রথীকান্ত ঘটক চৌধুরীরথীকান্ত ঘটক চৌধুরী

রথীকান্ত ঘটক চৌধুরী জীবনী

Rathikant Ghatak Chowdhury

 


জন্ম ও বংশ পরিচয়:

রথীকান্ত ঘটক চৌধুরীর জন্ম ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে ডিসেম্বর (১৩২৮ বঙ্গাব্দের ১১ পৌষ)। অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন ঢাকা কলাগাছিয়া থানার অধুনা শরীয়তপুর জেলার পালং থানার দক্ষিণ বালুচর গ্রামে। পিতা ছিলেন জমিদার সূর্যকান্ত ঘটক চৌধুরী। মাতা ছিলেন রত্নবালা দেবী

শিক্ষাজীবন:

রথীকান্ত বিদ্যালয় পাঠ শুরু হয় তুলাসার গুরুদাস উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় । ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করেন, তিনি তার অগ্রজ ও রতিকান্তের ন্যায় শান্তিনিকেতনে চলে যান সেখান থেকে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে আই. এ পাশের পর ভর্তি হন কলকাতা বিদ্যাসাগর কলেজে এবং বি.এ পাশ করেন।

রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্রিয়াকলাপ:

ছাত্রবস্থায় তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। অবিভক্ত বাংলার প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ সক্রিয় কর্মীও ছিলেন তিনি, ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফরিদপুর জেলার সংগঠক এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে জেলা কমিটির সদস্য পদ লাভ করেন ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি শান্তি – সেন – ভাগা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ঘকরেন।

কর্মজীবন:

রথীকান্ত ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে চাকন্দী হাইস্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন স্বাধীনতা লাভ আর দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তার বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে আসেন। এবং যোগদান করেন স্বর্ণ কমল ভট্টাচার্যের ‘অগ্রণী পত্রিকায়’ কিছুদিন কলকাতায় অবস্থান করার পর ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন এবং পালং হাইস্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

সমাজসেবা ও বাংলার সংস্কৃতিতে ভূমিকা:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে দাঙ্গাকবলিত ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত বাংলার হিন্দু -মুসলমান ঐক্য রক্ষার্থে মজুতদারের অবৈধ কাজ বন্ধ করতে, লঙ্ঘনের আয়োজন, চিকিৎসা সেবা, প্রদানের বিভিন্ন কাজে লিপ্ত ছিলেন। নিজগ্রামে প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বালিকাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের স্থাপন, পাবলিক লাইব্রেরী, এবং শিল্প একাডেমি, প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত (মাঝে ২ বছর স্বেচ্ছাবিরোধীবাদের) ২৫ বৎসর নিজের জেলা শরীয়তপুরের পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিভিন্ন সময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন সক্রিয়তার পাশাপাশি তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেছেন বাংলাদেশ সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাঁর যথেষ্ট অবদান ছিল ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার বেতার কেন্দ্রে প্রথমে অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে লোক কবি সংক্রান্ত কথিকা প্রদান করেছেন লালন ফকির, গগন হর করা ,কাঙাল হরিনাথ, প্রমুখ বাংলার লোকশিল্পীদের তিনি যেমন গবেষণা করেছেন তেমনি কবিগান, জরিগান, মুর্শিদি ভাটিয়ালি প্রভৃতির গান কে জনপ্রিয়তা করে তার উদ্যম ছিল অসামান্য।

রবীন্দ্র গবেষক:

রথীকান্ত পরিবারের সকলেই রবীন্দ্র অনুরাগী ছিলেন ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান এর আয়োজন মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন তার পিতা সূর্যকান্ত, রথীকান্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্নেহধন্য ছিল শান্তিনিকেতন অধ্যয়নকালে তিনি কবি গুরু সঙ্গ লাভ করেছিলেন ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে কবির সভাপতিত্বে সাহিত্য সভায় রথীন্দ্রনাথ  সচরিত কবিতা পাঠ করেন। শান্তিনিকেতনের তার শিক্ষা জীবনের স্মৃতি নিয়ে তিনি রচনা করেন ‘রবীন্দ্র তরুণূলে’ গ্রন্থটি অবশ্য তার মৃত্যুর পর ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন পরিষদ কৃতক প্রকাশিত হয়।

সাহিত্যকর্ম:

রথীকান্ত ঘটক চৌধুরী পত্র পত্রিকায় অসংখ্য কবিতা ছোটগল্প প্রবন্ধ নাটক ইত্যাদি রচনা করেছেন। তার রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থটি ছয়টি সেগুলি হল

পূর্বাপর ( ১৯৬৮)

কয়েকজন লোককবি ও প্রসঙ্গত

সুকান্তের হস্তাক্ষরে কবিতার পান্ডুলিপি

রবীন্দ্র তরুমূলে (১৯৮৮)

ঝরা পাতা (১৯৮৮)

অভ্যুদয় (২০১২)

তারলে অনেক লেখা এখনো প্রকাশিত ও অগ্রন্থিত রয়েছে।

জীবনাবাসন:

রথীকান্ত ঘটক চৌধুরী অসুস্থতার জন্য ঢাকার সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ১৫ ই জুন (১৯৩৫ বঙ্গাব্দের ৩২ জ্যৈষ্ঠ) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বৎসর।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content