Raja Ram Mohan RoyRaja Ram Mohan Roy

রাজা রামমোহন রায়

আধুনিক ভারতের অগ্রদূত

রাজা রামমোহন রায় : আধুনিক ভারতের পুনর্জাগরণের পিতামহ


সূচিপত্র

  1. ভূমিকা
  2. জীবনী
    • জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষা
    • কর্মজীবন
    • ইংল্যান্ড যাত্রা ও শেষ দিন
  3. মতাদর্শ
    • যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
    • ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার
    • একেশ্বরবাদ
  4. অবদান
    • ধর্মীয় সংস্কার
    • সামাজিক সংস্কার
    • শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার
    • অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার
  5. মূল পয়েন্ট
  6. উপসংহার

ভূমিকা

রামমোহন রায় (1772-1833) ছিলেন একজন অগ্রগামী ভারতীয় সংস্কারক, যার প্রচেষ্টা ভারতীয় রেনেসাঁর সূচনায় সহায়ক ছিল। শিক্ষা, সামাজিক সংস্কার এবং ধর্মীয় পুনরুজ্জীবনে তার অবদানের জন্য বিখ্যাত, তাকে প্রায়শইআধুনিক ভারতের জনকবলে অভিহিত করা হয়।

ভারতীয় রেনেসাঁর তাৎপর্য আধুনিক শিক্ষার প্রচার, ক্ষতিকারক সামাজিক অভ্যাসের বিলুপ্তি এবং মহিলাদের অধিকারের পক্ষে সমর্থন করার ক্ষেত্রে রামমোহনের উদ্যোগগুলি ভারতীয় ইতিহাসে একটি পরিবর্তনশীল যুগের সূচনা করে। রাজা রামমোহন রায়কে আধুনিক ভারতের পুনর্জাগরণের পিতামহ বলা হয়। তার নিরলস প্রচেষ্টা ভারতবর্ষে আধুনিকতা, যুক্তিবাদ ও সামাজিক সংস্কারের যুগ শুরু করে।

জীবনী

জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষা

রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ সালের ২২ মে বাংলার রাধানগর গ্রামে একটি সমৃদ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রমাকান্ত ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী এবং মাতা তারিণী দেবী ছিলেন একজন শৈব ধর্মাবলম্বী।। প্রাথমিক শিক্ষা হিসাবে তিনি পাতনায় পার্সি ও আরবি ভাষায় কোরান, সুফি কবিদের রচনা এবং প্লেটো ও এরিস্টটলের অনুবাদ পড়েন। এরপর বেনারসে সংস্কৃত ভাষা এবং বেদ ও উপনিষদ অধ্যয়ন করেন।

কর্মজীবন

১৮০৩ থেকে ১৮১৪ পর্যন্ত তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য ওডফোর্ড এবং পরে ডিগবি এর ব্যক্তিগত দেওয়ান হিসাবে কাজ করেন। ১৮১৪ সালে তিনি তার চাকরি থেকে পদত্যাগ করে কলকাতায় চলে আসেন এবং ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারে নিজেকে নিযুক্ত করেন।

ইংল্যান্ড যাত্রা ও শেষ দিন

১৮৩০ সালে তিনি ইংল্যান্ডে যান, সতির বিরুদ্ধে আইনের বিরোধিতা করতে। তাকে মুঘল সম্রাট আকবর II “রাজা” উপাধি প্রদান করেন।

মতাদর্শ

যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি

রামমোহন রায় পাশ্চাত্য আধুনিক চিন্তাধারায় প্রভাবিত হন এবং যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দেন। তিনি মনে করতেন ধর্মীয় ও সামাজিক অবক্ষয় বঙ্গের প্রধান সমস্যা।

ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কার

রামমোহন রায় সমাজের বিভিন্ন কুসংস্কার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। তিনি সতীদাহ প্রথা, বাল্যবিবাহ, নারীশিক্ষার অভাব এবং বিধবার অধিকারহীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং সামাজিক সংস্কার ধর্মীয় সংস্কারের সাথে যুক্ত।

একেশ্বরবাদ

রামমোহন ইসলামি একেশ্বরবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং বলেন যে, বেদান্তের মূল বার্তাও একেশ্বরবাদ। তিনি একটিমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ধারণা প্রচার করেন।

অবদান

ধর্মীয় সংস্কার

তারিখকাজ
১৮০৩তুহফাত-উল-মুয়াহহিদ্দিন
১৮১৪আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা
১৮২০প্রিসেপ্টস অফ জিজাস

রামমোহন রায়ের প্রথম প্রকাশিত কাজ তুহফাত-উল-মুয়াহহিদ্দিন (১৮০৩) হিন্দুদের অযৌক্তিক ধর্মীয় বিশ্বাস ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রথা প্রকাশ করে। ১৮১৪ সালে তিনি কলকাতায় আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৮২০ সালে প্রিসেপ্টস অফ জিজাস-এ খ্রিস্টধর্মের নৈতিক ও দার্শনিক বার্তা তুলে ধরেন।

সামাজিক সংস্কার

তারিখকাজ
১৮১৪আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা
১৮২৮ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা

সামাজিক সংস্কার

  • সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে
  • বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে
  • নারীশিক্ষার পক্ষে

বিধবার অধিকারের পক্ষে

রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্ম সমাজ (১৮২৮) প্রতিষ্ঠা করেন যা সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। তিনি সতি প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং বিধবা বিবাহের প্রচার করেন।

শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার

বছরপ্রতিষ্ঠান/কাজ
১৮১৭হিন্দু কলেজ স্থাপন
১৮২৫বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা

তিনি ১৮১৭ সালে ডেভিড হেয়ার-এর সহযোগিতায় হিন্দু কলেজ স্থাপন করেন এবং ১৮২৫ সালে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রদান করা হতো।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কার

রামমোহন রায় নাগরিক স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করেন। তিনি জমিদারদের অত্যাচারের বিরোধিতা করেন এবং ন্যূনতম ভাড়ার স্থায়ীকরণ ও করমুক্ত জমির কর তুলে দেওয়ার দাবি করেন।

মূল পয়েন্ট

  • আধুনিক ভারতের পুনর্জাগরণের পিতামহ
  • যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
  • একেশ্বরবাদ এবং ধর্মীয় সংস্কার
  • সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার
  • অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন

উপসংহার

রাজা রামমোহন রায়ের বহুমুখী অবদান আধুনিক ভারতীয় রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেছে, যুক্তিবাদ, সামাজিক ন্যায়বিচার ও প্রগতিশীল সংস্কারের পরিবেশ সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তার চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গি আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তার জীবন ও কাজ থেকে প্রেরণা নিয়ে আমরা একটি আধুনিক ও সমতাপূর্ণ সমাজ গড়তে পারি। তাঁর আদর্শ ও শিক্ষা আমাদের আজও প্রাসঙ্গিক এবং যুগোপযোগী।


রাজা রামমোহন রায়ের জীবনী এবং তার অবদান সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইট mysatate.co.in এ ঘুরে আসুন।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content