Sukanta BhattacharyaSukanta Bhattacharya

সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবনী

Biography of Sukanta Bhattacharya


সুকান্ত ভট্টাচার্য ছিলেন বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি।

অল্প বয়স থেকেই তিনি কৃষকের, শ্রমিকের, সর্বহারা মানুষদের কথা ভাববেন। ধনীর অত্যাচারের নিপীড়িত, যারা দুবেলা খেতে পায় না, উদয়া পরিশ্রম করেও যারা ছেলে-মেয়েকে আহার বস্ত্র দিতে পারেনা, তাদের কথাই সুকান্ত ভট্টাচার্য সব সময় চিন্তা করত। তাদের নিয়েই তত্ত্ব ছাড়া কবিতা ও সমালোচনা

সুকান্ত ভট্টাচার্য তো আমরা সকলেই জানি। সকলেই তার জীবনী সম্পর্কে কিছু জানি। এই কিশোর কবি সুমহান চিন্তা নিয়ে আজ আলোচনা করবো ।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: 

সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম হয় ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ১৫ ই আগস্ট (১৩৩৩ বঙ্গাব্দের ৩০শে শ্রাবণ) তিনি কলকাতার কালীঘাটে মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম ছিল নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য ও মাতার নাম ছিল সুনীতি দেবী। বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কোটালীপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষরা কলকাতায় এসে বেলেঘাটা অঞ্চলে বসবাস করেন।

শিক্ষাজীবন: 

১৯৪৫ সালে বেলেঘাটা দেশবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা দেয়ার জন্য অংশগ্রহণ করে কিন্তু এই প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি ব্যর্থ হন। তিনি যখন স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়তেন তিনি ছাত্রদের বিভিন্ন ধরনের লেখা ও ছবি নিয়ে একটি হাতের লেখা ম্যাগাজিন শুরু করেন যার নাম ছিল সপ্তমিকা। এইসব দেখে শিক্ষকরা বিশেষ করে সুকান্তের সাহিত্যকর্ম কে উৎসাহিত করতেন। সুকান্তের বয়স যখন মাত্র ১০ বা ১১ বছর তিনি রাখাল ছেলে নামে একটি রূপক গান রচনা করেন তিনি মাধুমালতী এবং সূর্য প্রণাম নামে দুটি গীতিমূলক চলচ্চিত্র রচনা করেছিলেন। সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রচুর ছড়ার বই পড়তেন তিনি মায়ের কাছে রামায়ণ ও মহাভারত পড়তেন। এবং তার মা সেসব মন দিয়ে শুনতেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমলা বিদ্যামন্দরিতা সাহিত্য জীবন শুরু হয় প্রথমে ছোট গল্পের প্রকাশিত স্কুলের পত্রিকার সঞ্চয়ের। পরবর্তীতে বিজন ভট্টাচার্যের সম্পাদিত শিক্ষা পত্রিকা আরেকটি গদ্য রচনা করেন।

কর্মজীবন: 

সুকান্ত ভট্টাচার্য একজন সফল কবি হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। কারণ তিনি এমন এক ভাষাকে আলীগণ করতে পেরেছিলেন যে হাজার হাজার মানুষের আবেগকে প্রতিধ্বনিত করেছিল। হাজার হাজার মানুষের কন্ঠে অনুরণিত হয়েছিল তার কবিতা। স্কুলের পড়ার সময় থেকে কবি সুকান্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই সময় তিনি ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য তার পড়াশোনা সমাপ্তি ঘটিয়েছিলেন। শহর এবং প্রদেশের যে বিস্ময়কর সহিংসতার মধ্যে পড়েছিল তা ধারণ করে। ফ্যাসিবাদী অগ্রসন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অনৈতিক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তিনি ও তার দল ভীষণভাবে সক্রিয় হন। ১৯৪৪ সালে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টিতে তিনি যোগদান করেন। সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক কর্মে লিপ্ত হওয়ার জন্য সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা গুলি ভীষণভাবে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়ে ছিল, কিছু লোক তার কবিতাকে ঘৃণ্য রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে প্রচার করতে চায়। তারি জবাবে প্রবীণ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তিনি স্লোগানে বলেন ” আমি তার কবিতা হারানোর ভয়ে স্লোগান ঢেকে রাখিনি”

” অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি”

জন্মেই দেখি ক্ষুদ্ধ স্বদেশ ভূমি।।

এ দেশে জন্মে  পদাঘাতি ই শুধু পেলাম।

অবাক পৃথিবী! সেলাম তোমায় সেলাম।।

শুধু যুদ্ধ নয় মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠল ব্রিটিশ সরকার ও তৎকালীন কিছু ধনী সমাজের সৃষ্ট ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দে তার সাথে ছিল ঝড়, বন্যা ও মহামারী। হাজার হাজার অসহায় মানুষ রাস্তায় মারা গেল অত্যাচারে। ব্রিটিশ সরকার তাদের দিকে ফিরেও তাকায় নি সেই সময় সুকান্তের কলম ঝলসে উঠেছিল। তিনি দৃঢ় প্রতিজ হয়ে লিখলেন।

শােনরে মালিক, শােনরে মজুতদার

তােদের প্রাসাদে জমা হলাে কত মৃত মানুষের হাড়

আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই

স্বজন হারানাে শশ্মশানে তোদের চিতা

আমি তুলবই।”

রচনাবলী: 

ভারতের দুটো রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাক্ষী সুকান্ত ভট্টাচার্য। তার তাই তার কবিতা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে রচিত। আত্মবিশ্বাস, ঘৃণা, ক্ষোভ, ভবিষ্যতের আশা ও স্বপ্ন মিশ্রিত তাঁর কবিতা প্রত্যেকের কাছেই প্রিয়। সুকান্ত আগামী দিনের ইতিহাসে প্রবক্তা। সুকান্তের ভট্টাচার্য কাব্যগ্রন্থ  গুলি হল – এ ঘুম নেই, পূর্বরাগ, হরতাল, গীতিগুচ্ছ প্রভৃতি।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের মহাপ্রয়াণ:

সুকান্ত ভট্টাচার্য চোখে দেখতে পারেনি স্বাধীনতার নবোদিত সূর্যকে। তখন স্বাধীনতার কয়েক মাস বাকি। তিনি যাদবপুর যক্ষা হাসপাতালে একটি  কক্ষে শয্যাশায়ী। মাত্র ২১ বছর বয়সের পরিচিতির বিপুল সম্ভাবনা সূচনা করবে ১২ মে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তার জীবন দীপ নির্বাপিত হয় ,

সুকান্ত ভট্টাচার্য আজও আমাদের মধ্যে অমর হয়ে আছেন অমর হয়ে থাকবেন আজীবন।

যদি কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পোস্টটি ভালো লেগে থাকে। সাহায্যকারী মনে হয় তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধু, পরিবার,সহপাঠী ও প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে দেবেন।


Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content