শঙ্খ ঘোষ(৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ - ২১ এপ্রিল ২০২১)শঙ্খ ঘোষ (৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২ - ২১ এপ্রিল ২০২১)

শঙ্খ ঘোষের জীবনী 

Shankha Ghosh


একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি

…..তোমার জন্যে গলির কোণে

ভাবি আমার মুখ দেখাবো

মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।

একটা দুটো সহজ কথা

… বলবো ভাবি চোখের আরে

জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে

বিজ্ঞাপনে, রংবাহারে

কে কাকে ঠিক কেমন দেখে

… বুঝতে পারা শক্ত খুবই

হা রে আমার বাড়িয়ে বলা

হারে আমার জন্মভূমি।

বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া

… তোমার সঙ্গে ওতপ্রত

নিয়ন আলোর পণ্য হল

যা -কিছু আজ ব্যক্তিগত

মুখের কথা একলা হয়ে

রইল পড়ে গলির কোণে

ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু

ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।

 

বাংলা সংস্কৃতির ডালি থেকে কাব্য কিংবা সাহিত্যচর্চা বাদ পড়বে এমনটা ভাবা যায় না। তেমনি ভোলা যায় না সংস্কৃতির চর্চার অব্যাহত রাখা সৃজনশীল শিল্পসত্তার যাদের সমাদার আমরা সর্বদাই করে এসেছি ,বাঙালির সাহিত্যিক জগত অসংখ্য উল্লেখযোগ্য প্রতিভা দ্বারা যুগে যুগে অলংকৃত হয়েছে। ওইসব প্রতিবান ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হলেন আধুনিক যুগের বাঙালি কবি কথা সাহিত্যিক কবি শঙ্খ ঘোষ |

আজকে তারি জীবনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবি শঙ্খ ঘোষের জন্ম হয় অধুনা বাংলাদেশের চাঁদপুরে। তিনি ১৯৩২ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। কবি শঙ্খ ঘোষের ডাকনাম ছিল চিওপ্রিয় ঘোষ। তবে  সাহিত্য জীবনে তিনি এই নামেই খ্যাতি লাভ করেন। তার পিতার নাম ছিল মণীন্দ্রকুমার ঘোষ। যিনি ছিলেন পেশায় একজন অধ্যাপক সেই সময় বাংলা ভাষার একজন স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন।

শিক্ষাজীবন: 

কবি শঙ্খ ঘোষ পাবনা জেলার পাকশির চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে তিনি ১৯৪৭ সালের ম্যাট্রিকুলেশান পাস করেন। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষা লাভ করার উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতার আসেন। তারপর তিনি প্রথমে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫১ সালে উক্ত কলেজ থেকে তিনি বাংলায় কলা বিভাগে সসম্মানে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা ভাষা ও সাহিত্য উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময় থেকেই বিশেষত এই সময় তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত করার কাজ শুরু করেন।

কর্মজীবন: 

পিতার মত কবি শঙ্খ ঘোষ ও কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন শিক্ষকতার মাধ্যমে। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তিনি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার কাজ করেছেন। সেই প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিতে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা ভাষার অধ্যাপনা করেন ।১৯৬০ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাইটার্স ওয়ার্কশপেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। একসময় তিনি সিমলায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ এডভান্স স্টাডিজ এবং আরো বিভিন্ন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের তিনি শিক্ষকতা করেছিলেন। দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষকতা কাজ করার পর অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 1992 সালে শঙ্খ ঘোষ অবসর গ্রহণ করেন।

সাহিত্য জীবন: 

কবি শঙ্খ ঘোষের জীবনে বিভিন্ন বিভিন্ন দিকের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো তার কাব্য ও সাহিত্যচর্চা আর শঙ্খ ঘোষের সাহিত্য জীবনের কথা বলতে গেলে কৃত্তিবাস পত্রিকার কথা উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়, কারণ মূলত এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করেই তার সাহিত্য জীবন বিকাশ লাভ করে। বেশিরভাগ বাঙালি তাকে মূলত কবি হিসেবে চেনে কিন্তু তিনি বিপুল সংখ্যায় গদ্য রচনা করেছিলেন। অন্যদিকে তিনি একজন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ হিসেবেও খ্যাত এক কথায় বাংলা কবিতার জগতে তার অবদান ছিল অপরিসীম। শঙ্খ ঘোষের প্রথম কাব্যগ্রন্থ হল দিনগুলি রাতগুলি’। এছাড়াও তার রচিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল

এখন সময় নয়’, নিহিত পাতাল ছায়া’, আদিম লতা গুলময়’, সামাজিক নয়’, বাবরের প্রার্থনা’, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’,

উক্ত কাব্য গুলির মধ্যে ‘বাবরের প্রার্থনা’ ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, গান ধরবো কবিতা গুচ্ছ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ গুলি বাঙালি কবিতা প্রেমীদের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে তবে শুধু কবিতা বা কাব্যগ্রন্থ নয়, বরং গদ্য রচনা ক্ষেত্রেও শঙ্খ ঘোষের অবদান সাহিত্য ইতিহাসে বর্তমান।

সম্মান ও স্বীকৃতি: 

চিত্র প্রিয় তথা কোভিদ শঙ্খ ঘোষের সমগ্র জীবনটাই অসামান্য সব কর্ম দ্বারা অলংকিত। কবি নিজের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লেখার পরিপ্রেক্ষিতে নানা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পুরস্কার হল।

•নরসিংহ দাস পুরস্কার (১৯৭৭, মূর্খ বড় সামাজিক নয়)

•সাহিত্য অকাডেমি(১৯৭৭, বাবরের প্রার্থনা)

•রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৮৯, ধূম লেগেছে হৃদকমলে)

•দেশিকোওম (১৯৯৯)

•পদ্মভূষণ (২০১১)

পরলোকগমন: 

২০২১ সালের ভয়াবহ করোনা মহামারী সকল বাঙ্গালীর হৃদয় থেকে কবি শঙ্খ ঘোষের মতো একজন প্রবাদপ্রতিম প্রতিভাকে ছিনিয়ে জানিয়ে গেছে এই সাহিত্যিক কিন্তু এপ্রিল মাসে ২১ তারিখে কবি শঙ্খ ঘোষ করোনার সঙ্গে নিরন্তর যুদ্ধে পরাজিত হন।

উপসংহার: 

মৃত্যু কখনোই কবি শঙ্খ ঘোষের মতো প্রতিভার সমাপ্তি ঘটাতে পারবেনা নিজের সমগ্র জীবন দিয়ে তিনি যে অমর সৃষ্টি গুলি রচনা করে গিয়েছেন সেইগুলি চিরকাল বাঙালি পাঠকদের হৃদয়ের আজও অমর হয়ে থাকবে। তিনি সর্বদাই নিজের লেখায় অতি সরল অর্থভাষার ব্যবহার করেছেন তার অসামান্য কবিতাগুলি সংযোজন তাকে পাঠকদের হৃদয়ে আরো নিকটবর্তী করে তুলেছে। 

তিনি আজও আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন বেঁচে থাকবেন আজীবন……..

আরো কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য জানতে আমাদের এই ওয়েবসাইটে লক্ষ্য রাখুন 

যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাদের এই ওয়েবসাইটকে একটু সাবস্ক্রাইব করে দেবেন.

 

 

 


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content