উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
Upendrakishore Ray Chowdhury
আইল নামে বিমল ঊষা
উঠিল আলো খেলি
তরুর কোলে পুলকে ফুল
হাসিল আঁখি মেলি
বহিল ধীরে শীতল বায়
গাহিল পাখি বনে
খোকন মনি ঘুমায় ঘরে
ভাবনা নাহি মনে
জানলা দিয়ে সোনার আলো
চুমিল তারে আসি
নয়ন মেলি মায়ের পানে
চাহিলো খোকা হাসি
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী নামটা ছোটবেলায় আমরা সকলেও একবার হলেও আমরা প্রত্যেকে কোন না কোন বইয়ে পড়েছি। তিনি ছিলেন একজন বাঙালি শিশু সাহিত্যিক আজকের ওনার জীবনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জীবনী
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়:
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১২৭০ বঙ্গাব্দের ২৭শে বৈশাখ অর্থাৎ ইংরেজি ১৮৬৩ সালের ১২ই মে, ময়মনসিংহের বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী উপজেলার অন্তর্গত মসূয়া গ্রামে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী জন্ম হয়। তার পিতার নাম ছিল কালিনাথ রায়, মাতার নাম ছিল জয়তারা দেবী উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পিতা ছিলেন একজন সুদর্শন এবং আরবি, ফরাসি ও সংস্কৃত এই তিন ভাষায় সুপন্ডিত।
শিক্ষাজীবন:
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী মেধাবী ছাত্র ছিলেন বলে পড়াশোনায় প্রতি ক্লাসেই ভালো ফল করতেন তিনি। তবে ছোটবেলা থেকে এই স্বনামধন্য সাহিত্যকের পড়াশোনার চেয়ে বেশি অনুরাগ ছিল কিছু বাদ্যযন্ত্র যেমন বাঁশি ,বেহালা এবং পাশাপাশি সংগীতের প্রতিও। উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ময়নমনসিংহ জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং এর জন্য বৃত্তি লাভ করেন, এরপর তিনি পরবর্তী শিক্ষালাভ এর উদ্দেশ্যে কলকাতা এসে পড়েন, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কলকাতা এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন মাত্র ২১ বছর বয়সে কলকাতায় বি.এ পাস করে নেওয়ার পর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছবি আঁকা শিখতে শুরু করেন। ১৮৮৪ সালের মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট থেকে তিনি বি. এ পাশ করেন।
ব্রহ্মসমাজে যোগদান:
কলকাতায় আসার পর ব্রহ্মসমাজের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ এবং দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় এর সঙ্গে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পরিচয় হয়। ক্রমে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। উপেন্দ্রকিশোর ও ব্রহ্মসমাজের সদস্যদের সাথে মিলেমিশে ব্রহ্ম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন সেই সূত্রেই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তারা যথাযথ শুরু হয়। সে সময় তিনি ব্রাহ্মসমাজের যোগ দেন তবে ব্রাহ্মসমাজের সদস্য হওয়ার পর থেকে তার আত্মীয়র সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটতে শুরু করে তখন সনাতন হিন্দু ধর্মের বিচার দেখতে গেলে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর আলাদা হয়ে যায়।
সাহিত্য জীবন:
ছাত্র ছাত্র বয়সী সময় থেকেই উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছোটদের জন্য গল্প লিখতে শুরু করেন ধীরে ধীরে সেই সময়কার কিছু পত্রিকা যেমন সখা, সাথী ,মুকুল, এবং জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির থেকে প্রকাশিত ‘বালক ‘ নামক মাসিক পত্রিকা গুলিতে তার লেখাগুলো প্রকাশ করা শুরু হয়েছিল। বেশিরভাগ ছিল জীববিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ এর পরবর্তীতে চিত্ত অলংকরণ যুক্ত গল্প সমূহ প্রকাশ হতে শুরু হয়।
রচনা সমগ্র:
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী মিসেস কিছু বিখ্যাত কবিতা ও গান লিখেছিলেন সেগুলি হল –
খুকুমণি, রেল গাড়ির গান, কমলা নাপিত, বেচার, শিশুর কথা, সুখের চাকুরী, ময়মনসিংহের চিঠি, ঋতু, মধুপুরের চিঠি, পাখির গান , গ্রীস্মের গান, যখন বড় হব, ব্রহ্ম সংগীত ,অসন্তোষ
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা উল্লেখযোগ্য গল্পগুলি হল – কাজির বিচার, কুঁজো আর ভূত, খুঁত ধরা ছেলে, গল্প নয় সত্য ঘটনা, ছোট ভাই জাপানি দেবতা, জেলা আর সাত ভূত ,ঠাকুরদা, তিনটি বর, দুষ্টু মানব, নরওয়ে দেশের পুরান ইত্যাদি
জীবনাবাসন :
১৯১৫ সালের ২০ সে ডিসেম্বর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী পরলোক গমন করেছিলেন। মৃত্যুকালে এই বহুমুখী যোগ্যতা সম্পন্ন শিশু সাহিত্যকে বয়স ছিল মাত্র ৫২ বছর।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী আমাদের বাংলা সাহিত্য জগতে সমাবেশ ঘটিয়েছিল, তবে প্রধানত নির্মল আনন্দরসিক শিশু সাহিত্যিক রূপে তিনি অধিক পরিচিতি লাভ করেছিলেন তাই তিনি আজও আমাদের মধ্যে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
…….
Discover more from My State
Subscribe to get the latest posts sent to your email.