অরবিন্দ ঘোষ
সূচিপত্র
- ভূমিকা
- শৈশব ও প্রাথমিক শিক্ষা
- বিলেতে শিক্ষাজীবন
- বারোদায় কর্মজীবন
- ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ
- আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা ও জেল জীবন
- পন্ডিচেরিতে আধ্যাত্মিক জীবন
- দর্শন ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টি
- রচিত গ্রন্থ ও সাহিত্যকর্ম
- উপসংহার
ভূমিকা
অরবিন্দ ঘোষ (জন্মগত নাম: অরবিন্দ অ্যাক্রয়েড ঘোষ; ১৫ অগস্ট, ১৮৭২ – ৫ ডিসেম্বর, ১৯৫০) ছিলেন একজন ভারতীয় দার্শনিক, যোগী, কবি ও জাতীয়তাবাদী। তিনি ভারতকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোনিবেশ করেন।
শৈশব ও প্রাথমিক শিক্ষা
অরবিন্দ ঘোষ ১৮৭২ সালের ১৫ অগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার কোন্নগরের এক প্রাচীন কায়স্থ ঘোষবংশের অন্তর্গত ছিল। তার বাবা কৃষ্ণধন ঘোষ ছিলেন তৎকালীন বাংলার রংপুর জেলার জেলা সার্জন এবং মা স্বর্ণলতা দেবী ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য রাজনারায়ণ বসুর কন্যা।
বাল্যকালে অরবিন্দকে ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার জন্য দার্জিলিংয়ের লোরেটো কনভেন্টে পাঠানো হয়। এরপর ১৮৭৯ সালে তিনি দুই সহোদর সহ বিলেতের ম্যাঞ্চেস্টারে পাঠানো হয় ইউরোপীয় শিক্ষালাভের জন্য।
বিলেতে শিক্ষাজীবন
১৮৮৪ সালে অরবিন্দ লন্ডনের সেইন্ট পলস স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৮৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কিংস কলেজে বৃত্তি পরীক্ষায় পাশ করেন। আইসিএস পরীক্ষা দিলেও অশ্বারোহণ পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকায় তিনি অকৃতকার্য হন। এসময় বারোদার মহারাজ ৩য় সায়াজিরাও গায়কোয়াড়ের সাথে পরিচয় হওয়ায় তিনি বারোদায় স্টেস সার্ভিসে যোগদান করেন।
বারোদায় কর্মজীবন
বারোদায় অরবিন্দ সার্ভিস এন্ড সেটলমেন্ট বিভাগে চাকরি শুরু করেন। পরে তিনি কোষাগার এবং সচিবালয়ে কাজ করেন। এসময় তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির উপর গভীর অধ্যয়ন শুরু করেন এবং সংস্কৃত, হিন্দি ও বাংলা ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন। বারোদা কলেজে ফরাসি ভাষার শিক্ষক এবং পরে উপাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ
বারোদা থেকে ব্রিটিশবিরোধী সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বাংলা ও মধ্য প্রদেশে ভ্রমণ করে বিপ্লবী দলগুলোর সাথে সংযোগ স্থাপন করেন এবং লোকমান্য তিলক ও ভগিনী নিবেদিতার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন। বারোদার সেনাবিভাগে সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন বাঘা যতীনের জন্য।
আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলা ও জেল জীবন
১৯০৮ সালে আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার হন। জেলে বন্দী থাকার সময় তিনি অতীন্দ্রিয় ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। মুক্তিলাভের পর তিনি পন্ডিচেরি চলে যান এবং রাজনীতি থেকে সরে আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোনিবেশ করেন।
পন্ডিচেরিতে আধ্যাত্মিক জীবন
পন্ডিচেরিতে অরবিন্দ যোগ সমন্বয় নামক আধ্যাত্মিক সাধনার বিশেষ প্রক্রিয়া বিকাশ করেন। তার অন্তর্দৃষ্টির মূল বক্তব্য ছিল মানব জীবনের বিবর্তন ঘটে এক দিব্য দেহে এক দিব্য জীবনলাভে। তিনি ১৯২৬ সালে শ্রীমা মীরা আলফাসার সহায়তায় শ্রীঅরবিন্দ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
দর্শন ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টি
অরবিন্দের দর্শন ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি মানব-প্রগতি ও আধ্যাত্মিক বিবর্তনের উপর ভিত্তি করে। তার দৃষ্টিতে আধ্যাত্মিক উপলব্ধি শুধু মোক্ষলাভই নয়, মানব প্রকৃতির রূপান্তর ঘটিয়ে মর্ত্যেই এক দিব্য জীবনকে সম্ভব করে তোলে।
রচিত গ্রন্থ ও সাহিত্যকর্ম
অরবিন্দ ঘোষের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে:
- The Life Divine
- Essays on Gita
- Savitri: A Legend and a Symbol
- The Hero and the Nymph Urvasie
- Song of Myrtilla and other Poems
- The Age of Kalidasa
- A System of National Education
- The Renaissance in India
- Speeches of Aurobindo
বাংলা গ্রন্থ:
- কারাকাহিনী
- ধর্ম ও জাতীয়তা
- অরবিন্দের পত্র
উপসংহার
অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তি যিনি স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে আধ্যাত্মিক সাধনা পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার জীবন ও কর্ম ভারতীয় দর্শন ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে।
Related
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.