Prasanta Chandra MahalanobisPrasanta Chandra Mahalanobis

প্রশান্তচন্দ্র মহালানবীশ জীবনী 

Prasanta Chandra Mahalanobis Biography


 প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ, একজন বিশিষ্ট বাঙালি বিজ্ঞানী ও পরিসংখ্যানবিদ। তিনি পরিসংখ্যানে ক্ষেত্র এবং সামাজিক গবেষণায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট। (আই এস আই) আজও পরিসংখ্যান গবেষণার  একটি প্রধান কেন্দ্র আজকে তার জীবনই আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

প্রশান্ত চন্দ্র মহালানবীশ ২৯ শে জুলাই ১৮২৯ সালের কলকাতার একটি সংস্কৃতিক বিদ্যান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল প্রবোধ চন্দ্র মহলানবিশ। তিনি একজন ছিলেন বিখ্যাত চিকিৎসা ও সমাজ সেবক।

শিক্ষাজীবন: 

প্রশান্তচন্দ্র মহালানবির তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে ব্রাহ্ম বয়েজ স্কুল থেকে শিক্ষা লাভ করার পর। এরপর  তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে তিনি  কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং সেখান থেকে পদার্থবিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন: 

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিরে এসে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপক হিসাবে কাজ শুরু করেন। এবং তার গবেষণার প্রধান ক্ষেত্র ছিল পরিসংখ্যান এবং তিনি বহু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।

কাজ ও অবদান: 

প্রশান্ত চন্দ্র মহালানবিশ সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতি হল ভারতের রাশিবিজ্ঞান এর উপর প্রবর্তন। ও বর্তমান যুগের কৃষি বাণিজ্য শিল্পী অর্থনৈতিক ইত্যাদি পরিসংখ্যান বিজ্ঞান ব্যতীত অচল। যেটা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। এদিকেও তিনি ভারতীয় ছাত্রদের পরিসংখ্যান গবেষণার সুযোগ সুবিধার কথা ভেবে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ভারতীয় রাশিবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠাতা করেছিলেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ২৮ শে এপ্রিল এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণাগারটি সরকারিভাবে স্থাপিত হয়। বর্তমান শতাব্দীর প্রথম দিকে পরিসংখ্যান বিজ্ঞান ভারতে অপরিচিত ছিল। ভারতে কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান বিষয়ে গবেষণা করার জন্য পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল না।

পত্রিকা প্রকাশ: 

তিনি গবেষণা আর পাশাপাশি তাত্ত্বিক গবেষণাতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। চারি সম্পাদনায় প্রকাশিত হলো গবেষণা পত্রিকা ‘সংখ্যা’ পরবর্তীকালে এটি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। স্ট্যাটিস্টিকার ইনস্টিটিউট হলো একটি নিরন্তর গবেষণার ক্ষেত্র।

রাশি বিজ্ঞানের উপর পঠন-পাঠনের সূত্রপাত: 

শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী হিসাবেও প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ  অবদান সুপরিচিত। রাশি বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তার প্রশান্ত চন্দ্র মহালানো কিসের প্রতিষ্ঠা তেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে রাশিবিজ্ঞান পঠনের সূত্রপাত হয়েছিল।

প্রশান্ত চন্দ্র মহালানবিশ সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য লাভ:

প্রশান্ত চন্দ্র মহালানবিশ ছিল নিখাদ সাহিত্যপ্রীতি। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য হয়েছিল তার। প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপনার সময় থেকেই তিনি ব্রম্ভ সমাজের সংস্কার সাধনে ব্রতী হয়েছিলেন। এবং তাকে ব্রম্ভ নেতাদের প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ ইচ্ছা ছিল রবীন্দ্রনাথের স্বীকৃতি আসব ব্রহ্মসমাজ থেকে। কিন্তু প্রবীণ ব্রাহ্মণদের অনেকেই রবীন্দ্রনাথকে পছন্দকরতেন না।

রাশিবিজ্ঞানে আকর্ষণ ও পড়াশোনা:

আধুনিক পরিসংখ্যান বিজ্ঞানের জনক তথা ভারতের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রবর্তক ছিলেন প্রশান্ত চ ন্দ্র মহালানবিশ। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিসংখ্যান বিজ্ঞানী কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সময় থেকেই তিনি রশিবিজ্ঞানে দিকে আকৃষ্ট হন। দেশে ফিরে উদ্যাপনার ফাঁকে ফাঁকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পরিসংখ্যান বিষয়ক পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য। গভীর পর্যবেক্ষণের সাহায্যে কোন বিষয় সম্বন্ধে সংখ্যামূলক তথ্য সংগ্রহ করে তিনি তুলনামূলক বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা প্রভৃতি সাহায্যে কোন তত্ত্বে কোন বিষয়ক সম্বন্ধে সংখ্যামূলক তথ্য সংগ্রহ করেন। তা থেকে তুলনা বিশ্লেষণ ব্যাখ্যা প্রভৃতির সাহায্যে কোন তথ্যে উপস্থিত হওয়ার বিজ্ঞানসম্মত স্বাস্থ্যের নাম রাশি বিজ্ঞান। স্বভাবতই এই শাস্ত্র ছিল প্রয়োগ নির্ভর।

পরিসংখ্যান অবদান: 

একাধিক মাতার পরিমাপের উপর ভিত্তি করে কোন বিতরণ থেকে একটি বিন্দু বিভক্ত হয় তা খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ এক বহুল ব্যবহৃত মেট্রিক। এটি ক্লাস্টার বিশেষণ এবং শ্রেণী বিন্যাস এর ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি সর্বপ্রথম ১৯৩০ সালে জাতিগত তুলনামূলক গবেষণার জন্য প্রসন্নচন্দ্র মহলানবিশ প্রস্তাব করেছিলেন। ১৯২০ সালের নাগপুর অধিবেশনে ইন্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেস অধিবেশনের তৎকালীন জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ডিরেক্টর লেনসন আননাডেলের সাথী এক বৈঠক থেকে আন্দোলনে কলকাতায় অ্যাংলো ইন্ডিয়ান বিশ্লেষণ করতে বলেছিলেন। 1922 সালে তার প্রথম বিজ্ঞানীর গবেষণার দ্বারা বর্ণনা করা হয়েছিল। এই অধ্যয়নের সময় তিনি বহু উপাত্ত্বিক দূরত্ব পরিমাপ ব্যবহার করে জনসংখ্যা তুলনা একটি গ্রুপিংযের একটি উপায় খুঁজে পান।

পরবর্তী জীবন: 

পরবর্তী জীবনে প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবিশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ছিলেন। এবং স্বাধীন ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অবদান রেখেছিলেন। ও দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তিনি শিল্পায়নের উপর জোর দিয়েছিলেন। যা ভারতের দ্রুত শিল্পায়নের দিকে নিয়ে যেতে কাজ করেছিল। এবং তার ইনস্টিটিউট অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে। তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯৫০ এর দশকে ভারতের প্রথম কম্পিউটার আনার প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সংস্কৃতি কর্মকান্ডে মহানবীশির আগ্রহ ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এবং কিছুকাল তিনি বিশ্বভারতী বিদ্যালয় ও কাজ করেছিলেন। বিজ্ঞান ও সবার ক্ষেত্রে তার অবদানের জন্য ভারত সরকার থেকে তাকে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ পেয়েছিলেন।

সম্মাননা:

  • ভারতীয় বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো (এফএএসসি, ১৯৩৫)
  • ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো (এফএনএ, ১৯৩৫)
  • ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অর্ডার অফ অফিসার (সিভিল বিভাগ), ১৯৪২ নববর্ষ সম্মান তালিকা
  • অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওয়েলডন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৪৪)
  • রয়েল সোসাইটির ফেলো, লন্ডন (১৯৪৫)
  • ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি (১৯৫০)
  • একনোমেট্রিক সোসাইটির ফেলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৯৫১)
  • পাকিস্তান পরিসংখ্যান সমিতির ফেলো (১৯৫২)
  • রয়েল স্ট্যাটিস্টিকাল সোসাইটির অনারারি ফেলো, যুক্তরাজ্য (১৯৫৪)
  • স্যার দেবীপ্রসাদ সর্বাধিকারী স্বর্ণপদক (১৯৫৭)
  • ইউএসএসআর একাডেমি অফ সায়েন্সেসের বিদেশ সদস্য (১৯৫৮)
  • কেমব্রিজের কিংস কলেজের অনারারি ফেলো (১৯৫৯)
  • আমেরিকান পরিসংখ্যান সমিতির ফেলো (১৯৬১)
  • দুর্গাপ্রসাদ খাইতান স্বর্ণপদক (১৯৬১)
  • পদ্ম বিভূষণ (১৯৬৮)
  • শ্রীনিবাস রামানুজন স্বর্ণপদক (১৯৬৮)
  • ভারত সরকার ২০০৬ সালে তার জন্মদিন ২৯ জুন জাতীয় পরিসংখ্যান দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

২৯ জুন ২০১৮ সালে তার ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি এম ভেঙ্কাইয়া নাইডু কলকাতার আইএসআইতে একটি প্রোগ্রামে একটি স্মরণীয় মুদ্রা প্রকাশ করেন।

প্রশান্তচন্দ্র মহলানাবিশ মৃত্যু:

১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ২৮ শে জুন শিক্ষাবিদ ও রাশি বিজ্ঞানের পথিক কর্মবীর প্রশান্ত চন্দ্র মহালানবিশ গমন করেন।

রাশি বিজ্ঞানের পথিকৃৎ তথা ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত চন্দ্র মহালানবিশ যদি পোস্টটি ভালো লেগে থাকে যদি আপনার সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে আপনার বন্ধু-বান্ধবী ও সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন। আরো নিত্যনতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখুন এবং আমাদের পাশে থাকুন। 

।।ধন্যবাদ।।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content