সরোজিনী নাইডুর জীবনী
ইতিহাসের পাতায় সরোজিনী নাইডু একজন মহান কবি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। সরোজিনী নাইডুর ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি এবং একটি রাজ্যের গভর্নর হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। আজকের তারি জীবন নিয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
১৮৭৯ সালের ১৩ ই ফেব্রুয়ারি একটি বাঙালি পরিবারের সরোজিনী নাইডুর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়। এবং মাতার নাম ছিল বরদা সুন্দরী দেবী। সরোজিনী নাইডুর বাবা পেশায় একজন বিজ্ঞানীর পাশাপাশি ডাক্তারও ছিলেন। তার পাশাপাশি তিনি হায়দ্রাবাদের প্রথম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন।
শিক্ষাজীবন:
১২ বছর বয়সে সরোজিনী নাইডু মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সমগ্র মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি তে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৯১ সাল থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা বন্ধ রেখে সরোজিনী নাইডু নানা বিষয়ে অধ্যায়ন করেন। এবং ১৮৯৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমে লন্ডনে কিংস কলেজে ও পরে কেমব্রিজের গার্টন কলেজে পড়াশোনা করেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামী রূপের ভূমিকা:
১৯০৪ সালের শুরু করে সরোজনী নাইডু একজন দ্রুত ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয় বক্তা হয়ে ওঠেন। ভারতের স্বাধীনতা এবং নারীর অধিকার, বিশেষ করে নারী শিক্ষার প্রচার করেন তিনি। ১৯০৬ সালে কলকাতায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং ভাষণ দেন তিনি। সরোজিনী নাইডু তারপরে ১৯০৯ সালে মথুলক্ষী রেড্ডির সাথে দেখা করেন। রেডির সাথে দেখা করে তিনি ১৯১৭ সালে এই মহিলা সহায়তায় ভারতীয় সংঘ প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করেছিলেন। এ সময়ে সরোজিনী নাইডু গান্ধীর পাশাপাশি গোপালকৃষ্ণ গোখলে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সরলা দেবী চৌধুরীর সাথে দেখা করেন, যাদের সাথে সরোজিনী নাইডু ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ধীরে ধীরে 1917 সালের পর তিনি গান্ধীজীর সাথে সত্যাগ্রহ আন্দোলন এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন করেন। ১৯২৪ সালে নাইডু পূর্ব আফ্রিকার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি ছিলেন। এছাড়া তিনি স্বর ভারতীয় মহিলা সম্মেলন প্রতিষ্ঠা সদস্য ছিলেন। শুধু তাই নয় সরোজিনী নাইডুর দক্ষিণ আফ্রিকায় ও পূর্ব আফ্রিকান ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ১৯২৪ সালে অধিবেশনের সভাপতি তো করেছিলেন। ১৯৩০ সালের সরোজিনী নাইডু গুজরাটে গান্ধীজীর লবণ সত্যাগ্রহের প্রধান ভূমিকা পালন করেন। ১৯৩০ সালে যখন গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয় তখন সরোজিনী নাইডু গান্ধীজীর জায়গায় ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি 1942 সালের গান্ধীজীর ভারতছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন সেই সময়ে তিনি একুশ মাস কারাবাস করেছিলেন।
বিবাহ:
সরোজিনী নাইডু ১৮৯৪ সালে হায়রাবাদে ফিরে আসেন। সেই বছরই তিনি গোবিন্দরাজু নাইডুকে বিয়ে করেন। একজন চিকিৎসক যাকে তিনি ইংল্যান্ডে থাকার সময় দেখা করেছিলেন। তাদের উভয় পরিবারই তাদের বিয়েকে অনুমোদন করেছিলেন। এবং তাদের পাঁচটি সন্তান হয়েছিল।
নারী আন্দোলন:
সরোজিনী নাইডু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের পাশাপাশি নারী অধিকারের প্রচারের জন্য তার কবিতা বাগ্মিতার দক্ষতা ব্যবহার করেছিলেন। ১৯০২ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা গোপাল কৃষ্ণ গোখলের অনুরোধে নাইডুর রাজনীতি জগতে প্রবেশ করেন। ১৯০৬ সালের সরোজিনী নাইডু ভারতীয় মহিলাদের শিক্ষার জন্য পরিষদের সাথে কথা বলেন। সরোজনী নাইডু যে পুরো আন্দোলনের যোগ দিয়েছিলেন যার সাফল্য নারীর প্রশ্নের উপর নির্ভর করে। এবং তিনি ভেবেছিলেন যে নারীদের সহায়তা ছাড়া জাতীয়তাবাদ আন্দোলন নিষ্ফল হবে। নাইডুর বক্তৃতায় যুক্তি ছিল যে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নারীর অধিকারের ওপর নির্ভরশীল এবং ভারতের মুক্তিতে নারী স্বাধীনতা থেকে আলাদা করা যাবে না। এই কারণে নারী আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলন সমান্তরাল ভাবে গড়ে ওঠে। ১৯১৭ সালের নাইডু উইমেন্স ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। যাও অবশেষে মহিলাদের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করা এবং তাদের অধিকার দাবির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছিলেন। সরোজিনী নাইডু নারীদের একটি প্রতিনিধি দলের মুখোপাধ্যায় হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং যারা সংস্কার নিয়ে আলোচনা করার জন্য ভারতের সেক্রেটারি অফ মন্টাগু এবং ভারতের ভাইসরয় লর্ড চেমসফোর্ডের সাথে দেখা করেছিলেন।
কবি রূপের সফর সরোজিনী নাইডু:
শৈশব থেকেই সরোজিনী নাইডু একজন উজ্জ্বল ছাত্রী ছিলেন, সরোজিনী নাইডু কবিতা লেখার পাশাপাশি শিল্প ও আয়ত্ত করেছিলেন তিনি তখন কবিতা লিখতেন না। সরোজিনী নাইডুর প্রথম কবিতা বুলবুলে হিন্দ ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর থেকেই সরোজিনী নাইডুর জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। এবং সরোজিনী নাইডু কে আরো বেশি করে চিনতে শুরু করেন। তার প্রতিটি কবিতায় ভারতীয় সংস্কৃতি বা ভারতীয় দৃশ্যমান ছিল। তার কবিতাগুলির মধ্যে রয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান, দ্য ফরেস্ট, দ্য সোল প্রেয়ার দময়ন্তী, ডান্সার, ইন্ডিয়ান ওয়েভার্স, নাইট ফলস সিটি ইন হায়দ্রাবাদ। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এর মতে বহু ভারতীয় প্রবীণ নাগরিক মতো সরোজিনী নাইডুর নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল।
মৃত্যু:
সরোজিনী নাইডু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭০ বছর বয়সে ১৯৪৯ সালে ২ মার্চ মারা যান।
সরোজিনী নাইডুর পোস্ট যদি ভালো লেগে থাকে। যদি আপনার সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে আপনার বন্ধু বান্ধবী ও সহপাঠীদের মধ্যে শেয়ার করে দেবেন। আরো নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন চোখ রাখুন এবং আমাদের সাথে থাকুন।
।।ধন্যবাদ।।
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.