Tarasankar BandyopadhyayTarasankar Bandyopadhyay

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

ওগো অযাচিত  বন্ধু আমার

কোমল শীতল কর বুলাইয়ে দাও নয়নে আমার।

ঘনায়ে আসুক চোখ শেষ নিমেষপাত

ভাঙা বুক মিশে যাক ধরণীর ধূলি -সাথ

দেবহীন দেউলের পূজাহীন হাহাকার

সান্তনা ল ‘ ক খুঁজে মাঝে ধুলার

অজানিত সাথে ওগো তব প্রেমে মধুময়

 মরম মথিত মম অতীত করিয়া লয়

টেনি লও ব্যথিতেরে ধরণীর ঘূর্ণি তেরে

ধরা হতে মুছে দিও সব স্মৃতি তার

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী

Tarashankar bandyopadhyay

 

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়: 

১৮৯৮ সালের ২৩ শে জুলাই ব্রিটিশ ভারতের বাংলার প্রেসিডেন্সির (অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের) অন্তর্গত বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে এক জমিদার পরিবারে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম ছিল হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। মাতার নাম ছিল প্রভাবতী দেবী

শিক্ষা জীবন:

তারাশঙ্করের তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাল্য জীবন কাটে গ্রামের পরিবেশই গ্রামের স্কুল থেকেই।তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে ১৯১৬ সালে এন্ট্রাস ( প্রবেশিকা) পরীক্ষার প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ পরে সুবাবার্ন কলেজে ভর্তি হন। (এখনকার আশুতোষ কলেজ)তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় তিনি অসহযোগ আন্দোলনের যোগ দেন। স্বাস্থ্য ভঙ্গ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের কারণে তার পক্ষে বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম করা সম্ভব হয়নি।

কর্মজীবন:

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকার কারনে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গ্রেফতার হলেও মুক্তি পেয়ে যান। এরপর নিজেকে সাহিত্যকর্মে নিয়োজিত করেন ১৯৩২ সালে তিনি প্রথমবার শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে দেখা করেন। একই বছরে তার প্রথম উপন্যাস চৈতালী ঘূর্ণি প্রকাশ পায়। তারাশঙ্কর ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে বাগবাজারে একটি বাড়ি ভাড়া করে নিজে এর পরিবারকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। ও ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে বরাহনগর এর চলে যান। তারাশঙ্কর ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের বীরভূম জেলা সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন এবং ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংগঠনের সভাপতি হন। তিনি ১৯৭০ সালের বঙ্গীয়- সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

রাজনৈতিক জীবন:

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের কর্মী হয়েও সমাজ সেবামূলক কাজ করেন এবং এর জন্য কিছুদিন জেল খাটেন। একবার তিনি ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্সি ও হয়েছিলেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদের সদস্য হন।

লেখার বৈশিষ্ট্য:

তার লেখায় বিশেষভাবে পাওয়া যায় বীরভূম বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি,  বাউরি, ডোম, গ্রাম্য করিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তার সব লেখায় মানুষের মুহূর্ত ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তার লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তার অনেক গল্প উপন্যাসের বিষয় সেখানে আরো আছে গ্রাম জীবনের ভাঙ্গনের কথা নগর জীবনের বিকাশের কথা।

চলচ্চিত্রায়ন:

তারাশঙ্কর উপন্যাস গল্প নাটক নিয়ে চল্লিশটির বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সত্যজিৎ রায় ও তারাশঙ্করের জলসাঘর এবং অভিযান উপন্যাসের সফল চিত্র দিয়েছেন তার যেসব রচনা চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে।

কবিতা:

১৯৩৩ সালে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিপত্র নামে একটি কবিতা সংকলন প্রকাশ করলেন।  তার লেখা বিখ্যাত উপন্যাস গুলির মধ্যে গণদেবতা, পঞ্চগ্রাম, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, নিকেতন ইত্যাদি

  • নিশিপদ্ম (১৯৬২),
  • চৈতালি ঘূর্ণি (১৯৩২),
  • নীলকন্ঠ (১৯৩৩),
  • রাই কমল (১৯৩৫)

পুরস্কার সমূহ:

সাহিত্য সাধনা করে অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মান লাভ করেছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরৎ স্মৃতি পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার। সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি। কেন্দ্রীয় সরকার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় কে পদ্মশ্রী এবং পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। এবং অসংখ্য গল্প উপন্যাস চলচ্চিত্র ত্রায়িত হয়ে হাজার হাজার মানুষ মন জয় করেছে।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তার কর্মজীবন জুড়ে অসংখ্য পুরস্কার এবং প্রশংসা পেয়েছিলেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু অন্তর্ভুক্ত:

  • রবীন্দ্র পুরস্কার (1955): পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার, তাকে তার “আরোগ্য নিকেতন” উপন্যাসের জন্য ভূষিত করা হয়।
  • পদ্মশ্রী (1962): ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানগুলির মধ্যে একটি, সাহিত্যে তার অবদানের জন্য ভূষিত।
  • জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (1966): ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান, ভারতীয় সাহিত্যে তার অসামান্য অবদানের জন্য তাকে ভূষিত করা হয়।
  • পদ্মভূষণ (1969): শিল্প ও সাহিত্যে তার অব্যাহত অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আরেকটি মর্যাদাপূর্ণ বেসামরিক পুরস্কার।

জীবনাবাসন:

১৯৭১ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর পরিণত বয়সে মহাপ্রায়ত হন। বাংলার কালজয়ী এই ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

 

তার লেখা এবং ছোট গল্প উপন্যাসের মধ্য দিয়ে এক অসাধারণ অসাধারণ প্রতিভা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ফুটিয়ে তুলেছেন ।

তাই তিনি আজও আমাদের মধ্যে বেঁচে আছেন বেঁচে থাকবে আজীবন | 

Bibliography

  1. Bandyopadhyay, Tarashankar. Ganadevata. Kolkata: Mitra & Ghosh Publishers.
  2. Bandyopadhyay, Tarashankar. Hansuli Banker Upakatha. Kolkata: Mitra & Ghosh Publishers.
  3. Bandyopadhyay, Tarashankar. Jalsaghar. Kolkata: Mitra & Ghosh Publishers.
  4. Majumdar, Rochona. Writing Postcolonial History. Chicago: University of Chicago Press, 2007.
  5. Mitra, Sumit. The Novels of Tarashankar Bandyopadhyay: A Socio-Cultural Study. New Delhi: Sahitya Akademi, 1999.
  6. Ray, Satyajit. Our Films, Their Films. Hyderabad: Orient Blackswan, 1976.

Discover more from My State

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Skip to content