Rabindranath TagoreRabindranath Tagore

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

Rabindranath Tagore


” আজ প্রভাতে রবির কর

কেমনে পশিল প্রাণের পর,

কেমনে পশিল ও গুহার আঁধারে প্রভাত পাখির গান!

না জানি কেন রে এতদিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ”।

এভাবেই জগতেই একদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগমন ঘটেছিল। সেই রবির  কিরণের চারিদিক উদ্ভাসিত করে তুললো। দিকে দিকে ছড়িয়ে গেল সেই রবির কিরণ। আজ বাঙালি সেই প্রাণের রবির অর্থাৎ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা তথা ভারতবর্ষের একজন বিখ্যাত মানুষ যিনি কবিতা, গল্প ও সঙ্গীতকদের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের মধ্যে মন জায়গা করে নিয়েছে। বাংলা সাহিত্যতার অসীম অবদানের জন্য তাকে কবিগুরুর ও বিশ্ব কবি বলা হয়। তিনি ভারতে এমন প্রথম ব্যক্তি ছিলেন তিনি সর্বপ্রথম বিখ্যাত “নোবেল পুরস্কার” অর্জন করেছিলেন। তিনি তার কবিতার পাশাপাশি ভারতের জাতীয় সংগীতের লেখক হিসেবে পরিচিতি হন। যার সম্পূর্ণ জীবন থেকে আমরা অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা নিতে পারি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আমরা ছোট বড়   সকলেই জানি। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান জানিয়ে বাঙালি সেই প্রাণের কবি রবি ঠাকুরের জীবনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। 

Rabindranath Tagore
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়: 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ই মে ( ২৫শে বৈশাখ ১২৬৮) জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মাতা ছিল সারদাসুন্দরী দেবী। সারদা সুন্দরী দেবীর অন্তিম সন্তান ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন মহান হিন্দু দার্শনিক ও ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

শিক্ষাজীবন: 

১৮৭৩ সালে ১১ বছর বয়সের রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশ ভ্রমণে বের হন। প্রথমে তারা আসেন শান্তিনিকেতনে। এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতির পরিদর্শন করেন। শেষে প্রত্যকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর যান পাঞ্জাবের (অধুনা ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজ্যে অবস্থিত) ডালহৌসি শৈল শহরের নিকট বক্রোটায়। এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের পাঠ নিতে শুরু করেন। অল্প বয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথের কবি প্রতিভার উন্মেষ হয়। কিশোর কল থেকেই শুরু করলেন  কাব্যচর্চা । মাত্র ১৩ বছর বয়সেই তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায়। ১৮৭৮ সালের তিনি পড়াশোনা জন্য বিলেতে যান। তিনি ব্যারিস্টার হবেন এই অভিপ্রায় তাকে লন্ডনে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে স্বল্পকাল অবস্থান এর পরে পাশ্চাত্য জীবনাচরণ, সেখানকার সাহিত্য- সংস্কৃতির খবর ও পাশ্চাত্য সংগীতের সুরমূছনা নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রেরণায় এবার কবি প্রাণে আর এলো গানের জোয়ার। রচনা করলেন অনবদ্য গীতিনাট্য, বাল্মিকী প্রতিভা।

কর্মজীবন:

ভারতী পত্রিকায় ১৮৭৭ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশ করেন। সেগুলো ছিল ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা আর ভিখারিনী ও করুণা নামে দুটো সুন্দর ছোট গল্প। এগুলোর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায়। এরপর ১৮৭৮ সালের প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ” কবি কাহিনী” এছাড়াও পরে তিনি রচনা করেছিলেন ” সন্ধ্যা সঙ্গীত” নামক আরেকটি কাব্যগ্রন্থ। ” নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ” নামে লেখা তার সেই বিখ্যাত কবিতা এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ছিল।

বৈবাহিক জীবন:

ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসার পর, অবশেষে ১৮৮৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তারিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ে হয় বেণীমাধব রায়চৌধুরী নামে ঠাকুরবাড়ির এক কর্মচারীর কন্যা ভবতারিণী সঙ্গে। বিয়ের সময় ভবতারিণীর পুনরায় নামকরণ করা হয় এবং তার নাম পাল্টিয়ে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী। পরবর্তীকালে মৃণালিনী দেবী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মোট পাঁচ সন্তান হয়- তাদের নাম যথাক্রমে ছিল – মাধুরী লতা (১৮৮৬-১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮-১৯৬১), রেনুকা (১৮৯১-১৯০৩), মীরা (১৮৯৪-১৯১৬), এবং শমীন্দ্রনাথ(১৮৯৬-১৯০৭) কিন্তু দুর্ভাগ্যবত তো তাদের মধ্যেই অতি অল্প বয়সী রেনুকা ও  শমীন্দ্রনাথ মারা যান।

কবিগুরুর কবিতা:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিক কবিতা লিখেছেন যার মধ্যে রয়েছে ১৯৮০ সালের প্রকাশিত মানসী, সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০), ও ক্ষণিকা (১৯০০) কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত ভাবনা। এছাড়াও পলাতকা (১৯১৮) কাব্য গল্প কবিতার আকারে তিনি নারী জীবনে সমসাময়িক সমস্যা গুলো তুলে ধরেন। বিশ্বের সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি। এ বইটির জন্যই তিনি সাহিত্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

রচনাবলী:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট তের টি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলি হল বৌ -ঠাকুরানীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি(১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩) নৌকাডুবি (১৯০৬) ঘরে বাইরে (১৯১৬), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)। রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস প্রতিষ্ঠা হল বৌ -ঠাকুরানীর হাট ও রাজর্ষি।বৌ -ঠাকুরানীর হাট ও রাজর্ষি ঐতিহাসিক উপন্যাস। চোখের বালি উপন্যাসে দেখানো হয়েছে সাময়িককালে বিধবাদের জীবনের নানা সমস্যা।

পুরস্কার সম্মাননা: 

১• ১৯৪০ সালের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে শান্তিনিকেতনে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে “ডক্টরেট অফ লিটারেচার” সম্মানে ভূষিত করে।

২• ১৯১৫ সালে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নাইট উপাধি পান। কিন্তু ১৯১৯ সালে ঘটে যাওয়া জালিমোহনবাগের হত্যাকাণ্ডের পর তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।

৩• বিদেশি তাঁর রচিত গীতাঞ্জলি কাব্য, বিশেষ জনপ্রিয়তা পায়। সেই সুবাদে তাকে ১৯১৩ সালের সাহিত্য নোবেল পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়।

৪• ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের আঁকা একটা ছবি প্যারিস লন্ডনে প্রদর্শিত হয়।

৫• ৭ই মে ১৯৬১ সালে, ভারতীয় ডাক বিভাগ সম্মান যাপনের উদ্দেশ্যে তার ছবি দেওয়া একটা ডাক টিকিট প্রকাশ করে।

রবি ঠাকুরের শান্তির বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা: 

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক বছর আগে বোলপুর শান্তিনিকেতনে, এক বিশাল জমি কেনেন। সেখান থেকে তিনি ১৮৮৮ শালী একটা আশ্রম ও ১৮৯১ সালের একটা ব্রহ্ম মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বাবার সেই কেনা জমিতে রবীন্দ্রনাথ একটা শিক্ষা কেন্দ্র তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তাই প্রথমে তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ” পাঠভবন” নামে একটা স্কুল, সেটা বাকি সব স্কুলের থেকে বেশ আলাদা ছিল। কারণ সেই স্কুলে ছিল সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নিচে একটা গাছ তলায়। এই স্কুলটি পরবর্তীকালে ১৯১৩ সালের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর আরো বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে সেটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন। সেটা পরবর্তীকালে নাম রাখা হয় বিশ্বভারতী জা ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত করা হয় সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য।

মহাপ্রয়াণ: 

১৯৭৩ সালে একবার অচৈতন্য  হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থার শিকার হন। যদিও তিনি সেই সময় সেবার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ১৯৪০ সালে আবার তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। । অবশেষে দুর্ভাগ্যবশত ১৯৪১ সালের ৭ই মে, মাত্র ৮০ বছর বয়সে জোড়াসাঁকর বাসভবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

একধারে তিনি ছিলেন শিল্পী, কবি ও লেখক, উপন্যাসিক মহান আত্মা মনের দিক থেকেও ভীষণ ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। তার জীবনাবাসন ভীষণ বড় এক ক্ষতি করে যায় বাংলা সাহিত্যের। রবি ঠাকুরের  জন্মদিন উপলক্ষে ওনাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে। ওনার জীবনের শান্তি কামনা করে। ওনাকে আমরা সবসময় মনে রাখব তার সৃষ্টিতে।

তাই তিনি আজও আমাদের মধ্যে প্রানের রবি ঠাকুর হয়ে অমর হয়ে থাকবেন ।অমর হয়ে থাকবেন আজীবন।

আমাদের ছোট নদী
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,
একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।
কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।

আর-পারে আমবন তালবন চলে,
গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।
তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাহিবার কালে
গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।

সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
আচলে ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।
বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,
বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।

আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,
ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।
দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।।

যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটি সাবস্ক্রাইব করে দেবেন। আপনার বন্ধুর বান্ধবীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন। আরো নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন আমাদের পাশে থাকুন।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content