নে তিনি রানাঘাটের মহকুমা শাসক হয়ে এসেছিলেন
সাহিত্যকর্ম:
নবীনচন্দ্র সেন প্রথম কবিতা কোন এক বিধবা কামিনীর প্রতি প্রকাশিত হয় তৎকালীন অন্যতম খ্যাতনামা পত্রিকা এডুকেশন গেজেট এর যখন তিনি এফ .এ (বর্তমান উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র) তার প্রথম বই অবকাশরঞ্জনি “র প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় আর ১২৭৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ এবং এর দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়। ২৯ শে জানুয়ারি, ১৮৭৮ এ শেষের কাব্য তিনটি হল (রৈবতক, কুরুক্ষেত্র, প্রভাস) আসলে একটি বিরাট কাব্যের তিনটি স্বতন্ত্র অংশ এই কাব্য তিনটি কৃষ্ণ চরিত্র কে কবি বিচিত্র কল্পনায় নতুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি মতে আর্য ও অনার্য সংস্কৃতি সংঘর্ষের ফলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ হয়েছিল এবং আর্য অনার্য দুই সম্প্রদায়কে মিলিত করে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমরাজ্য স্থাপন করেছিলেন। নবীনচন্দ্র সেন ভগবত গীতা এবং মার্কন্ডেয় চন্ডীর পদ্মাঅনুবাদ করেছিলেন।নবীনচন্দ্রের কবিতা জায়গায় জায়গায় চমৎকার কিন্তু কবি এই চমৎকারিত্ব সব জায়গায় বজায় রাখতে পারেননি। এই কারণে এবং কাব্য রাঁধুনি না থাকায় নবীনচন্দ্রের কবিত্বের ঠিকমতো বিচার করা কঠিন হয়ে পড়েছে। নবীনচন্দ্র কিছু গদ্য রচনা করেছিলেন তার আত্মকথা আমার জীবন একটি উপন্যাসের মতো সূক্ষ্ম পাঠ্য গ্রন্থ তিনি ‘ভানুমতী’ নামে একটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন।
উপন্যাস:
নবীনচন্দ্রের মহাকাব্যের মধ্যে রয়েছে পলাশীর যুদ্ধ (১৮৭৫), রৈবতক (২ রা ফেব্রুয়ারি ১৮৮৭), কুরুক্ষেত্র (১৮ই জুলাই ১৮৯৩) প্রভাস (১৮৯৭) নবীনচন্দ্রের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুই ভাগ গুলি হল ক্লিওপেট্টা (১৮৭৭), অমিতাভ (১৮৯৫), রঙ্গমতী (১৮ জুলাই ১৮৮০) খ্রিস্ট (১৮৯০ যিশুর জীবন অবলম্বনে) অমৃতাভ শ্রীচৈতন্যের জীবন অবলম্বনে।
জীবনবাসন:
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে জানুয়ারি নবীনচন্দ্র সেন ৬২ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.