শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জীবনীশক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জীবনী

Shakti Chattopadhyay


জন্ম ও বংশ পরিচয়:

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহড়ু গ্রামে ১৯৩৩খ্রিস্টাব্দে ২৫ শে নভেম্বর সত্যি চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয়। পিতা ছিলেন বামনার চট্টোপাধ্যায় এবং মাতা ছিলেন কমলা দেবী

শিক্ষাজীবন:

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের গ্রাম্য পাঠশালা পড়াশোনা শেষ করে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন বাগবাজার মহারাজ কাশিমবাজার পলিটেকনিক স্কুলে। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করার পর মির্জাপুরে সিটি কলেজের কমার্স কলেজে পড়বেন বলে ভর্তি হন। তিন মাসের মধ্যেই কমার্স ছেড়ে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি আই এ ক্লাসে। তারপর তিনি ইংরেজি ও সর্বশেষে বাংলা স্নাতকের ছাত্র হিসাবে পড়াশোনা চালাতে থাকেন কিন্তু শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের পরীক্ষা বসা আর হয় না অনিয়মিত উপস্থিতির জন্য পরবর্তীকালে বুদ্ধদেব বসুর আগ্রহের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলকভাবে সাহিত্যিকের ছাত্র হিসাবে যোগ দিও তা তিনি অসমাপ্ত রেখে দেন। কারণ তিনি জেনে গিয়েছিলেন “পড়াশোনা করে ডিগ্রীতকমা ছিনিয়ে নিয়ে আমার কিছু হবার নয়”

কর্মজীবন:

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও কোনো পেশায় তিনি দীর্ঘস্থায়ী ছিলেন না একসময় তিনি দোকানের সহকারী হিসেবে সাক্সবি ফার্মা লিমিটেড স্টোরে কাজ করেছেন পরে ভবানীপুর টিউটোরিয়াল হোম এর হ্যারিসন রোডের শাখায় শিক্ষকতাও করেছেন তিনি । কিছুদিন ব্যবসা করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তাতে সফল হতে না পেরে । একটি মোটর কোম্পানিতে জুনিয়র এক্সটিকিউভ হিসাবে যোগ দেন।  কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন কাজেই তিনি ঠিকমতো মন বসাতে পারেননি।’ক্লারিয়ন’ বিজ্ঞাপন কোম্পানির কপিরাইটের হিসাবে ‘ ভারবি ‘প্রকাশনায় কাজ করে খ্যাতি লাভ করেন।  বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকের অন্যতম কবিদের মুখপাএ’ কৃত্তিবাস’ পত্রিকার তিনি ছিলেন অন্যতম প্রতিভা। ১৯৭০- ৯৪ খ্রিস্টাব্দের এই সময় তিনি আনন্দবাজার পত্রিকায় চাকরি করেছেন ফিচার করেছেন তিনি। শেষের দিকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক এর হিসাবে কাজ করেছেন।

বৈবাহিক জীবন:

১৯৬৫ সালে  মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায়ের সাথে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আলাপ ঘটে এবং পরে সেই আলাপ এতটাই নিবিড় হয়ে ওঠে যে পরবর্তীকালে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের চট্টোপাধ্যায় মীনাক্ষী দেবীকে বিয়ে করে ফেলেন, যিনি একজন ভারতীয় লেখক ।তাদের দুজনের একটি কন্যা সন্তান হয় তার নাম ছিল তিতি চট্টোপাধ্যায়।

সাহিত্য জীবন:

১৯৫৬ সালের বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ‘ যম’ কবিতাটি। এটাই তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচিতি হওয়ার পর তিনি তার ‘কৃত্তিবাস ‘পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং এই পত্রিকার অন্যতম প্রধান হয়ে ওঠেন তিনি। ধীরে ধীরে শক্তি চট্টোপাধ্যায় পঞ্চাশের দশকের একজন শক্তিশালী ও জনপ্রিয় কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি কবিতাকে ‘ পদ্ম’  বলতেন । স্ফুলিঙ্গ  সমাদ্দারনামে তিনি গদ্য চর্চা ও করেছেন। তার প্রথম ছোট গল্প নিরূপমে দুঃখ। এরপর ১৯৬১ সালে তার কুয়েতলা উপন্যাস এবং প্রথম কাব্যগ্রন্থ হে প্রেম, হে নৈশব্দ প্রকাশিত হয়। প্রকৃতির পাশাপাশি প্রেম, নারী এবং মানুষকে নিয়ে কবিতাও তিনি লিখেছেন তার জীবন ছিল বেপরোয়া এবং বন্ধহীন। যুগের যন্ত্রণাকে গায়ে মেখে তিনি অস্থিরতায় ছটফট করেছেন। ১৯৬৬ সালে কবিতা পত্রিকা পত্রিকার হিসাবে সাপ্তাহিকী প্রকাশ করেন। তিনি সুইডেন ,ফ্রান্স, ইংল্যান্ডে গিয়েও কবিতা পাঠ করেছে ।

সাহিত্য কর্মজীবন:

  • জীবিকার জন্য উপন্যাস লেখার দীক্ষা।
  • প্রথম কাব্য সংকলন “হে প্রেম, হে নৈশ্যবাদ” ১৯৫৬ সালে।
  • তাঁর কবিতা ও উপন্যাসে বিষয়বস্তুর অনুসন্ধান।
  • “কুয়োতলা” এবং “জ্বালন্ত রুমাল” সহ উল্লেখযোগ্য কাজ।

উল্লেখযোগ্য কাজ:

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের ভাণ্ডারে রয়েছে উপন্যাস, ভ্রমণ লেখার সংকলন, প্রবন্ধ এবং বাংলা অনুবাদ। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে “কুয়োতলা,” “জ্বালন্ত রুমাল,” “আমাকে জাগাও,” এবং “ধর্মেও আছো জিরাফিও আছো: অবনী বাড়ি আছো।” তার কবিতা প্রায়ই প্রকৃতি এবং পরিবেশের জন্য তার উদ্বেগ প্রতিফলিত.

হাংরি আন্দোলানা (হাংরি জেনারেশন মুভমেন্ট) এ অবদান:

  • 1960 এর দশকের প্রথম দিকে সাহিত্য আন্দোলনে ভূমিকা।
  • সমীর রায়চৌধুরী, দেবী রায় এবং মলয় রায়চৌধুরীর মত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের সাথে সহযোগিতা।
  • আন্দোলনের বিতর্ক এবং প্রভাব সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি:

1975 সালে, শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর সাহিত্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর কবিতার সংকলন, “কেনো জিতো হ্যায়” 1983 সালে তাঁকে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করে, যা তাঁর প্রশংসার তালিকায় যোগ করে।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি:

  • 1975 সালে আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্তি।
  • Sahitya Akademi Award in 1983 for “Je Tete Pari Kintu Keno Jabo.”
  • অন্যান্য সম্মান ও প্রশংসার উল্লেখ।

উত্তরাধিকার:

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উত্তরাধিকার তাঁর সাহিত্যকর্মের বাইরেও বিস্তৃত। সমীর রায়চৌধুরী, দেবী রায় এবং মলয় রায়চৌধুরীর মত সহকবিদের সাথে 1960-এর দশকে হাংরি জেনারেশন আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততা প্রশংসা এবং বিতর্ক উভয়ই আলোড়িত করেছিল। এই আন্দোলন প্রচলিত রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং বাংলা ভাষায় আভান্ত-গার্ডে সাহিত্যের একটি নতুন তরঙ্গের সূচনা করে।

উপসংহার:

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের জীবন ও কাজ পাঠক ও পণ্ডিতদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। গ্রামীণ জীবনের অন্বেষণ, পরিবেশগত উদ্বেগ এবং সাহিত্য আন্দোলনে তার ভূমিকা বাংলা সাহিত্যে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছে। আমরা যখন তাঁর অবদানের প্রতিফলন করি, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় ভারতের সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হয়ে আছেন।

তথ্যসূত্র:

  1.  সেনগুপ্ত, সমীর (2005)। শক্তি চট্টোপাধ্যায় । মেকারস অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচার (১ম সংস্করণ)। নয়াদিল্লি: সাহিত্য আকাদেমি। আইএসবিএন 978-81-260-2003-4.
  2. একাডেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান [ আকাদেমি ছাত্রদের বাংলা অভিধান ] (বাংলায়) (২য় সংস্করণ)। কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি । 2009 [1999]। পি. 875. আইএসবিএন 978-81-86908-96-9.
  3. সেনগুপ্ত, সমীর (2005)। শক্তি চট্টোপাধ্যায় । 
  4. সেনগুপ্ত, সমীর (2005)। শক্তি চট্টোপাধ্যায় । 
  5. বাঙালির ঐতিহাসিক অভিধান । Scarecrow প্রেস, USA. 22 আগস্ট 2013। আইএসবিএন 9780810880245. সংগৃহীত 2 সেপ্টেম্বর 2019 

Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content